রুয়েটে কেটে ফেলা হচ্ছে ৫০ প্রাচীন বৃক্ষ, প্রতিবাদে মানববন্ধন
নতুন প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য কেটে ফেলা হচ্ছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ৫০টি প্রাচীন গাছ। এরই মধ্যে ১৫টি গাছ কেটেও ফেলা হয়েছে। উন্নয়নের নামে গাছ কেটে রাজশাহীর পরিবেশকে বিপন্ন করে তোলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার মানববন্ধন করেছে পরিবেশবাদী কয়েকটি সংগঠন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রুয়েটের প্রধান ফটকের সামনের মহাসড়কে ‘পরিবেশ বিধ্বংসী উন্নয়ন চাই না’ প্রতিবাদ্য নিয়ে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন পালিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, রাজশাহীতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর উন্নয়নের নামে নির্বিচারে গাছ কাটার অশুভ প্রতিযোগিতায় নেমেছে। পুরনো গাছ এভাবে কেটে ফেললে রাজশাহীর পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রুয়েট কর্তৃপক্ষ যে ৫০টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগ অর্ধ শতাব্দীরও বেশি পুরানো। বন বিভাগকে না জানিয়ে এরই মধ্যে ১৫টি গাছ কেটেও ফেলা হয়েছে।
আজ রুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেছে, ১৫টি কৃষ্ণচূড়া ও মিনজিরি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। শ্রমিকরা গাছের গুঁড়ি রিকশা-ভ্যানে করে ক্যাম্পাস থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে। আরও যেসব গাছ কাটার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে আছে আম, লিচু, মেহগনি, কড়ই, মিনজিরি ও কৃষ্ণচূড়া।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর গাছগুলো রুয়েট ক্যাম্পাসে লাগানো হয়েছিল।
রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আহমেদ নিয়ামুর রহমান বলেন, ‘সরকারি গাছ কাটার জন্য কর্তৃপক্ষের বাধ্যতামূলকভাবে অনুমোদন নেওয়া উচিত এবং বন বিভাগের উচিত গাছের দাম মূল্যায়ন করা।’ তিনি বলেন, ‘রুয়েট কর্তৃপক্ষ গাছ কাটার বিষয়ে বন বিভাগকে কোনো কিছুই অবহিত করেনি।’
রুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেন বলেন, ‘আশির দশক থেকে ক্যাম্পাসে কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়নি। সম্প্রতি সরকার ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। যার আওতায় আছে ১০টি ১০তলা ভবন নির্মাণ। এজন্য মোট ৫০টি গাছ কাটা হবে। ইতোমধ্যে এই কর্মসূচির আওতায় ১৫টি গাছ কাটা হয়েছে।’
রেজিস্টার আরও বলেন, ‘গাছ কাটার বিষয়টি পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর এবং রুয়েটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তদারকি করছেন।’ যোগাযোগ করা হলে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অমিত রায় চৌধুরী এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিষয়ক পরিচালক জগলুল সাদাত জানান, তারা এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো উত্তর দিতে পারবেন না।
তবে রুয়েটের সিনিয়র সহকারী নিরাপত্তা পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘যথাযথ ক্রয়বিধি মেনে রুয়েটের কর্মচারী গোলাম মোস্তফার কাছে ১৫টি গাছ বিক্রি করা হয়েছে।’
গাছের ক্রেতা গোলাম মোস্তফা জানান, তিনি গাছ কাটার জন্য শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছেন। রুয়েট কর্তৃপক্ষ বন বিভাগকে গাছ কাটার বিষয়ে অবহিত করেছেন কিনা, তা তিনি জানেন না।
স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী আব্দুস সামাদ জানান, তিনি রুয়েট ক্যাম্পাসের কাটা গাছ দেখেছেন। এসব গাছের প্রতিটির দাম হবে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
খোঁজ নিয়ে গানা গেছে, যে ১৫টি গাছ ইতোমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে, রুয়েট কর্তৃপক্ষ সেগুলো মাত্র এক লাখ ২৭ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে।
রুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেন বলেন, ‘গত এক বছর ধরে ক্যাম্পাসে প্রায় এক হাজার গাছ রোপণ করা হয়েছে। এর ফলে যে ৫০টি গাছ কাটা হচ্ছে, সেগুলোর ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে।’ তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এএইচএম মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নতুন গাছ লাগালে পুরানো গাছ কাটার ক্ষতিপূরণ সম্ভব হয় না। রুয়েট ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুরানো এবং বড় গাছ থাকা গর্বের বিষয়। মানুষের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ ছাড়াও এসব গাছ বিভিন্ন ধরনের পাখির বাসস্থান।’
গাছ কাটার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে রুয়েটের প্রধান ফটকের সামনের মহাসড়কে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেছে পরিবেশ আন্দোলন।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে পরিবশে আন্দোলন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব টুংকু জানান, ‘আমরা লক্ষ্য করছি রাজশাহীতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর উন্নয়নের নামে নির্বিচারে গাছ কাটার অশুভ প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আমরা নিশ্চিত নই এই উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রয়োজন আছে কিনা। তবে আমরা নিশ্চিত, পুরানো গাছগুলো খুবই প্রয়োজন, যেগুলো কাটা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের উচিত গাছগুলো বাঁচিয়ে উন্নয়ন কার্যক্রমের পরিকল্পনা করা।’