স্মার্টফোন সুরক্ষায় করণীয়

আজকের ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের এক অপরিহার্য অংশ। ব্যক্তিগত ছবি, ব্যাংকিং তথ্য, জরুরি কন্টাক্ট নম্বর থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট—সবকিছুই এখন আমাদের ছোট্ট এই ডিভাইসে সংরক্ষিত থাকে। তাই এর সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। একটি ছোট ভুল বা অসচেতনতা আপনার ব্যক্তিগত তথ্যকে ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে।
আপনি যদি আপনার স্মার্টফোন এবং এর ভেতরে থাকা তথ্যকে সুরক্ষিত রাখতে চান, তবে এখানে স্মার্টফোন সুরক্ষায় আপনার করণীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
স্ক্রিন লক ব্যবহার করুন
আপনার ফোনের সুরক্ষার প্রথম ধাপ হলো একটি স্ক্রিন লক। অনেকেই সহজ প্যাটার্ন বা "1234" এর মতো সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন, যা হ্যাকার বা চোরের জন্য অনুমান করা খুব সহজ। তাই, স্মার্টফোনের সুরক্ষায় একটি শক্তিশালী স্ক্রিন লক ব্যবহার করুন। এটি হতে পারে প্যাটার্ন বা পাসওয়ার্ড বা পাসকোড।
সহজ প্যাটার্নের পরিবর্তে একটি শক্তিশালী পিন (৬-৮ সংখ্যার), পাসওয়ার্ড (সংখ্যা, অক্ষর ও সিম্বল) অথবা বায়োমেট্রিক পদ্ধতি যেমন-ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আনলক ব্যবহার করুন। ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং ফেস আনলক বর্তমানে সবচেয়ে নিরাপদ ও জনপ্রিয় স্ক্রিন লক সিস্টেম।
সফটওয়্যার আপডেটেড রাখুন
স্মার্টফোন কোম্পানিগুলো নিয়মিত তাদের অপারেটিং সিস্টেমের জন্য সিকিউরিটি আপডেট পাঠায়। ফোনকে হ্যাকিং থেকে সুরক্ষিত রাখতে এবং আপডেটেড সব ফিচার পেতে নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট করে রাখতে হবে। বর্তমান সময়ে এমন কিছু আপডেট AI সফটওয়্যারের ফোন আছে যেগুলোতে স্মার্টফোনে থাকা সফটওয়্যার অন করে রাখলে ফোনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমস্যা শনাক্ত করে সমাধান করে দিতে পারে।
যখনই আপনার ফোনে কোনো সফটওয়্যার আপডেটের নোটিফিকেশন আসবে, অবহেলা না করে দ্রুত তা ইনস্টল করে নিন। ‘Automatic Updates’ অপশনটি চালু করে রাখতে পারেন, এতে নতুন আপডেট এলেই ফোন নিজে থেকে তা ইনস্টল করে নেবে। তবে, মোবাইল ডাটা ব্যবহারকারীদের এটি অফ করে রাখা উচিত, এতে করে ডাটা প্যাকেজ সাশ্রয় হবে। এক্ষেত্রে ম্যানুয়ালি সফটওয়্যার আপডেট করতে হবে।
অ্যাপ ইনস্টলেশনে সতর্কতা অবলম্বন করুন
আমরা বিভিন্ন প্রয়োজনে নানা রকম অ্যাপ ইনস্টল করে থাকি। কিন্তু সব অ্যাপ নিরাপদ নয়। হ্যাকারদের তৈরি করা অ্যাপ যদি আমরা ভুল করে ফোনে ইনস্টল করে ফেলি, তাহলে হ্যাকার আমাদের ফোনের অ্যাক্সেস পেয়ে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে।
শুধুমাত্র অফিশিয়াল অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করুন। অ্যাপ ইনস্টল করার সময় এটি আপনার ফোনের কোন কোন বিষয়ে পারমিশন চাইছে, তা মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। যেমন- একটি ক্যালকুলেটর অ্যাপের আপনার কন্টাক্ট লিস্ট বা ক্যামেরার অনুমতি চাওয়ার কোনো কারণ নেই। সন্দেহজনক মনে হলে সেই অ্যাপ ইনস্টল করা থেকে বিরত থাকুন।
পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারে সাবধানতা
ক্যাফে, এয়ারপোর্ট বা শপিং মলের মতো জায়গার ফ্রি পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করতে আমরা সবাই ভালোবাসি। কিন্তু এই নেটওয়ার্কগুলো সাধারণত সুরক্ষিত থাকে না। হ্যাকাররা সহজেই এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আপনার ফোনের অ্যাক্সেস নিয়ে ব্যাংকিং পাসওয়ার্ড বা অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে।
পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন, অনলাইন শপিং বা গোপনীয় তথ্য আদান-প্রদান করা থেকে বিরত থাকুন। খুব জরুরি প্রয়োজনে VPN ব্যবহার করুন।
ফোন চুরি বা হারিয়ে গেলে করণীয়
আপনার ফোনটি যদি চুরি হয়ে যায় বা হারিয়ে যায়, তবে কিছু পদক্ষেপ নিয়ে আপনার ফোনে থাকা তথ্যগুলো সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। অ্যান্ড্রয়েড ফোনের "Find My Device" বা আইওএস এর "Find My iPhone" ফিচারটি সবসময় চালু রাখুন। এর মাধ্যমে চুরি হয়ে যাওয়া ফোনের লোকেশন দেখতে পারবেন, ফোনটি ফ্যাক্টরি রিসেট করতে পারবেন বা ফোনটি লক করে দিতে পারবেন।
গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলোর পাসওয়ার্ড দ্রুত পরিবর্তন করে ফেলুন। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের পাশাপাশি ব্যাংকের হেল্পলাইনে যোগাযোগ করুন।
শেষ কথা
স্মার্টফোন আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, কিন্তু এর সঙ্গে কিছু ঝুঁকিও নিয়ে এসেছে। ওপরের টিপসগুলো মেনে চললে আপনার স্মার্টফোনটি সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। সামান্য সচেতনতাই পারবে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং আপনাকে বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করতে।
লেখক : সংবাদকর্মী