অপপ্রচারের অভিযোগে আইনজীবীকে রাবি অধ্যাপকের লিগ্যাল নোটিশ

জমি কেনায় অনিয়মের ব্যবস্থা নিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) উপাচার্যকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান ঢাকা হাইকোর্টের আইনজীবী গোলাম রব্বানী। মিথ্যা ও বেআইনি তথ্য পরিবেশন করে এই নোটিশ পাঠানোয় ওই আইনজীবীকে সতর্ক করে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার সাবেক উপ-উপাচার্য চৌধুরী সারওয়ার জাহানের পক্ষে এই নোটিশ পাঠান রাজশাহী জজকোর্টের আইনজীবী নূর-এ-কামরুজ্জামান।
নোটিশে বলা হয়, উক্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট না হয়েও ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল এবং একটি অসৎ মহলের ইশারায় অধ্যাপক সারওয়ার জাহানকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে মিথ্যা ও বেআইনি তথ্য পরিবেশন করে আইনজীবী গোলাম রব্বানী নোটিশ পাঠিয়েছেন। এর আগে করা এক পিটিশনে আদালতের আদেশে বিষয়টি দুদকের তদন্তাধীন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের করা তথ্যানুসন্ধান কমিটিও বাড়ি কেনায় আর্থিক অনিয়ম খুঁজে পায়নি।
নোটিশে আরও বলা হয়, আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য ছড়ানো প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এতে আরও বলা হয়, সদ্য সাবেক উপাচার্য এম আব্দুস সোবহানের দুর্নীতি, অনিয়ম ও বিদায়কালে ১৩৭ জনকে গণনিয়োগ দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তের মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টি আড়াল করতেই এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত ৭ মে রাবি উপাচার্যকে পাঠানো নোটিশে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি ভবনের জমি ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় অধ্যাপক সারওয়ার জাহানসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ও ‘আত্মসাৎকৃত’ সাড়ে সাত কোটি টাকা ফেরত নিতে বলা হয়।
তবে নথিপত্র ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, বাড়ি কেনায় অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ নেই। নোটিশটি এমন সময় পাঠানো হয়, যখন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য শূন্য এবং খুব শিগগিরই নতুন উপাচার্য নিয়োগ হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, অধ্যাপক সারওয়ার জাহানের উপাচার্য হওয়া ঠেকাতে অপপ্রচার ছড়ানোর জন্য মিথ্যা তথ্যে এই নোটিশ পাঠানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দীন প্রশাসনের মেয়াদ শেষের দিকে অতিথি ভবন ক্রয়ে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠে। সেই সময় ক্যাম্পাসে গুঞ্জন ওঠে চৌধুরী সারওয়ার জাহানের উপাচার্য হওয়া ঠেকাতেই শেষ মুহূর্তে এমন অভিযোগ তোলা হয়। আসাদুজ্জামান নামের এক ব্যক্তির রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে দুদক একটি তদন্ত করে, যা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সে বছরই এম আব্দুস সোবহান উপাচার্য হয়ে ‘তত্ত্ব অনুসন্ধান কমিটি’ গঠন করেন।
সেই কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক গোলাম কবীর জানান, বাড়ি কেনায় আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
অধ্যাপক গোলাম কবির বলেন, ‘অতিথি ভবনের জমিটিতে অংশীদারত্ব নিয়ে সমস্যা ছিল। প্রচলিত বিধি মেনে ক্রয় করা হয়নি। ফলে জটিলতার সৃষ্টি হয়। তবে আর্থিক অনিয়ম বা অর্থ আত্মসাতের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আমরা সেভাবেই রিপোর্ট জমা দিয়েছি।’
নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৫ সালে তৎকালীন উপ-উপাচার্য সারওয়ার জাহানের নেতৃত্বে অতিথি ভবন ক্রয়ের কমিটি করা হয়। পত্রিকায় উন্মুক্ত দরপত্র প্রকাশের মাধ্যমে নির্বাচিত সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ কিছু শর্ত পূরণ করতে পারেনি। ফলে কমিটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে। কয়েক ধাপে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ করে ক্রয় কমিটি।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা এই নোটিশকে বিদায়ী উপাচার্যের অনিয়ম থেকে মিডিয়ার চোখ সরানোর চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করেন, অধ্যাপক সারওয়ার জাহানের উপাচার্য হওয়া ঠেকাতে অপপ্রচারকে উসকে দেওয়াই এই নোটিশের উদ্দেশ্য।