‘লাঠিপেটা ও পানি ছিটানোর কারণে ব্যাপক প্রাণহানি’
ময়মনসিংহ শহরে জাকাতের কাপড় নিতে আসা নারী ও শিশুদের ভিড় সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ তাদের লাঠিপেটা এবং পানি নিক্ষেপ করে। এতে সেখানে সমবেত লোকজনের মধ্যে হুড়োহুড়ি তৈরি হয়। আর এতেই এত প্রাণহানির ঘটনা ঘটে বলে এ ঘটনায় করা মামলার এজাহারে পুলিশ উল্লেখ করেছে। পুলিশ একে খুনের অপরাধের শামিল বলেও মামলায় উল্লেখ করেছে।
গতকাল শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে ময়মনসিংহ শহরের অতুল চক্রবর্তী রোড এলাকায় নুরানী জর্দা কারখানার মালিক শামীম তালুকদারের বাড়িতে জাকাতের কাপড় নিতে এসে পাঁচ শিশু ও ২২ নারী নিহত হন। আহত হয় শতাধিক। এ ঘটনার জন্য স্থানীয় লোকজন অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে। ঘটনার পরপরই বাড়ির মালিক শামীম তালুকদারসহ আটজনকে আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জাকাত প্রদান কিংবা যে কোনো জনসমাবেশের আগে পুলিশের অনুমতি লাগবে বলে গতকালই জানিয়েছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। এ ঘটনা তদন্তে দুটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
ঘটনার পরপর বিকেলে হত্যা মামলা দায়ের করেন কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম। তিন পৃষ্ঠার এজাহারে ঘটনার আদ্যোপান্ত বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
শেষ অনুচ্ছেদে বাদী উল্লেখ করেন, ‘... শামীম তালুকদার তাহার সহযোগী আসামিদের নিয়া জাকাত নিতে আসা লোকদের নিয়ন্ত্রণের নামে লাঠিপেটাসহ পানি ছিটানোর কারণে সৃষ্ট হুড়োহুড়িতে এত ব্যাপক সংখ্যক লোকের প্রাণহানি ঘটে; যাহা খুন করার অপরাধের শামিল।’
এর আগে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামি শামীম তালুকদার একজন ক্ষুদ্র শিল্প মালিক এবং সচেতন ব্যক্তি। বিভিন্ন সময় ঈদ উপলক্ষে জাকাত বিতরণকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক লোকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। যা তাঁদের অজানা নয়। আসামিরা ঘটনাস্থলে এমন একটি ছোট্ট পরিসরে এত আধিক সংখ্যক লোকের সমাগম ঘটিয়ে এবং যথাযথমূলক নিরাপত্তা ব্যবস্থা না করে এবং পুলিশের অনুমতি ও যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়ে ৬৪০ লোকের কাছে স্লিপ বিতরণ করেন। হাজার খানেক লোককে একত্র করলে মৃত্যু ঘটতে পারে জেনেও শুধু খ্যাতির জন্য এটা করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
তবে জাকাতের কাপড় নিতে এসে নারী-শিশুসহ ২৭ জনের প্রাণহানির ঘটনাকে আজ শনিবার ‘দুর্ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। তিনি এ দুঃখজনক ঘটনার শিকার হতাহতদের পরিবারের পুনর্বাসনের কথাও বলেন।