শরৎকালের শুভ্রতায় সেজেছে প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলা ক্যালেন্ডারের তৃতীয় ঋতু শরৎকাল, গ্রীষ্মের তীব্রতা শেষে প্রকৃতিতে নিয়ে আসে এক স্নিগ্ধতা ও শুভ্রতা। এ সময় আকাশ হয় পরিষ্কার ও নীল, ভেসে বেড়ায় তুলার মতো হালকা মেঘ। নানা উৎসবে এ ঋতু বাঙালির মনে আনন্দের ঢেউ তোলে।
প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের বুকে, কীর্তনখোলা ও খয়রাবাদ নদীর কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) যেন শরৎকালে সেজে ওঠে এক ভিন্ন রূপে। ঋতুরানী শরৎ তার শুভ্র-কাশফুলে শ্বেত করে তোলে ক্যাম্পাসের মাঠঘাটসহ প্রতিটি চত্বর।
কাশফুলের এ শুভ্রতা, নীল আকাশ আর নদীর একাকার দৃশ্য ববি ক্যাম্পাসকে করে তুলেছে এক মায়াময় অচেনা রাজত্বে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়ক, খেলার মাঠ, শহীদ মিনার, মসজিদ এবং হল-সংলগ্ন চত্বরগুলো এখন কাশফুলে ঢাকা। বাতাসে কাশফুলের দোলা খাওয়ার দৃশ্য সহজেই মন কেড়ে নেয়। এ অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে শিক্ষার্থীরা ছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দা ও দর্শনার্থীরা ভিড় করেন, প্রিয় মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দি করেন।
মহাকবি কালিদাস তার ঋতুসংহার কবিতায় শরৎকালকে নববধূর সাথে তুলনা করে বর্ণনা করেছেন, ‘কাশফুলের মতো যার পরিধান, প্রফুল্ল পদ্মের মতো যার মুখ, উন্মত্ত হাঁসের ডাকের মতো রমণীয় যার নূপুরের শব্দ, পাকা শালিধানের মতো সুন্দর যার ক্ষীণ দেহলতা, অপরূপ যার আকৃতি সেই নববধূর মতো শরৎকাল আসে।’
কাশফুলের এই শুভ্রতাকে পরিধানের সাথে তুলনা করে কবি শরৎকে কতটা পবিত্র ও সুন্দর রূপে দেখিয়েছেন, যা এ ঋতুর পবিত্র ও নির্মল রূপ তুলে ধরে। ঠিক তেমনি, ববি ক্যাম্পাসের শুভ্র কাশফুলে ভরা চত্বর যেন প্রকৃতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পবিত্র ও নির্মল প্রতিচ্ছবি।
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শরৎকালের প্রকৃতি, বিশেষত বাংলার সবুজ শ্যামল রূপ এবং শান্ত স্নিগ্ধতা বর্ণনা করেছেন-
‘আজি কী তোমার মধুর মুরতি
হেরিনু শারদ প্রভাতে।
হে মাত বঙ্গ, শ্যামল অঙ্গ
ঝলিছে অমল শোভাতে।
পারে না বহিতে নদী জলধার,
মাঠে মাঠে ধান ধরে নাকো আর-
ডাকিছে দোয়েল, গাহিছে কোয়েল
তোমার কাননসভাতে।
মাঝখানে তুমি দাঁড়ায়ে জননী,
শরৎকালের প্রভাতে।’
কীর্তনখোলা নদীর কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাশফুলে আচ্ছাদিত সবুজ প্রাঙ্গণ ওই শ্যামল অঙ্গ এবং অমল শোভাকেই যেন মূর্ত করে তুলেছে। কাশফুলের শুভ্রতা প্রকৃতির এ পবিত্রতাকে আরো বাড়িয়ে দেয়, যা শিক্ষার্থীদের আড্ডার এক প্রিয় সাথী।
ক্যাম্পাসের শরতের এই সৌন্দর্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী অন্তরা নূর বলেন, ‘শরৎকাল বাংলাদেশের প্রকৃতিতে শুভ্র-নীল নির্মলতা নিয়ে আসে, যেখানে আকাশ হয় স্বচ্ছ নীল এবং মাঠঘাট শুভ্র কাশফুলে সেজে ওঠে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ একরের ক্যাম্পাস শরতের এ সৌন্দর্যে এক ভিন্ন রূপে সেজে ওঠে। লাল ইটের স্থাপত্যে গড়া এ ক্যাম্পাসটি নীল আকাশ, সাদা মেঘের ভেলা এবং কাশফুলের শুভ্রতার রঙে রঙিন হয়ে ওঠে, যা এর সৌন্দর্যকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশের বিস্তীর্ণ মাঠ শরৎ এলেই এ ফুলে ছেয়ে যায়। সকালের শিশির ভেজা কিংবা বিকেলের সোনালী আলোয় দুলতে থাকা এ কাশবন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনগণের মনকে বিশেষভাবে মুগ্ধ করে।’