ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী মুখ

আজকের পড়াশোনা কালকের জন্য জমিয়ে রাখলে বোঝা তৈরি হয়। আর এভাবে ধীরে ধীরে হতাশা সৃষ্টি হয়। তাই দিনের কাজ দিনে শেষ করতে পারলে ভালো ফলাফল করা সম্ভব। কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী লাকী খাতুন। তিনি পালি অ্যান্ড বুদ্ধিষ্ট স্টাডিজ বিভাগে ২০১২ সালে স্নাতকে চার ক্রেডিটের মধ্যে ৩.৭৩ ও ২০১৩ সালে স্নাতকোত্তরে ৩.৭৫ পেয়ে দুইবার ড. সুকোমল বড়ুয়া গোল্ড মেডেল পান।
দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে এমন ফলাফল করে কৃষক বাবার স্বপ্নও পূরণ করেছেন লাকী খাতুন। চরম দারিদ্র্যও তাঁকে আটকাতে পারেনি উচ্চ শিক্ষায়। দুই বোনের মধ্যে ছোট লাকী খাতুন ‘বড়’ হওয়ার মনোবল ও উৎসাহ নিয়ে চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা। পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করে নিজের খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসে ভর্তির পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশের সঙ্গে প্রথমে নিজেকে মানিয়ে নিতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাঁকে। তবে শিক্ষকদের সহযোগিতায় পড়াশোনাকে আনন্দ হিসেবে নেওয়ায় চলার পথ অনেক সহজ হয়ে যায়।
যশোরের মনিরামপুরের এ শিক্ষার্থী তাই এখন স্বপ্ন দেখেন প্রিয় ক্যাম্পাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার, একই সঙ্গে দেশের গরিব ও অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর। পাশাপাশি গড়তে করতে চান নিজস্ব একটি পাঠাগার, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা এসে নিয়মিত লেখাপড়ার সুযোগ পাবে।
এ ছাড়া শিক্ষামূলক একটি ম্যাগাজিনও বের করতে চান লাকী খাতুন। সেখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শিক্ষামূলক তথ্য ও গবেষণার বিষয় জানতে পারবেন। নিজে কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি চর্চা হোক এটা তাঁর প্রত্যাশা। কেননা আজকে যারা ছাত্র, তারাই আগামীতে দেশের নেতৃত্ব দেবেন। তাই লাকী খাতুন মনে করেন, ছাত্র রাজনীতির অপব্যবহার না করে প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতি চর্চা হলে ছাত্রছাত্রীরা নেতৃত্ব দেওয়া শিখবে। অবসরে কী করেন এমন প্রশ্নের উত্তরে লাকী বলেন, অবসরে তিনি রবীন্দ্রনাথের বই পড়েন।
শুধু লাকী খাতুন নন, তাঁর মতো ফার্মেসি বিভাগে ফাবলিহা আহমেদ চৌধুরী, নুসরাত আহমেদ যৌথভাবে চার ক্রেডিটের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর তিন দশমিক ৩.৯৮ পেয়ে এসিআই আবদুল মুকিত গোল্ড মেডেল অর্জন করেন।
এ ছাড়া রসায়ন বিভাগ থেকে সৈকত চন্দ্র দে ৩.৯৫ পেয়ে আমিনুল হক আতিয়া হক মেমোরিয়াল গোল্ড মেডেল লাভ করেন। এ ছাড়া এডুকেশন ও কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ থেকে উম্মে কাউসার ও মীর আয়েশা আক্তার যৌথভাবে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে স্বর্ণপদক জয় লাভ করেন। তাদের সবার একটিই স্বপ্ন- শিক্ষকতার মাধ্যমে দেশের সেবা করা। শিক্ষকতার মাধ্যমে দেশ গড়ার কারিগর হওয়া। একই সঙ্গে এ দেশের ছাত্ররাজনীতির যেন অপব্যবহার না হয় সেই প্রত্যাশা করেন সবাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯তম সমাবর্তনে সর্বমোট ৩৫ জনকে ভালো ফলাফলের জন্য গোল্ড মেডেল দেওয়া হয়, যাঁদের অধিকাংশই দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এসে নিজের স্বপ্নপূরণে সক্ষম হয়েছেন।