মার্কিন কোম্পানিগুলো বিকল্প বাজার খুঁজছে : মাসরুর রিয়াজ

চীন থেকে আমেরিকার আমদানি সরে যাচ্ছে, আর মার্কিন কোম্পানিগুলো বিকল্প বাজার খুঁজছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ নন-অ্যালাইন বা ওপেনলি নন-পলিটিক্যাল দেশ হিসেবে একটি সম্ভাবনাময় গন্তব্য হতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ। তিনি বলেন, সামনে বাংলাদেশের বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে।
আজ সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের (বিবিএফ) ব্যানারে আয়োজিত বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের করণীয় ও এফবিসিসিআইয়ের ভূমিকা শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
মাসরুর রিয়াজ বলেন, বৈশ্বিক জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ ফার্ম চায়না প্লাস ওয়ান কৌশলে যাচ্ছে। তারা কেবল চীনে নয়, অন্যত্রও উৎপাদন ও আমদানির কেন্দ্র স্থাপন করছে। একইভাবে ৭২ শতাংশ গ্লোবাল ফার্ম মনে করছে ট্রেড ও প্রোডাকশন রিডিস্ট্রিবিউশনের জন্য নন-অ্যালাইন দেশগুলোই হবে সেরা জায়গা। এসব কারণে বাংলাদেশের সামনে বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করে দেন—সুযোগ থাকলেই যে তা কাজে লাগানো সম্ভব হবে, তা নয়। এজন্য বাংলাদেশের পাঁচটি বড় দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে।
বাংলাদেশের করণীয় প্রসঙ্গে মাসরুর রিয়াজ বলেন, প্রতিযোগিতায় আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এখন গ্লোবাল কম্পিটেটিভ ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৫। যেখানে ভারত ও ভিয়েতনাম প্রায় ৬০-এর কাছাকাছি। আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন উন্নত করতে হবে। এছাড়া গভর্ন্যান্স ইমপ্রুভমেন্ট, তৈরি পোশাকের বাইরে বিকল্প খাত তৈরি করা ও পাবলিক-প্রাইভেট ডায়ালগ ও এভিডেন্স বেজড অ্যানালাইসিসে সক্ষমতা বাড়ানোর কথা।
বাণিজ্যযুদ্ধের অভিঘাতে ২০২৫ সালে বাংলাদেশের বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি দুই শতাংশে নেমে আসবে জানিয়ে মাসরুর রিয়াজ বলেন, ২০২৬ সালে এটি দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের ট্যারিফ নীতির কারণে বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২৫ সালে শূন্য দশমিক ছয় শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যার বড় প্রভাব পড়েছে এশিয়ায়।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের এ পুরোনো বয়ান এখন ফেলে দিতে হবে জানিয়ে অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এ দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তা গতিশীল বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় নগণ্য। দেশের অর্থনীতির ও ব্যবসায় গতি নেই জানিয়ে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের কথা যখন আমরা বলি, তখন খুব সহজেই আমরা আত্মতুষ্টির ট্রাপের মধ্যে ঢুকে যায়। আগেও গিয়েছি, এখনো যাচ্ছি। কিন্তু আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি তার গতি খুব কম। আমাদের অর্থনীতির গতি নাই, ব্যবসা বাণিজ্যে গতি নেই। দারিদ্র্যের হার এখন উল্টোপথে, দেশের বেকারত্ব বেড়ে গেছে, সেটা এখন মহামারি আকারে পৌঁছে গেছে। এছাড়া প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার বেড়ে গেছে। আমাদের এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে এগুলো সাংঘর্ষিক, অসংগতিপূর্ণ।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা বিগত ১৫ বছরে কর্তৃত্ববাদ শাসনে ভয়াবহ গোষ্ঠীতন্ত্র দেখেছি। তবে এ গোষ্ঠীতন্ত্র দমন করতে গিয়ে বর্তমান সরকার বেসরকারি ব্যবসায়ীদের কাঠগড়ায় তুলছে, সেটা ঠিক হচ্ছে না। আমাদের একটি নতুন প্রবৃদ্ধির চালক দরকার। যা আগামীর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, অর্থনীতির চাকাকে শক্তিশালী করবে। সেটা পোশাকের বাইরে কৃষি, ওষুধ, আইটি, চামড়া বা অন্য কোনো খাত থেকে আবিষ্কার করতে হবে।
পূর্ববর্তী সরকারের আমলে এফবিসিসিআই কার্যত অকার্যকর ছিল জানিয়ে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল্লাহ চৌধুরী বলেন, এতে সংগঠনটি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারেনি। গণঅভ্যুত্থানের পর সংগঠনটির নেতৃত্বে একজন সাবেক আমলাকে বসানো হয়েছে, যার ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে অভিজ্ঞতা নেই।
ব্যবসায়ীদের বর্তমান অবস্থা এতিমের মতো আখ্যা দিয়ে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হক বলেন, আমরা কার কাছে যাবো, কোথায় যাবো, কী করবো বুঝতে পারছি না। হঠাৎ করে পোর্ট চার্জ বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহ সভাপতি আবুল কাসেম হায়দার প্রমুখ।