নিয়োগের আশ্বাসে অনৈতিক সম্পর্ক, রাবি শিক্ষকের ফোনালাপ ফাঁস

নিয়োগের আশ্বাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক সহযোগী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাঁর সঙ্গে চাকরি প্রত্যাশী এক নারীর ফোনালাপের অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্যবিদায়ী উপাচার্যের ‘আস্থাভাজন’ হিসেবে পরিচিত।
এতে ওই নারীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের বিষয়ে তাঁকে আলাপ করতে শোনা যায়। অডিওতে ওই নারীকে অনৈতিক প্রস্তাব এবং তাঁর সঙ্গে অন্তরঙ্গ কথোপকথন রয়েছে। রেকর্ডে পুরুষ কণ্ঠটি ওই সহযোগী অধ্যাপকের বলে দাবি করছেন তাঁর সহকর্মীরা। তবে এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কথপোকথনকারী এই নারীর পরিচয়ও জানা যায়নি।
অডিও রেকর্ডে কথপোকথনের একপর্যায়ে ওই নারীকে বলতে শোনা যায়, ‘চাকরিটা আমার খুব দরকার, আমার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সবার আর্থিক অবস্থা ভালো। শুধুই আমার আর্থিক অবস্থা খারাপ।’
কথোপকথনের শুরুতে ওই নারী সহযোগী অধ্যাপককে সালাম দেন। এখান থেকে তাদের আলাপ শুরু হয়।
সহযোগী অধ্যাপক : খেলা দেখছি।
নারী : খেলা দেখছেন?
সহযোগী অধ্যাপক : হুম। তোমার মোবাইলে কি শব্দ বেশি নাকি?
নারী : না।
সহযোগী অধ্যাপক : সাইলেন্ট করে রাখা লাগবে।
নারী : আমার পাশে বাচ্চা ঘুমাচ্ছে।
সহযোগী অধ্যাপক : মোবাইল সাইলেন্ট করে রাখা লাগবে। ভাইব্রেশন দিয়ে রাখা লাগবে। মেয়েটা কোথায়?
নারী : ঘুমাচ্ছে আমার পাশে আছে।
সহযোগী অধ্যাপক : কি অবস্থা বলো। শুনতে পাচ্ছে আমাদের কেউ?
নারী : সবাই ঘুমাচ্ছে। নীরব।
সহযোগী অধ্যাপক : কী অবস্থা বলো।
নারী : একবার আমি ভাবলাম আপনার ওখানে যাব। পরে..(অস্পষ্ট)..আর গেলাম না।
এরপর থেকে তাদের মধ্যে অশ্লীল ও প্রকাশ অযোগ্য কথোপকথন শুরু হয়। একপর্যায়ে সহযোগী অধ্যাপক ওই নারীকে অনৈতিক সম্পর্কের কুপ্রস্তাব দেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে আলাপ চলতে থাকে।
কথোপকথনের একপর্যায়ে চাকরিতে নিয়োগে বিষয়ে তাদের মধ্যে আলাপ হয়।
সহযোগী অধ্যাপক : তোমার বাবার বাড়ি কোথায়?
নারী : আমার বাবার বাড়ি …। একেবারে … … সামনে। আমার ফ্যামিলি খুবই ভালো। আমার ফ্যামিলি অনেক বড়লোক। কিন্তু আমারই কপালই খারাপ। আমার বড় বোনের স্বামী পানি উন্নয়ন বোর্ডে, মেজটার স্বামী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার। আমারই শুধু কপাল খারাপ। ফ্যামিলি তো খেতে দেবে না। সারা জীবন চলতে হলে ফ্যামিলি তো দিবে না। এই কারণেই বলছি আমার চাকরিটা খুব জরুরি।
জবাবে সহযোগী অধ্যাপক বলেন, ‘হ্যাঁ দিয়ে দিব, দিয়ে দিব।’ ফের তাদের মধ্যে অন্তরঙ্গ আলাপ শুরু হয়।
একপর্যায়ে ওই সহযোগী অধ্যাপক বলেন, ‘কাল তুমি আমার ডিপার্টমেন্টে আস। তোমাকে দেখব।’
নারী : অফিসের ভেতরে না। সবাই হুট করে চলে আসে। হুট করে ঢুকে পড়ে।
সহযোগী অধ্যাপক : তাহলে রোববার দিন, ঠিক আছে?
নারী : রোববার দিন।
সহযোগী অধ্যাপক : তুমি আবার কাউকে বলিও না।
নারী : না না। মানসম্মানের বিষয়... আমি মানসম্মান অনেক ভয় পাই।
সহযোগী অধ্যাপক : আচ্ছা। কেটে দাও।
নারী : আচ্ছা ঘুমান। সকালে আবার উঠতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই সহযোগী অধ্যাপক সদ্যবিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের আস্থাভাজন বলে ক্যাম্পাসে পরিচিত। অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান প্রথম মেয়াদে উপাচার্য হওয়ার পর সহযোগী অধ্যাপককে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপর ২০১৭ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে অধ্যাপক আব্দুস সোবহান পরিবহণ দপ্তরে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেন তাঁকে।
ফোনালাপের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই সহযোগী অধ্যাপক বলেন, ‘সাংবাদিকরা বলছে-এগুলো নাকি আমার কথা। এগুলো আমার কথা না। কার কী রেকর্ড আমার নামে চালিয়ে দিয়েছে। আমি এখনো এসব রেকর্ড নিজ কানে শুনিনি। আমি অনিয়ম বা দুর্নীতি করিনি। পরিবহণ দপ্তরের দায়িত্বে ছিলাম। দুর্নীতি করেছি, কেউ বলতে পারবে না।’
অভিযুক্ত ওই সহযোগী অধ্যাপক বলেন, ‘আমি কারও সঙ্গে টাকার লেনদেন করিনি। কাউকে ক্যাম্পাসে চাকরিও দেইনি। উপাচার্য অধ্যাপক সোবহান যাওয়ার যে ১৪১ জনের নিয়োগ দিয়েছেন আমার কেউ চাকরি পায়নি। অনেকে বলে আমি চাকরি দিয়ে কোটি কোটি টাকা অর্জন করেছি। আসলে এসব ভুয়া। উপাচার্যের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো ছিল, তাই কেউ ষড়যন্ত্র করে এগুলো করেছে।’
এদিকে, সহযোগী অধ্যাপকের সহকর্মীরা বলছেন, ফোনালাপের অডিও রেকর্ডটি তাঁর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘রেকর্ডটি আমি শুনেছি। তাঁর (সহযোগী অধ্যাপকের) কণ্ঠ আমি চিনি। তাঁকে যতটুকু চিনি বা তাঁর কণ্ঠ যতটুকু চিনি, এতে রেকর্ডের ওই কণ্ঠটি তাঁর বলে আমার মনে হয়েছে। কারণ প্রত্যেকটা মানুষের কথায় আঞ্চলিকতার টান থাকে, ভয়েসের ফ্রিকোয়েন্সি থাকে, যা আরেকজন চাইলেই সহজে নকল করতে পারে না। আমার কাছে সেটা তাঁর (সহযোগী অধ্যাপকের) কণ্ঠ বলেই মনে হয়েছে।’