মোংলা বন্দর : নির্মাণের অপেক্ষায় নতুন ৬ জেটি
মোংলা বন্দরের উন্নয়নে নির্মিত হচ্ছে নতুন আরও ৬টি জেটি। যার মধ্যে ৩ ও ৪ নম্বর জেটির নির্মাণ কাজ প্রায় ৬২ শতাংশ শেষ হয়েছে। এই দুটি জেটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৮০০ কোটি টাকা। আর ১ ও ২ নম্বর জেটি নির্মাণ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এদিকে ১১ ও ১২ নম্বর জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে এসব জেটি পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে গেলে মোংলা বন্দর বড় অর্থনৈতিক হাব হবে বলে জানিয়েছেন মোংলা বন্দরের জেটি নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ও সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর শফিকুল ইসলাম সরকার।
মোংলা বন্দরের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, তিন দশকের পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন যন্ত্রপাতি দিয়ে চলছিল মোংলা বন্দরের কার্গো ও কন্টেনার হ্যান্ডেলিং। পদ্মা সেতুর পর এই বন্দরের পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে সংযোজন হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। ভৌগলিক দিকে দিয়ে মোংলা বন্দর কৌশলগত ও সুবিধাজনক অবস্থানে অবস্থিত। বাংলাদেশের সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, নেপাল, ভুটান ও ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর এ বন্দরের মাধ্যমে মালামাল পরিবহণ হয়। একপর্যায়ে এ বন্দরের চাপ বেড়ে যাওয়ায় এর সম্প্রসারণ জরুরি হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে নতুন ছয়টি জেটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ৩ ও ৪ নম্বর জেটির কাজ শেষ হয়েছে ৬২ শতাংশ। এ ছাড়া ১ ও ২ নম্বর জেটি নির্মাণ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি বা একনেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আর ১১ ও ১২ নম্বর জেটি নির্মাণের পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। জেটিগুলো পুরোপুরি নির্মাণ হলে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের কাজে গতি পাবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, মোংলা বন্দর ইতোমধ্যে একটা গতি পেয়েছে। এখন এই বন্দরে যদি জেটির সংখ্যা বাড়ানো হয়, তাহলে জাহাজ চলাচল এবং পণ্য হ্যান্ডেলিংয়ের পরিমাণ বাড়বে। এতে একদিকে যেমন বন্দর অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে অন্যদিকে ব্যবসায়ীরাও এই বন্দর দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য সহজেই খালাস করতে পারবেন। বন্দরে পণ্য ওঠা-নামার ক্ষেত্রে যে জটিলতা দেখা দেয় সেটি কমে আসবে এবং বন্দরের সক্ষমতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর যদি চাপ কমাতে হয় তাহলে মোংলা বন্দরকে আরও আধুনিকায়ন করাসহ বন্দরের জনবলও বাড়াতে হবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এদিকে নির্মাণাধীন ৩ ও ৪ নম্বর জেটিসহ মোটি ছয়টি জেটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা আরও কয়েকগুণ বাড়বে। পণ্যের চাপ সামলানো এবং আন্তর্জাতিকভাবে এর প্রসারও ঘটবে বলে মনে করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) এবং জেটি নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক কমডোর মো. শফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, নির্মাণাধীন ৩ ও ৪ নম্বর জেটির কাজ আগামী দেড় বছরের মধ্যে শেষ হবে। এই দুটি জেটির নির্মাণ কাজ এরই মধ্যে ৬২ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এই ছয় জেটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে মোংলা বন্দরে সার্বিক কার্যক্রমে গতিশীল হবে। বন্দরে মাঝেমধ্যে যে জট হয়, সেটি থাকবে না। কন্টেনার এবং অন্যান্য কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। মোংলা বন্দরে বর্তমানে পাঁচটি জেটি আছে। নতুন আরও ছয়টি জেটি হলে এই বন্দরের সক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে খরচ অনেকটা কমে আসবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, বর্তমানে বন্দরের চারটি প্রকল্প চলমান। এর মধ্যে পশুর চ্যানেলের ইনার বারে (জেটি-সংলগ্ন) ড্রেজিং শেষ হলে বন্দরের জেটিতে ১০ মিটার পর্যন্ত ড্রাফটের (গভীরতা) জাহাজ হ্যান্ডলিং সুবিধা তৈরি হবে। এ ছাড়া ‘আপগ্রেডেশন অব মোংলা পোর্ট প্রকল্প’-এর মাধ্যমে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এই প্রকল্প শেষ হলে বছরে এক কোটি ৫০ লাখ টন কার্গো, চার লাখ টিইইউজ কনটেনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা তৈরি হবে। বন্দরের চলমান দুটি জেটির নির্মাণকাজ শেষ হলে বছরে আরও দুই লাখ টিইইউজ কনটেনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
শাহীন রহমান আরও বলেন, বন্দর এখন আগের চেয়ে গতিশীল হয়েছে। কনটেনারবাহী জাহাজের আগমন বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজ আগমনে ২ দশমিক ৩০ শতাংশ, কার্গো পরিবহণে ৯ দশমিক ৭২ ভাগ, কনটেনার পরিবহণে ১৬ দশমিক ৭৮ ভাগ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি বেড়েছে ১৩ শতাংশ।