২০৩০ সালের মধ্যে দেড় কোটি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে দেড় কোটি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আজ বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনি ইশতেহার তুলে ধরেন।
ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে তরুণ সমাজের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। জনমিতিক পরিবর্তনে ২০৪১ সালে জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বয়স হবে ৩০ বছরের কম; ১৫-২৯ বছর বয়সের তরুণের সংখ্যা কম বেশি ২ কোটি হবে। বাংলাদেশের রূপান্তর ও উন্নয়নে আওয়ামী লীগ এই তরুণ ও যুবসমাজকে সম্পৃক্ত রাখবে। কর্মক্ষম, যোগ্য তরুণ ও যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রসার করা হবে। জেলা ও উপজেলায় ৩১ লাখ যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং তাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহায়তা প্রদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। ২০৩০ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বেকার যুবকদের পরিসংখ্যান তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বেকার যুবকদের সর্বশেষ হার ১০.৬ শতাংশ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ৩.০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। নিরক্ষর ও স্বল্প-শিক্ষিত তরুণ ও যুব-সমাজের জন্য যথোপযুক্ত কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগীদের সহজ শর্তে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা এবং ঋণের পরিমাণ বাড়ানো হবে। অনলাইনে শ্রমবাজার সৃষ্টিসহ নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, অনলাইন শ্রমের বাজারে বিভিন্ন পেশাদারি সেবাসমূহ যুক্ত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে হিসাবরক্ষণ, পর্যালোচনা ও ব্যাখ্যা, পে-রোল, আইটি সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণের কাজসহ আরও নতুন নতুন ক্ষেত্র সংযুক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি ধীরে ধীরে দেশের সকল উপজেলায় সম্প্রসারণ করা হবে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে প্রতি উপজেলায় যুব প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের বাইরে থাকা ১৭.৮ শতাংশ যুবকদের অনুপাত আগামী ৫ বছরে ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হবে। আগামী ৫ বছরে ২ লাখ যুবককের মাঝে ৭৫০ কোটি টাকা যুব ঋণ বিতরণ করা এবং ২ লাখ ৫০ হাজার যুবককে আত্মকর্মী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে দেশে-বিদেশে বিকাশমান কর্মসংস্থানের সুযোগগুলো কাজে লাগানোর জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে পলিটেকনিক ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটগুলো ঢেলে সাজানো হবে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, যুবসমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য প্রতিটি উপজেলায় পাঠাগার স্থাপন, গণতান্ত্রিক, সাংস্কৃতিক ও শরীরচর্চা কেন্দ্র এবং ‘স্মার্ট ইয়ুথ হাব’ গড়ে তোলা হবে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ঘূর্ণায়মান ঋণ তহবিল, বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সহজ শর্তে এবং স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার জন্য বিশেষ সেল গঠন করে উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা হবে। অসহায়, অসম ও শারীরিকভাবে অক্ষম যুবদের শিক্ষা ও চিকিৎসা সহায়তার আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, অবকাঠামোর উন্নয়ন ও পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগের মাধ্যমে শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটকে সেন্টার ফর এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তোলার কাজ অব্যাহত থাকবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক দুগ্ধ ও পোল্ট্রি খামার প্রতিষ্ঠার জন্য সহজ শর্তে ঋণ, প্রয়োজনীয় ভর্তুকি, প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও নীতিগত সহায়তা প্রদান করা হবে। এছাড়া, দেশে প্রতিবছর ২০ লাখের বেশি মানুষ শ্রম শক্তিতে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। শিল্প খাতের বিকাশ এবং নতুন নতুন শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে এদের প্রত্যেকের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা আওয়ামী লীগের অন্যতম লক্ষ্য। কর্ম সংস্থানের জন্য সবচেয়ে বেশি সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানা। এ খাতের বাধাসমূহ দূর, ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও বিদেশি মানবসম্পদের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে এই খাতকে আরও শক্তিশালী, সুসংগঠিত ও গতিশীল করে তোলা হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও ইশতেহার প্রণয়ন উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুস রাজ্জাক ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।