সংস্কারের জন্য মাসের পর মাস প্রয়োজন হয় না : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবে কমপক্ষে ৪০টি দল একমত হয়ে আমরা জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিলাম। আপনারা সেই ৩১ দফা নেন। সেখানে যদি কিছু পরিমার্জন করা লাগে, সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করুন। এই সংস্কারের জন্য মাসের পর মাস প্রয়োজন হয় না।’
আজ শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলার নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের পরিচিতি সভায় এসব কথা বলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
বিএনপিনেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২৭ দফা রাষ্ট্র সংস্কার কর্মসূচি জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। আমরা যখন যুগপৎ আন্দোলন করলাম, তখন সব দলের মতামতের ভিত্তিতে সেটিকে আরও পরিমার্জিত করে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জাতির সামনে তুলে ধরেছি। সেটা সরকার পতনে যুগপৎ আন্দোলনের সময়। সুতরাং, নতুন করে সংস্কারের প্রয়োজন নেই।’
রাজনৈতিক সমস্যা রাজনীতিবিদরা সমাধান করবে জানিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘রাজনীতির বাইরে যে সংস্কার আছে, সেটা পরিকল্পনার সংস্কার, সেখানে বাস্তবতার সঙ্গে অনেক অমিল থাকে। এ কারণে রাজনৈতিক সমস্যা রাজনীতিবিদরা সমাধান করে। যেহেতু আমরা সবাই একমত হয়েছি, একটি সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচনের জন্য যে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি, সেগুলো আপনারা দেখেন। আপনারা যারা দায়িত্ব পেয়েছেন একসঙ্গে বসেন, দেখেন কোন শব্দ ভুল কোন বানান ভুল। তারপর জাতির সামনে সংস্কার প্রস্তাব জাতির সামনে তুলে ধরেন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘নারীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য একটি শক্তিশালী ফোরাম প্রয়োজন। এই ফোরাম কোনো দলীয় ফোরাম। এটি স্বতন্ত্র একটি নারী ও শিশু সংগঠন।’
গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘দীর্ঘ দিন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন খালেদা জিয়া। নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে সময় লাগছে। কিন্তু চূড়ান্ত বিজয়ে তিনি জয় লাভ করছেন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘একটা দল নিষিদ্ধ হয়েছে, তাদের তো গ্রেপ্তার হচ্ছে না। সবাই তো আরাম আয়েশে ঘোরাফেরা করছে। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের পরে জাহাঙ্গীর কবির নানক ভিডিও বার্তায় বক্তব্য দিয়েছে, এই বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচার কতটুকু যৌক্তিক?’
দেশে মাথাপিছু আয়ের চেয়ে মাথাপিছু ঋণ বেশি আছে জানিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার বছরের পর লাখ লাখ কোটি টাকা বাজেট দিয়ে ১৫ বছরে ১৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। এই টাকা দেশে আনা প্রয়োজন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক সেলিমা রহমান বলেন, ‘তারেক রহমান বলেছেন, দেশে নারী ও শিশুরা যেভাবে নির্যাতিত হচ্ছে তাদের রক্ষায় একটি কমিটি করেন। তার ধারাবাহিকতায় আমরা কমিটি করে যেখানে নারী নির্যাতন হয়েছে, সেখানে আমরা দাঁড়িয়েছি।’
সেলিমা রহমান আরও বলেন, ‘নোয়াখালীর সুবর্ণচরে এক নারী কেন ধানের শীষে ভোট দিয়েছে, তাকে ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকেরা নির্যাতন করেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেখেছেন কীভাবে নারী ও শিশুদের হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা করেছে। স্বৈরাচার পতন হয়েছে কিন্তু নারীরা এখনও মুক্ত হয়নি।’
বিএনপির এই নেত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ যে মূল্যবোধে স্বাধীন হয়েছে, সেই মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা দেশের সব সামাজিক, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে নিজেদের মতো করে আলাদা পৈশাচিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করেছে।’
সেলিমা রহমান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে দুটি শক্তি একটি নারী শক্তি, একটি পুরুষ শক্তি। আমাদের লড়াই হবে অধিকার ফিরিয়ে আনার, বৈষম্য দূর করার।’
পরিচিতি সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, দলটির সেচ্ছাসেবক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরী।