পরী মণির এক কাপড়ে ‘১২২’ ঘণ্টা নিয়ে আইনজীবীদের প্রশ্ন
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় চিত্রনায়িকা পরী মণি ও তাঁর সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুর ফের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাসের আদালত এ আদেশ দেন।
এদিন দুপুর ১ টা ৫২ মিনিটে কড়া পুলিশি পাহাড়ায় পরী মণিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তাঁর আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী আসামি পরী মণির সঙ্গে মামলার বিষয়ে কথা বলেন। এ সময় মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) নারী সদস্য পরী মণির সঙ্গে কথা বলা যাবে না বলে আইনজীবীদের জানান এবং পরী মণিকে ঘিরে রাখেন। এরপরে বিচারক আদালতে উঠলে পরী মণি মাথায় দুই হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এরপরে রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। শুনানির শুরুতে পরী মণির প্যানেলের আইনজীবী মজিবুর রহমান বলেন, পরী মণি যে কাপড়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, যে পোশাকে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন, সেই একই পোশাকে আজ আপনার (বিচারক) সামনে এসেছেন। ১২২ ঘণ্টা এক কাপড়ে মাননীয় আদালত। তিনি একজন নায়িকা, তাঁরও একটা লাইফস্টাইল রয়েছে। তিনিও সংবিধান অনুসারে আইনের সহায়তা পাবেন। রিমান্ডে থাকাবস্থায় তাঁর সঙ্গে আইনজীবী, পরিবারের কোনও সদস্য দেখা করতে পারেননি।
পরী মণির আইনজীবী আরও বলেন, পরী মণির মামলায় তদন্ত হলে তিনি যদি দোষী হন তাহলে তাঁর বিচার হবে। এ ছাড়া পরী মণি অসুস্থ, তাঁর মেডিকেল সার্টিফিকেট রয়েছে। তাই তাঁর রিমান্ড নামঞ্জুর চাচ্ছি।
এ বক্তব্যের পরেই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু বলেন, পরী মণি ইচ্ছা করে কাপড় পরিবর্তন করেননি, এটা একটা রাজনীতি।
এই বক্তব্যের পরে আদালতে আইনজীবীদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে যায়।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবুর সামনে এক পুলিশ সদস্য এসে বলেন, পরী মণি এ কয়দিন ভিন্ন পোশাকে ছিলেন। তাঁকে প্রথমে নেওয়ার পরে পোশাক পরিবর্তন করার সুযোগ দেওয়া হয়। তখন তিনি পোশাক পাল্টে ফেলেন। এরপরে তিনি আজকে আসার সময় আবার পুনরায় পোশাক পরিবর্তন করেছেন।
পরী মণি এজলাসের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আইনজীবীর কথা শুনছিলেন। এরপরে বিচারক আবার রিমান্ড শুনানি চালিয়ে যেতে বললে, আইনজীবীরা রিমান্ড শুনানি চালিয়ে যান।
এ সময় পরী মণির আইনজীবী মজিবুর রহমান বলেন, বিজ্ঞ আদালত মাদক মামলায় পরী মণিকে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য ও সহযোগীকে গ্রেপ্তারের কথা বলে রিমান্ডে নেওয়া হয়। কিন্তু রহস্য উদঘাটন ও সহযোগী আসামিকে গ্রেপ্তারের পরও কেন পুনরায় তাঁকে রিমান্ডের আবেদন করা হচ্ছে?
এর জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, পরী মণিকে মাদক কে দিলেন, এ উৎস না জানলে দেশ থেকে মাদক নির্মূল হবে না। তাঁর বাসায় কারা কারা এসে সেবন করতেন, তার তথ্য উদ্ধার করা দরকার। এ জন্য পুনরায় তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।
এরপর আদালত শুনানি শেষে পরী মণি ও তাঁর ব্যবস্থাপক আশরাফুল ইসলাম দীপুর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পরে পরী মণিকে আদালত থেকে বের করার সময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘সাংবাদিক ভাইয়েরা, আপনারা তদন্ত করেন, আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।’
এরপর দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা কড়া নিরাপত্তায় পরী মণিকে আদালত থেকে বের করে নেন।
এর আগে চলচ্চিত্র প্রযোজক মো. নজরুল ইসলাম রাজ ও তাঁর ব্যবস্থাপক সবুজ আলীকে মাদক মামলায় দুই দিন ও পর্নোগ্রাফির মামলায় চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন একই আদালত। উভয় মামলায় তাদের মোট ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে চিত্রনায়িকা পরী মণিসহ সবাইকে আদালতে হাজির করে হাজতখানায় রাখা হয়।
গত ৪ আগস্ট রাজধানী বনানীর দুটি বাসা থেকে পরী মণি, রাজসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।