বছরের শুরুতেই জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের নতুন সংস্করণে দেশের প্রচলিত সঞ্চয়পত্রের প্রতিটিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় বাড়ানো হয়েছে বিনিয়োগের সীমা ও মুনাফার হার। গত ২১ জানুয়ারি জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে উৎসে করের তথ্যটি হালনাগাদ করা হয়। এর মাধ্যমে মেয়াদপূর্তি এবং নগদায়নে গ্রাহকদের প্রাপ্য অর্থের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে চলুন, সর্বাধিক জনপ্রিয় পরিবার সঞ্চয়পত্রের নতুন মুনাফা ব্যবস্থার ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক।

পরিবার সঞ্চয়পত্রের নতুন মুনাফার হার

৫ বছর মেয়াদের এই স্কিমে মেয়াদপূর্তি ও নগদায়নে উৎসে করসহ বছরান্তে ধার্য করা মুনাফা নিম্নের টেবিলে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো :

সর্বোচ্চ সাড়ে সাত লাখ টাকা মূল্যমানের সঞ্চয়পত্র ক্রয় করলে প্রতি মাসে মুনাফা পাবেন সর্বোচ্চ সাড়ে ১২ শতাংশ হারে। যারা ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি মূলধন দিয়ে সঞ্চয়পত্রটি কিনবেন, তাদের জন্য এই লাভ দাড়াবে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

প্রদেয় মুনাফায় উৎসে কর দুটি ভিন্ন বিনিয়োগ সীমায় আরোপ করা হবে। সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য উৎসে কর ৫ শতাংশ। আর ৫ লাখ টাকার বেশি মূল্যমানের সঞ্চয়পত্র ক্রয় করলে ১০ শতাংশ উৎসে কর আরোপ করা হবে। তবে বিনিয়োগসীমা অনূর্ধ্ব সাড়ে সাত লাখ টাকা হলে, উভয় ক্ষেত্রে মেয়াদান্তে সাড়ে ১২ শতাংশ মুনাফা প্রযোজ্য হবে।

মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নগদায়ন করলে টেবিলে উল্লিখিত হারে মুনাফা ধার্য হবে। স্বভাবতই এই অর্থের তুলনায় পাঁচ বছরের হিসাবে প্রদান করা লাভের হার বেশি, যা মেয়াদপূর্তির শর্তে গ্রাহক প্রতি মাসে পেয়েছেন। তাই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে এই অতিরিক্ত অর্থ কেটে অবশিষ্ট মূল টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের প্রথম বছর শেষে নগদায়নে বার্ষিক ১০ দশমিক ২০ শতাংশ হারে মাসিক মুনাফা ধার্য হবে। দ্বিতীয় বছরান্তে নগদায়নে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ, তৃতীয় বছর শেষে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং চতুর্থ বছর পর ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ মুনাফা পাবেন। তবে সব ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ উৎসে কর কাটা হবে।

৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে প্রথম বছরের নগদায়নে ধার্য মুনাফা ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বছর শেষে নগদায়নে মুনাফা পাবেন যথাক্রমে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ, ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ ও ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। সব ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ উৎসে কর কাটা হবে।  

৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি মূলধনের গ্রাহকদের জন্য যথারীতি অব্যাহত থাকবে ১০ শতাংশ উৎসে কর। প্রথম বছরান্তে নগদায়ন করলে বার্ষিক ১০ দশমিক ১১ শতাংশ হিসাবে মাসিক নীট মুনাফা প্রদান করা হবে। দ্বিতীয় বছরান্তে নগদায়নে ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ, তৃতীয় বছর শেষে ১১ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং চতুর্থ বছর পর ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ মুনাফা পাবেন।

কাদের জন্য এই সঞ্চয় স্কিম

• ১৮ ও তার বেশি বয়সের বাংলাদেশি নারী

• নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব বাংলাদেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী

• ৬৫ ও তার অধিক বয়সের বাংলাদেশি নারী ও পুরুষ

অন্যান্য সুবিধা

• প্রতি মাসে মুনাফা উত্তোলন করা যাবে

• সঞ্চয়পত্র ক্রেতা তার নমিনি নিয়োগ বা পরিবর্তন অথবা বাতিল করতে পারবেন

•    ক্রেতার মৃত্যুর পর তার সর্বশেষ মনোনীত নমিনি সঞ্চয়পত্র নগদায়নপূর্বক টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। এ ছাড়া নমিনি চাইলে মেয়াদপূর্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করে মাসিক মুনাফা উত্তোলন করতে পারবেন।

শেষাংশ  

পরিবার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ১২ শতাংশ মুনাফার হারের সুযোগ পাবেন সাড়ে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত মূলধনের গ্রাহকরা। সাড়ে ৭ লক্ষাধিক বিনিয়োগে নিট মুনাফা মিলবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ হারে। তন্মধ্যে সাড়ে ৭ লাখ টাকা বিনিয়োগটি মুনাফার ওপর আরোপিত উৎসে করের ভিত্তিতে আরও দুটি সীমারেখায় বিভক্ত। অনূর্ধ্ব ৫ লাখের জন্য ৫ শতাংশ এবং ৫ লাখের বেশি মূলধনের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ। সর্বোপরি, মেয়াদপূর্তি, নগদায়ন, বিনিয়োগের ভিন্নতা নির্বিশেষে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার ইতিবাচক প্রভাব থাকবে রিটার্নপ্রাপ্তিতে।