অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ অনির্দিষ্টকাল হতে পারে না : ড. মোশাররফ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় অনির্দিষ্টকালের জন্য থাকে না। তাদেরকে স্বসম্মানে বিদায় নিতে হলে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে বিদায় নিতে হয়। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। যাতে করে মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে দেশ পরিচালনা করতে পারে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। আমরা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। সেগুলো বিবেচনা করে দ্রুত চূড়ান্ত করা হোক। দিন তারিখ ঠিক করে তো সংস্কার করা যায় না। অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ সেটি নয়। সংস্কারের স্থায়ী সমাধানের জন্য অতিদ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করে জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
আজ সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে চিকিৎসকের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। ঢাকা মেডিকেল কলেজের শহীদ ডা. মিলন মিলনায়তনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জিয়াউর রহমানের চারটি দিক গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো হচ্ছে- সৈনিক, প্রেসিডেন্ট, রাজনৈতিক এবং ব্যক্তি জীবন।
সৈনিক হিসেবে তিনি দেশের জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনিই একমাত্র সামরিক কর্মকর্তা যিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরবর্তীতে তাকে বীর উত্তম খেতাব দেওয়া হয়। একজন সৈনিকের জন্য এর চেয়ে বেশি কিছু লাগে না। তার জীবনে কোনো ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ কেউ তুলতে পারেনি। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করেছিল। হত্যা ও গুম খুনের রাজনীতি শুরু হয়েছিল। এভাবে আওয়ামী লীগ শাসন করে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, জিয়াউর রহমান প্রথম গণভোটে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি প্রায় চার বছরের শাসনামলে দেশের আমূল পরিবর্তন করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের জাতিসত্তার পরিচয় দিয়েছিলেন। যা আর কেউ করতে পারেনি। বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেন। তিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ১৯ দফা কর্মসূচি দিয়েছেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, শহীদ জিয়া কৃষির উন্নয়নে কাজ করেন। অথচ যে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। সেসময় বিদেশে চাল রপ্তানি শুরু হয়। তার হাত ধরেই দেশ থেকে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয়। তিনি বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্প তথা গার্মেন্টসের প্রতিষ্ঠা করেন। বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে সুষ্ঠু পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়ন করেছিলেন।
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, অথচ গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ বিদেশি প্রভুর দাসত্ব করেছে। কিন্তু জিয়ার এসব ভালো কাজকে কেউ ভালোভাবে নেয়নি। তাকে হত্যা করে পাহাড়ের জঙ্গলে ফেলে রাখা হয়েছিল। কিন্তু দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী তার লাশ ঢাকায় এনে সমাহিত করে। তার জানাজা নামাজে এত মানুষ হয়েছিল, যা আর কোথাও হয়েছে বলে জানা নেই। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সুদূরপ্রসারী অবদান রেখে গেছেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। যারা ভেবেছিলেন জিয়া মারা গেলে সব শেষ হবে। কিন্তু না, তাদের আশা পূরণ হয়নি। তার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় এসেছিল জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে। সেজন্যই পরবর্তীতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করা হয়েছিল। বর্তমানে তিনি বিদেশে চিকিৎসাধীন। শুধু তাই নয় আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে। দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের অসংখ্য নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন ও হয়রানি করা হয়েছে। সবকিছুর পরও আমরা গত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করেছি। যার ফলে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে ওঠে।
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. মো. মেহেদী হাসান এবং যুগ্ম মহাসচিব ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীমের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ড্যাবের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম, ড্যাবের উপদেষ্টা ডা. শহীদুর রহমান, সহসভাপতি ডা. রেজোয়ানুর রহমান সোহেল, ডা. গোলাম সারওয়ার, ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা. ফারুক কাশেম, দপ্তর সম্পাদক ডা. মো. ফখরুজ্জামান ফখরুল, ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল ডা. কামরুল হাসান, ভাইস প্রিন্সিপাল ডা. ফারুক আহমেদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য খালেদা ইয়াসমিন, ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মো. জাহেদুল কবির জাহিদ, ডা. জাহাঙ্গীর আলম, ডা. খলিলুর রহমান, ডা. সৈয়দ ইমতিয়াজ উদ্দিন সাজিদ, ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন, ডা. আরিফুজ্জামান পলাশ, ডা. বাসেদুর রহমান সোহেল, ডা. গালিব হাসান, ডা. জাওয়াদ হোসেন, ডা. এএসএম রাকিবুল ইসলাম আকাশ, ডা. সাইফুল আলম বাদশা, ডা. মাহবুব শেখসহ শতাধিক চিকিৎসক ও পেশাজীবী।