চলছে কর্মবিরতি, অচল এনবিআর

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিল ও সংস্থাটির চেয়ারম্যানের অপসারণসহ চার দফা দাবিতে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি পালন করছে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চলমান এই আন্দোলনে এনবিআরের কাজকর্মে এখনো চলছে অচলাবস্থা।
আজ রোববার (২৫ মে) সকাল থেকে ঢাকা কাস্টমস হাউজে কোনো কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। এছাড়া রাজস্ব বোর্ডের অফিসগুলোতে চলছে কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি। এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে এলেও কোনো কার্যক্রমে অংশ নেননি।
অন্যান্য দিনে মতো আজও সকাল থেকে রাজধানীর এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ের নিচে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন। এই কর্মসূচিতে কাস্টমস হাউস, এলসি স্টেশন, রপ্তানি কার্যক্রম ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কর্মবিরতির আওতামুক্ত রয়েছে। আজকের কর্মসূচি শেষে বিকেল সংবাদ সম্মেলন করবে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আজও এনবিআরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চলার সময় বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে অস্বস্তি প্রকাশ করেছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। তারা বলছেন, বাধ্য হয়ে আজও আন্দোলন করছেন। অন্যান্য দিনের মতো আজও তাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। সেই ভয় উপেক্ষা করে কর্মবিরতিসহ কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
এদিক সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা না পাওয়ায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ গতকাল শনিবার পূর্বঘোষিত কলম বিরতি কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এনবিআর বিলুপ্তর অধ্যাদেশ বাতিল ও এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণসহ চার দফা দাবি না মানলে আগামীকাল সোমবার থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ছাড়া আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে- এমন ঘোষণাও রয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচিকে অযৌক্তিক দাবি করে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ করে অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয়। একই সঙ্গে আশ্বাস দেওয়া হয়, রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটিসহ সব অংশীজনের সঙ্গে বিশদ আলোচনাক্রমে জারিকৃত অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার পর তা বাস্তবায়ন করা হবে। তবে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের (অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয়) অনুরোধ না রেখে কর্মবিরতিসহ অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিবৃতিতে অর্থ উপদেষ্টার জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১২ মে জারিকৃত রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ বাস্তবায়নের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে গত ২০ মে অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক বিভাগ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির পাঁচজন সম্মানিত সদস্য এবং এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ১৩ জন প্রতিনিধি এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অনুষ্ঠিত এই সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দুজন প্রতিনিধি এবং রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির সদস্যরা বিস্তারিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সভা শেষে অর্থ উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত প্রদান করেন যে, রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটিসহ সব অংশীজনের সঙ্গে বিশদ আলোচনাক্রমে জারিকৃত অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার পর তা বাস্তবায়ন করা হবে। এমন ফলপ্রসূ আলোচনার পর যে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে, তা মেনে না নিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ পুনরায় অসহযোগ আন্দোলনের যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, তার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।
বিবৃতিতে জানানো হয়, অধ্যাদেশটি জারি করার পর তা বাস্তবায়নের জন্য অনেকগুলো কাজ সম্পাদন করতে হবে— যা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ। যেমন- দুটি নতুন বিভাগের জন্য সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন, পদ সৃজনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ, বাস্তবায়ন অনুবিভাগ, সচিব কমিটি কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদন ইত্যাদি প্রয়োজন হবে। তা ছাড়া দুটি নতুন বিভাগের জন্য অ্যালোকেশন অব বিজনেস এবং আয়কর আইন, কাস্টমস আইন, মূল্য সংযোজন আইনসহ সংশ্লিষ্ট বিধি ও প্রবিধানেও পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হবে। এসব কাজও সময়সাপেক্ষ।
যেহেতু এই কাজগুলো সম্পাদন না করে কোনোভাবেই অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়, সেহেতু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এখনই বিলুপ্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। গত ২২ মে রাজস্ব বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত দুজন সদস্যের মধ্যস্থতায় সারা দিনব্যাপী দফায় দফায় আলোচনার একপর্যায়ে তাদের পাঠানো সমঝোতা প্রস্তাব সম্পূর্ণ মেনে নেওয়ার পরও শেষ মুহূর্তে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
চারটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়- যেহেতু অধ্যাদেশটি প্রয়োজনীয় সংশোধন করে বাস্তবায়ন করার কাজটি অনেক সময়সাপেক্ষ, সেহেতু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সব কার্যক্রম পূর্বের ন্যায় অব্যাহত থাকবে এবং কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিদ্যমান ব্যবস্থায় সব কার্যক্রম সম্পাদন করবেন; বিসিএস (কর) ও বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে পৃথকীকরণের প্রশাসনিক কাঠামো কিভাবে প্রণীত হবে, তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও গুরুত্বপূর্ণ সব অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে; বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সব কার্যক্রম পূর্বের ন্যায় অব্যাহত থাকবে; কাস্টমস ও কর ক্যাডারের সদস্যদের কোনো পদ-পদবি কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই, বরং সংস্কার কাজ সম্পন্ন হলে তাদের পদসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং সচিব পদে নিয়োগসহ পদোন্নতির সুযোগ আরও অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।
রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে অর্থবছরের শেষ সময়ে জাতীয় বাজেট কার্যক্রম এবং রাজস্ব আহরণে নিয়োজিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস সময়ে দপ্তরে উপস্থিত থেকে তাদের স্ব-স্ব দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম চালু রেখে এবং করদাতাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান করে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেগবান করার জন্য বিবৃতিতে অনুরোধ জানানো হয়।