বইমেলা
বইয়ের গন্ধ নিয়ে শুরু হচ্ছে বইমেলা
অমর একুশে বইমেলা হচ্ছে বাঙালির প্রাণের স্পন্দন। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৫’ শুরু হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। বইমেলা কেবল নতুন-পুরাতন বই-ই নয়, প্রিয়জন সান্নিধ্য-স্বজন সমাবেশও ঘটিয়ে থাকে। বইমেলায় পুরাতন পাঠকদের সাথে যোগ হয় নতুন প্রজন্মের বই পড়ুয়া পাঠকরা।
বইমেলার অপেক্ষায় থাকেন আমাদের মতন অজস্র পাঠক-লেখক। বইমেলা আমাদের চিন্তাচর্চা, পাঠাভ্যাস সৃষ্টিতে জোয়াড় আনে, যা দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে, অনুপ্রেরণা যোগায়। কারণ বইমেলার কেন্দ্রবিন্দু হলো বই। যাদের নতুন বইয়ের ঘ্রাণ ভালো লাগে, শরীরে দোলা দেয়, মন আনন্দে নেচে ওঠে; তাদের জন্য নতুন নতুন বইয়ের পাশাপাশি মনকাড়া বইয়ের প্রচ্ছদ, অলংকরণের ভাবনা মনে সুখবর নিয়ে আসে।
বইমেলায় নতুন বইয়ের ঘ্রাণ সকলকেই আকর্ষিত করে। নতুন বইয়ের গন্ধ যেন আত্মা ছুঁয়ে যায়! ঘ্রাণের আবেশে মন ভালো হয়ে যায়। নতুন বইয়ের মাতাল ঘ্রাণ শুধু বই পড়ুয়ারাই নাকি টেরপান! এর পেছনে যে রসায়নের কারসাজি রয়েছে সেদিকের আলোচনার চেয়ে ঘ্রাণ গ্রহণের আনন্দশক্তিকে উপভোগ করতে চাই। লেখক, গবেষক হিসেবে বিগত কয়েক বছরই নিয়মিতভাবে আমার বইও প্রকাশিত হচ্ছে। এবারও দুটি জীবনীগ্রন্থ এবং একটি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে গ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছে। তাই বইমেলার নিয়মিত পাঠক-ক্রেতা-লেখক হিসেবে নতুন বইয়ের প্রতি গভীর আন্তরিক টান অনুভব করি, অপেক্ষায় থাকি বই মেলার রঙিন আনন্দ জগতে বিচরণের।
বইয়ের গন্ধ কার না ভালো লাগে। বই পুরনো হোক কিংবা নতুন মোহনীয় একটা গন্ধ থাকবেই। একটা বই পড়ার আগে বইটা খুলে দুই পৃষ্ঠার মাঝখানে নাক রেখে শ্বাস টানায় যে আরাম আর প্রশান্তি মেলে আর কোনো বস্তুতে এমনটা পাওয়া যাবেনা। বইমেলায় নতুন বইয়ের গন্ধে উদ্দীপ্ত হই আমরা।
ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমিতে লেখক-পাঠকরা মাতোয়ারা হন নতুন বইয়ের গন্ধে। দারুণ এক আনন্দ খেলে যায় মনে। মেলায় অনেকেই আসেন বই দেখতে, বইয়ের গন্ধ নিতে। আগত পাঠকেরা প্রকাশকদের স্টলে স্টলে ঘুরে বই দেখে অনেক, কেনেন হয়তো দু-চারটা কিন্তু গন্ধ নেন বেশি সংখ্যকের।
এবার কিছু প্রয়োজনীয় প্রত্যাশার কথা না বললেই নয়। ধূলি–ধূসর বইমেলায় নতুন বইয়ের ঘ্রাণ যেন ধূলিকণার ভীড়ে হারিয়ে না যায়। অমর একুশে গ্রন্থমেলার পরিবেশ যেন সকলের জন্য যেমন নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর তেমনি অবশ্যই যেন শিশুবান্ধব হয় সেই প্রত্যাশাটাও করি।
নতুন বইয়ের ঘ্রাণ ছড়ানোর প্রস্তুতি যেন আমাদের সকলের জন্যই প্রত্যাশিত সুফল নিয়ে আসতে পারে, সেজন্যও মেলায় আগত সকলেরই আন্তরিক সক্রিয় ভূমিকা পালনের দায়বদ্ধতাও রয়েছে। প্রত্যাশার পাশাপাশি দায়িত্বশীল আচরণও করতে হবে আমাদের। মেলা কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার সহযোগিতা করতে হবে। বইমেলার মাঠে প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ আয়োজনে যেন অন্য পাঠকের প্রতি যথাযথ সম্মান জানাতে যেন ভুলে না যাই। যেন প্রকৃতি আর পুস্তকের সংযোগে কাটানো মুহূর্তগুলো পাঠকের মনে এক গভীর প্রশান্তি আনে।
লেখক : আবদুল্লাহ আল মোহন; সহযোগী অধ্যাপক ভাসানটেক সরকারী কলেজ, ঢাকা।