এ যেন আরেক ‘ছুটির ঘণ্টা’
‘ছুটির ঘণ্টা’ চলচ্চিত্রে স্কুলে আটকা পড়েছিল ১২ বছরের ‘খোকন’। সে ১৯৮০ সালের কথা। এবার বাস্তবে ঘটে গেল প্রায় তেমনই এক ঘটনা। যদিও আটকেপড়া দুই শিশু শিক্ষার্থীকে প্রাণ দিতে হয়নি, তবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
দুদিন আগে বুধবার বিকেলে বরিশাল নগরীর ইন্দ্রকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মাকসুদা বেগম চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মারজান ও মুনমুনকে গণিত করতে বলেন। শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি যাওয়া যাবে না বলেও শাসান। শিক্ষকের নির্দেশে দুই শিশু শিক্ষার্থী অঙ্ক করতে থাকে। অথচ শিক্ষিকা নিজেই বাড়ি চলে যান।
এদিকে, প্রধান শিক্ষিকাসহ অন্যান্য শিক্ষকেরা চলে গেলে স্কুলের দপ্তরি ইমরান গেটে তালা দিয়ে বেরিয়ে যান।
শিক্ষার্থী মারজান শিকদারের মা শিরিন আক্তার আঁখি এনটিভি অনলাইনকে জানান, বুধবার তাঁর ছেলে ও মুনমুন অঙ্ক শেষ করে স্কুলে কাউকে দেখতে না পেয়ে ভয় পেয়ে যায়। এরপর গেটে তালা দেখে তারা কান্নাকাটি ও চিৎকার করতে থাকে।
তাদের ডাক, চিৎকার ও কান্নাকাটিতে এক নারী এগিয়ে আসেন। পরে স্কুলে বন্দি মারজানের কাছ থেকে তার বাবা জামাল শিকদারের মুঠোফোনের নম্বর নিয়ে কল করেন। খবর পেয়ে মারজানের মা শিরিন আক্তার স্কুলে ছুটে যান। পরে তালা খুলতে যান স্কুলের দপ্তরির বাড়ি।
শিরিন অভিযোগ করেন, সব শুনে স্কুলের দপ্তরি ইমরান তাঁর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে ইমরান স্কুলে গিয়ে গেট খুলে দেন।
এরই মধ্যে নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কুদঘাটা এলাকার ওই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয়দের ভিড় জমে যায়। জনরোষ থেকে বাঁচতে দপ্তরি নিজেকে স্কুলের ভেতর থেকে তালাবদ্ধ করে রাখেন। এর আগে পুলিশ ও স্থানীয়রা শিশু দুটিকে উদ্ধার করেন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তানিয়া সুলতানার সঙ্গে বারবার চেষ্টার পরও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার স্কুল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ মজুমদার। ‘বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেননি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি নিজে স্কুল পরিদর্শন করেছি। সেইসঙ্গে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছি।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আগামী রোববারের মধ্যেই এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আতঙ্কিত শিশু মারজান ও মুনমুন ঘটনার পর অসুস্থ ছিল। ওই রাতে মারজানের জ্বর আসে এবং ঘুমের মধ্যে বারবার চিৎকার দিয়ে উঠছিল বলে জানান তার মা শিরিন। তবে আজ সে কিছুটা সুস্থ। আর, মুনমুনের তথ্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা মনে করেন, যদি রাত পর্যন্ত শিশু দুটি স্কুলে তালাবদ্ধ থাকত, তাহলে অন্ধকারে আতঙ্কিত হয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। তাঁরা এ ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি করেছেন।