পাঠকের কলাম
খুদে শিক্ষার্থীদের যুদ্ধ
সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি যে এখন রীতিমতো যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা, সপ্তম শ্রেণিতে ক্যাডেট কলেজগুলোতে ভর্তি পরীক্ষা। তারপর রয়েছে মাধ্যমিক পাসের পর নামি-দামি কলেজে ভর্তি পরীক্ষা, উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর উচ্চশিক্ষার জন্য শুরু হয় আরেক দফা অন্যরকম ভর্তি পরীক্ষা। এগুলো এখন এতটাই প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়েছে, আর সে কারণেই এসব এখন ভর্তিযুদ্ধ নামেই বেশি পরিচিত।
আর ধাপে ধাপে এসব প্রতিযোগিতা করতে করতে শিক্ষার্থীরা হাঁপিয়ে উঠেছে এবং তারা এখন একপ্রকার রোবটে পরিণত হয়েছে। আর এসব পরীক্ষার সাথী হয়েছে তাদের অভিভাবকবৃন্দ। তার ওপর প্রতিবছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে নতুন সেশনে স্কুলগুলোতে শুরু হয় খুদে শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তিযুদ্ধ। আমরা অভিভাবকরাই আমাদের শিশুদের সোনালি অতীত এবং সুন্দর আগামী নষ্ট করে দিচ্ছি কি না ভেবে দেখার সময় এসেছে। আর আগেই উল্লেখ করেছি যে, বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাস এলেই অভিভাবকদের একপ্রকার বাড়তি তৎপরতা শুরু হয় তাদের সন্তানকে ভালো একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানোর। সে লক্ষ্যেই শুরু হয় আরেক দফা ভর্তিযুদ্ধ।
এবারও (২০১৬) তার ব্যতিক্রম হয়নি। রাজধানী ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের ৩১৬টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আগামী ২০১৭ সালের নতুন শিক্ষাবর্ষে ভার্তির জন্য অনলাইনে নির্ধারিত সময়ে সর্বমোট তিন লাখ ৩০ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর ৩৫টি স্কুলে জমা পড়েছে ৭২ হাজার আবেদন। দেশের সব সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে ৬৭ হাজার আসন রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর স্কুলগুলোতে আসন রয়েছে ১২ হাজার। সারা দেশে ৩৩৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকলেও ৩১৬টিকে অনলাইন নেটওয়ার্কে আনা সম্ভব হয়েছে আর বাকিগুলোতে সুযোগ-সুবিধা না থাকায় সেগুলোতে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য, এখন মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষার প্রতিটি ভর্তি প্রক্রিয়াই অনলাইনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। যার ফলে শিক্ষার্থী, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং অভিভাবক সবারই ভোগান্তি আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে।
রাজধানী ঢাকায় ১৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে আগামী ২৪ ডিসেম্বর এবং সারা দেশে একযোগে সব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে। তবে প্রাইমারি পর্যায়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কোনোরকম ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই শুধু লটারির মাধ্যমে তা সম্পন্ন করছে। তবে আসন্ন এসব ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের স্বজনপ্রীতি কিংবা প্রশ্নপত্র যেন আউট হয়ে না যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তা ছাড়া সব ধরনের সরকার নির্ধারিত কোটা যেন সঠিকভাবে পূরণ করা হয়, সেদিকেও সংশ্লিষ্ট সবাইকে নজর রাখতে হবে। কারণ সরকারি স্কুলে ভর্তির অধিকার বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। কারণ সরকারি প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার জন্য সরকার পুরোটাই ভর্তুকি দিয়ে থাকে। সে জন্য নামমাত্র ফি-তে পড়ার সুযোগ থাকে সেখানে। কিন্তু সেখানে যেহেতু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসন নেই, সে কারণেই হয় বিপত্তি। কাজেই সীমিত পরিসরের এ সুযোগ থেকে যেন দরিদ্র অথচ মেধাবীরা বঞ্চিত না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।
লেখক : শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়