আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন’ প্রতিপাদ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হচ্ছে। আজ বুধবার (৮ মার্চ) দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯১৪ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নারী দিবস পালন করে আসছে; পরে ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করছে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব নারীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘সমাজ, রাষ্ট্র ও পারিবারিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণ কাঙ্খিত উন্নয়নের অপরিহার্য শর্ত।’
বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব নারীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ গত এক দশকে আর্থ-সামাজিক খাত ও নারীর ক্ষমতায়নে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন ও তৃণমূল পর্যন্ত নারীর ক্ষমতায়নের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। নারী শিক্ষা নিশ্চিত করা, নারীকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা, সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়ন এবং কর্মক্ষেত্র ও রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে সরকার।’
আবদুল হামিদ বলেন, ‘আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাসহ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশে পদার্পণ করে জেন্ডার সমতা ভিত্তিক দেশ গড়তে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সরকারের নেওয়া বহুমুখী পদক্ষেপের ফলে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগ, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রার সূচকে বাংলাদেশ অগ্রগামী। আর এ সাফল্যের মূলে রয়েছে নারীর উন্নতি ও ক্ষমতায়নে বিপুল বিনিয়োগ।’
গত এক দশকে আর্থ-সামাজিক খাত ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে এ কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র এবং জনজীবনের সব ক্ষেত্রে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ও নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারী উন্নয়নের প্রক্রিয়া শুরু করেন।’
রাষ্ট্রপতি আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে গৃহীত সব কর্মসূচির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করেন।
নারী দিবসে পৃথক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “নারী তার মেধা ও শ্রম দিয়ে যুগে যুগে সভ্যতার সব অগ্রগতি এবং উন্নয়নে করেছে সমঅংশীদারিত্ব। নারী আন্দোলনের ইতিহাসে আজ এক গৌরবময় দিন। দীর্ঘ কর্মঘণ্টা আর মজুরি বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে নারী আদায় করেছিল তার অধিকার। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন’ অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি।”
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে পুরুষদের তুলনায় নারীদের প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেটের অ্যাক্সেস সীমিত থাকে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীদের প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এবং ২০৪১ সালের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চারটি ভিত্তি—স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্মেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের পুনর্বাসন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে নারী পুনর্বাসন বোর্ড গঠন করেন। তিনি জাতীয় জীবনের সব ক্ষেত্রে নারীর সমানাধিকারের বিষয়টি সংবিধানে নিশ্চিত করেন।’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে প্রতিটি কাজে নারী-পুরুষের সম-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫১ বছরে বাংলাদেশের অন্যতম অর্জন হচ্ছে, লিঙ্গবৈষম্য কমিয়ে নারীর ক্ষমতায়নের পথে এগিয়ে থাকার উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ। নারীর দারিদ্র্য বিমোচনে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে ভিজিডি কর্মসূচি, দরিদ্র মা’র জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান কর্মসূচি, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা কর্মসূচি, নারীদের আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য কর্মমুখী প্রশিক্ষণ এবং ক্ষুদ্রঋণসহ বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে জ্ঞানভিত্তিক দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য নারী-পুরুষ সবাইকে আমরা তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে এসেছি। নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ও উদ্যোক্তা তৈরিতে জয়িতা ফাউন্ডেশনের অনলাইন মার্কেট প্লেস ‘ই-জয়িতা’ চালু করা হয়েছে। নারী পাচার, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধসহ নারীর প্রতি যে কোনো ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে করা হয়েছে কঠোর আইন ও নীতি।”
প্রধানমন্ত্রী ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৩’ উপলক্ষে নেওয়া সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।