ঢাবি রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে ফের সেই শিক্ষার্থীর অবস্থান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রশাসনিক ভবন তথা রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে শিক্ষার্থী হয়রানি ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে আট দফা দাবিতে আবারও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন ইংরেজি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু হাসনাত আব্দুল্লাহ।
এর আগে গত ৩০ আগস্ট একই দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি করেছিলেন এবং তার দাবি বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বরাবর একটি স্মারকলিপিও দিয়েছিলেন।
স্মারকলিপি দেওয়ার ১৮ দিন পার হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার দাবি অনুযায়ী দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আজ রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় ভবনের সামনে অবস্থান শুরু করেন। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চালিয়েই যাবেন বলে জানান তিনি।
আবু হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ভিসি স্যার উনার কথা রাখেননি এবং রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে আজ রোববার আমাকে বাঁধা দেওয়া হয়েছে। ৯টায় অফিস টাইম থাকলেও, ৯টা ৪০ মিনিটে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা অফিসে অনুপস্থিত। সেই ছবি তুলতে গেলে আমি বাঁধার সম্মুখীন হই। রেজিস্ট্রা বিল্ডিংয়ের ছবি তোলার আগে নাকি কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ছবি তুলতে হবে। এ অনিয়মের শৃঙ্খল ভাঙতে হবে। আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে আমার টানা অবস্থান কর্মসূচি চলবে।’
আবু হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও বলেন, ‘বেঁধে দেওয়া ১০ কর্মদিবস শেষ হলেও রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সমস্যা সমাধানে ভিসি স্যার কোনো পদক্ষেপ নেননি। আমাদের আট দফা দাবির একটি দাবিও পূরণ করেননি, কিংবা দাবি পূরণে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেননি। রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের অবস্থা যা ছিল, ঠিক তা-ই রয়েছে।’
প্রশাসনিক ভবনের দূরাবস্থার কথা জানিয়ে হাসনাত বলেন, ‘কর্মচারীদের কাজে সময় মতো উপস্থিত না হওয়া, লাঞ্চের আগেই অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়া, অযথাই ছাত্র হয়রানি করা, অহেতুক দায়িত্বে অবহেলা, রুম নম্বর বিড়ম্বনা, সনাতন পদ্ধতি ও ছাত্র হয়রানি এখনও রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের নিয়মিত ঘটনা।’
ইংরেজি বিভাগের এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘পর্যাপ্ত সময়, গঠনমূলক পরামর্শ, সময়পোযোগী দিকনির্দেশনা দেওয়ার পরও আট দফা দাবি বাস্তবায়নে প্রশাসনের অসহযোগিতামূলক আচরণে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমি ক্ষুব্ধ। এজন্য এবার আট দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমার অবস্থান কর্মসূচি চলবে।’
আবু হাসনাত আব্দুল্লাহর আট দফা দাবিগুলো হলো-
১. শিক্ষার্থীদের হয়রানি নিরসনের জন্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অভিযোগ সেল গঠন করতে হবে। যেখানে সেবাগ্রহীতারা সুনির্দিষ্ট প্রমাণাদির ভিত্তিতে অভিযোগ জানাতে পারেন।
২. প্রশাসনিক সব কার্যক্রম অনতিবিলম্বে ডিজিটাইজড করতে হবে।
৩. নিরাপত্তা ও হারিয়ে যাওয়া কাগজপত্র তদন্তের স্বার্থে অফিসসমূহের অভ্যন্তরে প্রতিটি কক্ষে পর্যাপ্ত পরিমাণে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
৪. প্রশাসনিক ভবনে অফিসসমূহের প্রবেশদ্বারে ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন করতে হবে। ডিসপ্লেতে অফিস সমূহের নাম, কক্ষ নম্বর ও সেখানে প্রদত্ত সেবার বিবরণী, কর্তব্যরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নাম ও ছবি সহ প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি প্রদর্শন করতে হবে।
৫. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনিক ভবনের ক্যান্টিনেরও সংস্কার করতে হবে।
৬. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আধুনিক সাচিবিক বিদ্যা, পেশাদারত্ব, মানুষিক ও আচরণগত প্রশিক্ষণ আইন করে বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত মানসিক সেবা প্রদানকারী বিভাগ ও সেন্টারসমূহের শরণাপন্ন হতে হবে।
৭. অফিস চলাকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক কোনো কাজেই লিপ্ত থাকতে পারবে না। সে নিরিখে প্রশাসনিক ভবনের অভ্যন্তরে অবস্থিত কর্মচারী ইউনিয়ন অফিস বাধ্যতামূলকভাবে তাদের ক্লাবসমূহে স্থানান্তর নিশ্চিত করতে হবে।
৮. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনকালীন প্রচারণা পরিবেশবান্ধব করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা পরিবেশ বজায় রাখতে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য হানিকর ও পরিবেশ বিপর্যয়কারী অপ্রয়োজনীয় পোস্টার লিফলেট ও ব্যানার ব্যবহার আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সেবা সম্পর্কে আবু হাসনাত আব্দুল্লাহ একটি জরিপ পরিচালনা করেছেন। অনলাইনে পরিচালিত এ জরিপে দুদিনে ঢাবির মোট ৭০০ সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী অংশ নেন। এতে তারা ঢাবির প্রশাসনিক ভবনের বিভিন্ন সেবার অভিজ্ঞতাসহ এ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
জরিপটির ফলাফল:
১. ৮৯ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থীর প্রশাসনিক ভবনের সেবার অভিজ্ঞতা ভয়াবহ ও অপ্রত্যাশিত।
২. সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য হলো- ৬৮ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর মতে, প্রশাসনিক ভবনে ঘুষ লেনদেন ও স্বজনপ্রীতির চর্চা হয়।
৩. সর্বোচ্চ সংখ্যক হয়রানি হয় ভর্তি শাখায়, বৃত্তি শাখায়, মার্কশিট শাখায় ও ট্রান্সক্রিপ্ট শাখায় (ক্রমানুযায়ী)।
৪. ৭০০ জনের মধ্যে চার শতাধিক শিক্ষার্থীর শুনতে হয়েছে, ‘লাঞ্চের পরে আসুন’, ‘এটা এই রুমের কাজ না’, ‘কাগজ এখনও হল থেকে আসেনি’।
৫. ৮৬ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, প্রশাসনিক ভবনের বর্তমান কাজ ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত বা ডিজিটাল ধারণার সঙ্গে এর সামঞ্জস্য একেবারে শূন্য।
৬. চার শতাধিক শিক্ষার্থীর অভিযোগ- সেবা দাতাদের কাছে সেবা গ্রহীতারা নিরুপায় এবং সেবা গ্রহীতাদের সময়ের কোনো মূল্য নেই।
৭. প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থীর মতে প্রশাসনিক ভবনের সেবার মান অপরিবর্তিত থাকার কারণ কর্মকর্তাদের সেচ্ছাচারিতা ও স্বচ্ছতার অভাব।
৮. ৭২ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, সেবার মান উন্নয়নের জন্য প্রত্যক্ষ আন্দোলনের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করা উচিত।