জীবন বাজি রেখে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের কাপড়ের বস্তা নিয়ে ছুটলেন তাঁরা
রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটের আগুন তখনও জ্বলছে। সকাল ৯টা ১০ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেয়। তবে, নির্বাপন করতে আরও সময় লাগবে; সেকথাও জানানোও হয়। মার্কেটের ভেতরে ও বাইরে তখন প্রচুর ধোঁয়া।
তারপরও দোকানিদের আর ধরে রাখা যায়নি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক-দুজন করে করে দোকানিরা ভেতরে প্রবেশ করতে থাকেন। শেষ চেষ্টা চালাতে থাকেন, নিজের দোকানের কাপড়চোপড়গুলো পোড়ার কবল থেকে রক্ষা করার।
মূলত যেসব দোকানিদের দোকান মার্কেটের একেবারে একপাশে বা প্রবেশপথের দিকে; তারা প্রথমে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ দৃশ্য দেখে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতে শুরু করেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দোকানিদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দোকান থেকে বস্তায় করে কাপড়চোপড় বের করতে থাকেন। কাপড় বের করতে গিয়ে পুলিশের এক কনস্টেবল ধোঁয়ার কারণে আহত হয়ে যান। পরে তাঁকে বের করে স্বেচ্ছাসেবক ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চোখ-মুখে ও মাথায় পানি দিতে থাকেন।
ঠিক একই কাজ করতে গিয়ে র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরাও অনেকে আহত হন। একইসঙ্গে ব্যবসায়ীরাও ধোঁয়ার কারণে আহত হন। তারপরও থেমে থাকেননি কেউ। আগুন নেভানোর চেষ্টার সঙ্গে চলতে থাকে দোকানিদের কাপড় উদ্ধার অভিযান।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও দোকানিরা দোকানে ঢুকে বস্তায় কাপড় ভরতে থাকেন। সেই বস্তা মাথায় করে বের করেও আনতে থাকেন। এদের সঙ্গে যুক্ত হন কিছু স্বেচ্ছাসেবীও। তারাও উদ্ধার অভিযানে সহযোগিতা করেন। আর এদের সবাইকে, অর্থাৎ যিনি যখন আহত হচ্ছিলেন; তখন তাদের সহযোগিতা করছিলেন আরও কিছু মানুষ। যারা বাইরে থেকে পানি ও খাবারের যোগান দিচ্ছিলেন।
বস্তায় করে পোশাক বের করতে গিয়ে ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন পুলিশের আরেক কনস্টেবল। তিনি অসুস্থ হওয়ার পর মাথায় পানি দিয়ে আবারও উদ্ধার অভিযানে চলে যান। তখন তিনি বলছিলেন, ‘ব্যবসায়ীদের কিছু জিনিস অন্তত বেঁচে যাক।’
র্যাবের এক সদস্য দোকান থেকে মাথায় বস্তা নিয়ে বের হওয়ার সময় বলছিলেন, ‘সবাই সহযোগিতা করুন। কেউ মাঝে দাঁড়াবেন না। পারলে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করুন।’
নিউমার্কেটে ১২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। বিজিবির সদস্যরাও ব্যবসায়ীদের পোশাক বের করে দেন। তাদের সঙ্গে একই কাজ করেন আনসার সদস্যরাও। আর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাপড়ের বস্তা মাথায় নেন সাধারণ স্বেচ্ছাসেবীরাও।