অতিবৃষ্টিতে রামপালে জলাবদ্ধতা, তলিয়ে গেছে চিংড়িঘের-পুকুর
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে শুরু হওয়া টানা অতিবৃষ্টিতে বাগেরহাটের রামপালের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি তলিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
আজ বুধবার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির পানির জলবদ্ধতায় এখন এ এলাকায় একরকম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা সদরের প্রধান সড়কটি দেখে বুঝার উপায় নেই এটি চলাচলের রাস্তা, নাকি খাল। এমন অবস্থা বেশির ভাগ রাস্তাঘাটের। আর সদরের বাইরের নিচু এলাকার দৃশ্য আরও ভয়াবহ। পানিতে চারদিক একাকার হয়ে গেছে। রাস্তাঘাট, খাল, পুকুর ও চিংড়িঘের তলিয়ে বিশাল সমুদ্রের চেহারায় পরিণত হয়েছে রামপালের বিভিন্ন এলাকাজুড়ে।
উপজেলা সদর, গৌরম্ভা, হুঁকা, গিলাতলা, বাঁশতলী, ভাগা, ফয়লা, ঝনঝনিয়া, শ্রীফলতলা, ভোজপতিয়া, পেড়িখালী, জিগিরমোল্লা, মল্লিকের বেড়সহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট এখন পানির নিচে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বিপুল মানুষ। জলাবদ্ধতায় অনেকেরই রান্নাবান্না বন্ধ হয়ে গেছে। পানির কারণে ঘর থেকে বাইরে যেতে পারছে না অনেকেই। ঘরে পানি উঠে চুলা ডুবে গেছে, তাই ঘরের মালামাল খাটে তুলে বসে আছে। ঘরে পানি, রাস্তায়ও পানি। তাই পানিতেই বসবাস করতে হচ্ছে এখানকার বিশাল জনগোষ্ঠীকে।
অতিবৃষ্টির পানিতে খালও ভরা। তাই পানি নামার সুযোগ নেই। জলাবদ্ধতার পানি নামতে সময় লাগবে দু-একদিন। এরমধ্যে যদি আরও বৃষ্টি হয়, তা হবে এখানকার মানুষের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।
উপজেলার ভাগা এলাকার বাসিন্দা বিবেক মণ্ডল বলেন, ‘আমার ঘরের ভেতরে পানি উঠেছে, তাই রান্নাবান্না করার কোনো ব্যবস্থা নাই। লকডাউনে দোকানপাটও বন্ধ। কিছু যে কিনে খাব, সে ব্যবস্থাও নাই।’
জিগিরমোল্লা গ্রামের হাওলাদার ওমর আলী বলেন, ‘বৃষ্টিতে ঘের ও পুকুর ডুবে মাছ বেরিয়ে গেছে। পানিতে উঠান ও গোয়ালঘর তলিয়ে গেছে। গোয়ালের গরুটি থাকার ঘরের বারান্দায় নিয়ে রেখেছি। খালেও পানি নামছে না, কারণ খাল খননের সময় খালের দুই পাশে উঁচু করে মাটি ফেলে রেখেছে। ভাটায় খাল দিয়ে পানি নামে, আমাদের তা নামছে না। তাই খাল থাকতেও ডুবে মরতে হচ্ছে আমাদের।’
সিকিরডাঙ্গা গ্রামের মোজাফফর শেখ বলেন, ‘বৃষ্টির পানির চাপে ঘেরের বাঁধ ভেঙে পানিতে তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে। রাস্তা, খাল, পুকুর ও ঘের ডুবে একাকার হয়ে গেছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ই্উএনও) মো. কবীর হোসেন বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমূহকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা সঠিক তথ্য সংগ্রহে কাজ করছে। কিন্তু এমনিতে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বৃষ্টিপাত, রাস্তাঘাটেরও খারাপ অবস্থা। তাই সময় লাগছে। বৃষ্টির পানিতে চারদিকে টইটুম্বুর অবস্থা। বিভিন্ন জায়গায় রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে, ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। পুকুর ও ঘের ডুবেছে-এমন খবরও পেয়েছি।’
ইউএনও আরও বলেন, ‘ঝড়ে মীরাখালীতে ২০টির অধিক কাঁচা ও টিনের ঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। ৪০টির মতো বড় গাছ উপড়ে পড়েছে। এখনও ঘরের উপর বড় বড় গাছ পড়ে রয়েছে। গাছের নিচে গবাদি পশুও চাপা পড়েছিল। তবে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।