অভির গোপন তথ্য ফাঁসের হুমকি কাল হয় মডেল তিন্নির
সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভির গোপন তথ্য ফাঁসের হুমকি কাল হয়েছিল আলোচিত মডেল তারকা সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নির। প্রাণ হারাতে হয়েছিল তাঁকে। হত্যা মামলা তদন্তের একপর্যায়ে জিজ্ঞাসাবাদে ‘গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী’ সানজিদুল ইসলাম ইমনের দেওয়া বর্ণনায় এ তথ্য ওঠে আসে। তদন্তকালীন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মোজাম্মেল হক ঢাকার সিএমএম আদালতে যে অভিযোগপত্র দেন, তাতে এ কথা তুলে ধরা হয়।
দিনটি ছিল আজ থেকে বিশ বছর আগের ১০ নভেম্বর। ২০০২ সালের এই দিনে ঢাকার পোস্তগোলার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর (বুড়িগঙ্গা সেতুর) নিচে অজ্ঞাতনামা নারীর মরদেহ পায় পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে সেই মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনও করা হয়। ১১ নভেম্বর রাজধানীর কেরাণীগঞ্জ থানায় তদন্তকালীন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. শফিউদ্দিন বাদী হয়ে মামলা করেন। পরে জানা যায়, ওই নারী আর কেউ নয়, মডেল তিন্নি। পরে তদন্তে বেরিয়ে আসতে থাকে বিভিন্ন তথ্য।
প্রথমে হত্যায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ তিন্নির স্বামী শাফাকাত হোসেন পিয়াল, এবায়দুল্লাহ ওরফে স্বপন গাজী ও গাজী শরিফ উল্লাহ ওরফে তপন গাজীকে গ্রেপ্তার করে। পরে পুলিশ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ওই জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভির নাম।
সে সময় ইমন জানায়, তিনি যখন ভারতে পালিয়ে ছিলেন, তখন অভির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। সে সময় অভি কথা প্রসঙ্গে বলেন, মডেল তারকা তিন্নির সঙ্গে তাঁর ভালোবাসা ও প্রেমের সম্পর্ক হয়। অভি তিন্নিকে দিয়ে তাঁর স্বামী পিয়ালকে ডিভোর্স দেওয়ান এবং অভি তিন্নিকে বিয়ের আশ্বাস দেন। এমনকি, বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তিন্নির সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এমনকি তিন্নির বাসা থেকে তাঁর সন্তান ও স্বামীকে বের করে দিয়ে ওই বাসায় নিয়মিত রাত্রিযাপন করেন।
জানা যায়, ২০০২ সালের ৬ নভেম্বর অভির বুদ্ধিতে তিন্নি ও তাঁর স্বামী পিয়ালের দাম্পত্য জীবনের অবসান হয়। পরে তিন্নি যখন সামাজিকভাবে মর্যাদা পাওয়ার জন্য অভিকে চাপ দিতে থাকেন এবং অভির গোপন তথ্য মিডিয়াতে প্রকাশের হুমকি দেন, তখন থেকে অভি তিন্নিকে হত্যা করার পরিকল্পনা শুরু করে। সেই সূত্র ধরেই অভি তিন্নির মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। পরে তাঁর গাড়িতে করে মরদেহ বুড়িগঙ্গা সেতুর নিচে ফেলে রাখে।
এই হত্যাকাণ্ডের ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ হয়নি।
সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ভোলানাথ দত্ত এ বিষয়ে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সানজিদুল ইসলাম ইমন এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। রাষ্ট্রপক্ষ মনে করছে, এই সাক্ষীর সাক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ। এই সাক্ষী ও কয়েদি আসামি সানজিদুল ইসলাম ইমনের সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। বাকি সাক্ষীদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষ্য নিলে মামলায় সঠিক রায় পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’