এ বছরই নির্বাচন চায় বিএনপি-খেলাফত মজলিস
২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং পতিত ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান ঠেকাতে জাতীয় ঐক্য জোরদার করাসহ সাতটি বিষয়ে একমত হয়েছে বিএনপি ও খেলাফত মজলিস।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক বৈঠকের পর দল দুটির যৌথ সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান তারা।
বিএনপির সঙ্গে বৈঠক শেষে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের বলেন, ‘আন্দোলনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহারসহ সাত দফায় আমরা একমত হয়েছি। এর আলোকে আমরা কাজ করব, বিশেষ করে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য অর্জন ও সবাইকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গঠনে।’
খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন।
আবদুল কাদের বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সাফল্য ধরে রাখতে তারা জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার দিকে মনোনিবেশ করেছেন। কিছু রাজনৈতিক দলের বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড আমরা প্রত্যক্ষ করছি, যা জাতীয় ঐক্যের চেতনার পরিপন্থি। আমাদের অবস্থান ঐক্যের পক্ষে, বিভাজনের পক্ষে নয়। জাতির স্বার্থে এখনই ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। এজন্য আমরা বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করতে এসেছি। বিভিন্ন বিষয়ে আমরা তাদের সঙ্গে একমত হয়েছি।’
কাদের আরও বলেন, বিএনপির সঙ্গে যেসব বিষয়ে আমরা সমঝোতায় পৌঁছেছি তার মধ্যে রয়েছে— ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা, জাতীয় ঐক্য সুসংহত করতে আন্তঃদলীয় সংলাপ চালিয়ে যাওয়া, প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত শেষ করা এবং ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া, ইসলামী মূল্যবোধ সমুন্নত রাখা ও ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখা, পতিত স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদীদের পুনরুত্থান রোধে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা, হত্যা, গুম ও নির্যাতনে জড়িতদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং আওয়ামী সরকারের আমলে ওলামা ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করা।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক খেলাফত মজলিস ২০২১ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের চাপে বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে যায়। জোট ছাড়ার পর দলটির এটিই প্রথম বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক।
‘দেশ, ইসলাম ও মানবতার স্বার্থে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ঘোষণা দেওয়ার একদিন পর’ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হলো।
বরিশালের চরমোনাই দরবার শরীফে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ও ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মো. রেজাউল করিমের ঘোষণা নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের ইঙ্গিত দেয়।
তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, জামায়াত ও আইএবির ঐক্য নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। খেলাফত মজলিসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশে যারাই রাজনীতি করছেন, একই মতাবলম্বী তারা একসঙ্গে... কাজ করার কথা ভাবতে পারেন। এ নিয়ে কারও উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এক সময় এক দল আরেক দলের বিরোধিতা ও সমালোচনা করলেও পরে আন্দোলনের সময় তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায়। ‘এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়... এর আগেও বহুবার এমন হয়েছে যে, যারা একসময় একমত হয়েছিলেন তারা পরে দ্বিমত পোষণ করেছেন। এতে অবাক হওয়ার বা উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ রাজনৈতিক দলগুলো তাদের রাজনৈতিক বিশ্বাস অনুযায়ী কাজ করবে।
নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যে, তাদের দল সরকার গঠন করলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে জনগণের কল্যাণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। তারা খেলাফত মজলিস নেতাদের সঙ্গে বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি সেগুলো নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই।’