অভিমত
সিদ্দিকুরের দৃষ্টি হারানোর বিচার কি হবে না?

তারিক সালমনের প্রতি অন্যায়ের প্রতিকারে আমরা যতটা আশাবাদী হতে পারি, ঠিক ততটাই আশাহত হচ্ছি সিদ্দিকুর রহমানের ওপর নেমে আসা নৃশংসতায়। সিদ্দিকুরের ওপর বিবেক কাঁপানো এমন আক্রমণের পরও তাঁর বিচার পাওয়ার কোনো সম্ভাবনার কথা আমরা কোথাও শুনতে পাচ্ছি না।
পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে একটা মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর। খুব কাছ থেকে ছোড়া টিয়ার শেল বিদ্ধ করে তাঁর দুই চোখ। শোনা যাচ্ছে, তিনি আর দৃষ্টি ফেরত পাবেন না। টিয়ার শেল ব্যবহারবিধিতে সতর্ক করা আছে, ‘এটা বিপজ্জনক। সরাসরি কোনো ব্যক্তি বা জনতাকে লক্ষ করে নিক্ষেপ করা যাবে না। এটা মারাত্মক জখম, এমনকি মৃত্যুও ঘটাতে পারে।’ তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন প্রশিক্ষিত সদস্য কীভাবে এই আক্রমণ করলেন? ব্যবহারবিধি লঙ্ঘন ও আক্রমণের ধরন বলে দেয়, এটা সন্দেহাতীতভাবে একটা ফৌজদারি অপরাধ।প্রায় মুখোমুখি দূরত্ব থেকে শেল নিক্ষেপের দৃশ্য দেখে আমরা আঁতকে উঠেছি। সিদ্দিকুরদের মিছিল একটা নিরীহ জমায়েতই ছিল। উপরন্তু তা ছিল শিক্ষা আন্দোলন। প্রশ্ন ওঠে, একটা রাষ্ট্র কোন চৈতন্যে পৌঁছালে তার বাহিনী সহজেই জড়িয়ে পড়ে এমন নির্লিপ্ত নৃশংসতায়! এমন হওয়ার কারণ কী? এই রাষ্ট্রে কি যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে? আমরা রাষ্ট্রের ওপর থেকে এখনো আস্থা হারাইনি। পুলিশকেও জনগণের উৎপীড়ক ভাবতে চাই না। তাহলে এ ঘটনায় বিচারের দিশা মিলছে না কেন? একে কোনোভাবেই কেবল একটা দুঃখজনক ঘটনা বলা যাবে না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপরাধের বিচার কোনো ব্যতিক্রম ব্যাপার নয়। তবু তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রতিকার হবে না—এ রকম একটা ধারণা আমরা আগে থেকেই করে থাকি। রাষ্ট্রের আচরণই আমাদের মাথায় এমন ধারণা বদ্ধমূল করেছে। ফলে সিদ্দিকুরের ঘটনার কোনো বিচার হবে না, আমরা এমনটাই মনে করছি। এটা একটা রাষ্ট্রে আইনের শাসনের জন্য খুব বিপজ্জনক পরিস্থিতি।
এ ঘটনার পর সরকারে উচিত ছিল, পৃথিবীর যে প্রান্তে এর উন্নত চিকিৎসা রয়েছে, দ্রুত সিদ্দিকুরকে সেখানে পাঠানো। সরকারের উচিত, এ ঘটনায় অবিলম্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা। দোষীকে শনাক্ত করা। বিচারে হাত দেওয়া। নইলে রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে।
লেখক : সহকারী বার্তা সম্পাদক, নাগরিক টেলিভিশন।