রাজীবপুরের সেই ইউএনওকে ওএসডি
কুড়িগ্রামের রাজীবপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী রওশন ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছে।
আবদুল মালেক নামের এক ব্যবসায়ীকে ইউএনওর বাসভবনে ধরে নিয়ে মারপিট এবং জরিমানা আদায় করার ঘটনায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এই আদেশ দেওয়া হয়।
গত ২০ ডিসেম্বর বুধবার জারি করা আদেশে আগামীকাল রোববারের মধ্যেই ইউএনওকে কর্মস্থল ত্যাগ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনি দায়িত্ব না ছাড়লে তিনি স্ট্যান্ড রিলিজ বা তাৎক্ষণিক অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন। অবশ্য আজ শনিবার পর্যন্ত রাজীবপুরেই অবস্থান করেছেন তিনি।
সিনিয়র সহকারী সচিব চৌধুরী রওশন ইসলাম ২৯তম বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগ পেয়েছেন। গত ২৫ অক্টোবর তিনি রাজীবপুরের ইউএনও হিসেবে যোগ দেন বলে কুড়িগ্রাম জেলা তথ্য বাতায়নে বলা হয়েছে।
চৌধুরী রওশন ইসলামের স্ত্রী দীপা খান গত ১৪ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে রাজীবপুর বাজারের আবদুল মালেক নামের এক ব্যবসায়ীর তৈরি পোশাকের দোকানে শিশুদের গরম কাপড় কিনতে যান। দোকানি আবদুল মালেক দীপা খানের কাছে কম দামে কাপড় বিক্রি না করায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এ সময় দোকানিকে হুমকি দিয়ে চলে যান তিনি। এর আড়াই ঘণ্টা পর ইউএনওর নির্দেশে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) পলাশ চন্দ্র মণ্ডল ওই ব্যবসায়ীকে ধরে ইউএনওর বাসভবনে নিয়ে যান।
সেখানে একটি ঘরে আটকে ইউএনও ব্যবসায়ী আবদুল মালেককে মারপিট করেন বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১০ দিনের কারাদণ্ডাদেশ দেন ইউএনও চৌধুরী রওশন ইসলাম। ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে নারীর প্রতি অশালীন আচরণের অভিযোগ আনা হয়।
ওই ব্যবসায়ী আবদুল মালেক এখনো অসুস্থ। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় ও খারাপ আচরণ করিনি। তা ছাড়া ইউএনও স্যারের স্ত্রীকেও আমি চিনি না। ওই দুই সেট গেঞ্জি আমার লাভ না হওয়ায় ১০০ টাকায় দেইনি। আমরা গরিব মানুষ। অন্যায়ভাবে আমাকে ধরে নিয়ে মারপিট করল, আবার জরিমানাও নিল। এর বিচার আমি কার কাছে চাইব?’
রাজীবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) পলাশ চন্দ্র মণ্ডল জানান, ‘ইউএনও স্যার মোবাইল ফোনে আমাকে ওই গার্মেন্টস ব্যবসায়ীকে ডেকে নিয়ে তাঁর বাসভবনে যাওয়ার নির্দেশ দেন। পরে আমি তাঁকে ডেকে নিয়ে যাই।’ মারপিটের সময় কক্ষের বাইরে ছিলেন বলেও দাবি করেন এই পরিদর্শক। বলেন, ‘তবে ইউএনও স্যার তার ওপর রাগ করে গালি দিয়েছেন এটা সত্য। আমি হস্তক্ষেপ না করলে তাঁকে হয়তো ছয় মাসের জেল দিয়ে দিতেন।’
এদিকে নির্দোষ ব্যবসায়ীকে ধরে নিয়ে মারপিট ও ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা আদায় করার ঘটনায় রাজীবপুর বাজারের ব্যবসায়ী সমাজ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। বাজার বণিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আবদুস সবুর ফারুকী অভিযোগ করে বলেন, অভিযুক্ত ইউএনওকে প্রত্যাহার করে নিলেও ওই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আইন যদি সবার জন্য সমান হয়, তাহলে এখানে কেন হবে না, সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি।
ঘটনাস্থল ছেড়ে ইউএনওর বাসভবনে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো যায় কি না-এমন প্রশ্নে কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্রাহাম লিংকন বলেন, ঘটনাস্থল এক স্থানে আর অন্য স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানোর কোনো সুযোগ নেই।
এ ঘটনায় রাজীবপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী রওশন ইসলাম দাবি করেন, রায় লেখা হয়েছে বাসায় কিন্তু রায়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বাসার বাইরে।