বুদ্ধি প্রতিবন্ধী আঞ্জুরাকে লালন-পালন করে বিয়ে দিলো ‘আলো পথে ফরিদপুর’

বুদ্ধি প্রতিবন্ধী আঞ্জুরা আক্তার (১৮)। ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না। মানুষ দেখলে শুধু হাঁসে। মাত্র আট বছর বয়সে দিনমজুর বাবাকে হারান তিনি। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় আঞ্জুরা। বাবার সম্পত্তি বলতে অন্যের জমির ওপর একটি ছাপড়া ঘর ছাড়া কিছুই নেই। আঞ্জুরার মা-ও ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না। স্বামী হারানোর পর তার মা তিন সন্তান নিয়ে চরম অসহায় হয়ে পড়েন। ছেলে-মেয়েদের ভরণ-পোষণ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তিনি। পরিবারটির অসহায়ত্বের খবর পেয়ে প্রতিবন্ধী আঞ্জুরার দায়িত্ব নেয় আলোর পথে ফরিদপুর নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
এই সংগঠনের একজন সংগঠক মহুয়া ইসলাম অসহায় প্রতিবন্ধী আঞ্জুরাকে লালন-পালন করে বড় করেন। এবার তার বিয়ের দায়িত্বটাও নেন তিনি। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সেই অসহায় বুদ্ধি প্রতিবন্ধী আঞ্জুরা বিয়ের পিরিতে বসেছেন।
আঞ্জুরার পরিবার এনটিভি অনলাইনকে জানায়, বিয়ে উপলক্ষে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের উজিরপুর গ্রামে আঞ্জুরার বাড়িতে নানা আয়োজন করেন মহুয়া ইসলাম। বর আব্দুস সালাম সুমন (২৫)। তার মা-বাবা ও ভাই-বোন কেউ নেই। তিনিও ঠিকমতো পরিস্কার করে কথা বলতে পারেন না। বাড়ি কুষ্টিয়া হলেও থাকেন স্থানীয় ময়েনদিয়া বাজারের পাশে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মেয়ের বিয়ের রং দিয়ে মায়ের মুখ রাঙানো। মেয়ের বিয়ে নিয়ে তিনি মহাব্যস্ত। আর তাদের ছাপড়া ঘরের সামনে ছোট ওঠানে চুলা খুড়ে বরযাত্রী ও প্রতিবেশীদের খাওয়া-দাওয়ার জন্য রান্না-বাড়ির কাজ চলছে। পাশেই সাউন্ড বক্সে চলছে বিয়ের গান। এদিকে আঞ্জুরা নতুন শাড়ি-গয়না পড়ে আর বর সুমন নতুন পাঞ্জাবি-পায়জামা পড়ে বসে আছেন। বর-কনে দুজনই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হলেও বিয়ের আয়োজনে কোনো কিছুর কমতি ছিল না। আনন্দের জোয়ারে ভাসতে দেখা গেছে তাদের। কিছুক্ষণ পরপর শুধু মুচকি মুচকি হাঁসি দিতে দেখা যায় তাদের। সব মিলিয়ে বিয়ের আয়োজনটা জাঁকজমক ছিল।
বর আব্দুস সালাম সুমন বলেন, আমি ময়েনদিয়া বাজারে কাঁচা তরকারির ছোট একটা দোকান করি। আঞ্জুরাকে আমার পছন্দ হয়েছে। তাই বিয়ে করছি। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
বিয়ের আয়োজনকারী মহুয়া ইসলাম বলেন, আঞ্জুরার পরিবার অসহায়। তাদের সামর্থ ছিল না আঞ্জুরা ও তার ভাই-বোনদের লালন-পালন করার। মাত্র আট বছর বয়সে আমি আঞ্জুরাকে খুঁজে পাই। পরে ওর আরেক ভাইকেও আমি নিয়ে যাই। ওদের তিন ভাই-বোনের মধ্যে দুই ভাই-বোনকে আমি লালন-পালন করি। এখন আঞ্জুরার বিয়ের বয়স হয়েছে। তাকে বিয়ে দেওয়ার মতো সামর্থ নেই তার পরিবারের। তাই আলোর পথে ফরিদপুর এর পক্ষ থেকে আমি এই বিয়ের আয়োজন করেছি। বিয়ের আয়োজনে অনেকে আমাকে সহযোগিতা করেছেন।