অনন্য স্থাপত্য আস-সালাম জামে মসজিদ

চোখ ধাঁধানো এই মসজিদটির নাম আস-সালাম জামে মসজিদ। এটি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা ইউনিয়নে অবস্থিত। মসজিদটির মূল আকর্ষণ হলো এই মসজিদটির নকশা।
এটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যে, বর্ষায় বৃষ্টির ছোঁয়া এবং শীতে কুয়াশার ঠান্ডা পরশ দুটোই উপভোগ করতে পারবেন মুসল্লিরা। পূর্ণিমা রাতে চাঁদের আলো মুগ্ধতা ছড়ায় মসজিদের ভেতরে। ব্যতিক্রমী মসজিদটি দেখতে দেশের দূর-দূরান্তের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন।
গরমে মসজিদ শীতল করার জন্য ভেতরে রয়েছে চারটি জলাধার। গ্রীষ্মকালে মসজিদ শীতল রাখবে জলাধারগুলোতে স্থান পাওয়া শীতল পাথর। দোতলা এই মসজিদের নিচতলা দুটি ভাগে বিভক্ত। সামনে মেহরাব ও মসজিদের মূল অংশ। পেছনে মাঝ বরাবর গলিপথ। তার দু‘পাশে রয়েছে শীতল জলাধার, রোদ আর বৃষ্টির প্রবেশপথ। গ্যালারির অংশের পেছন থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি। মসজিদটির ছাদ প্রচলিত স্থাপনার মতো নয়। দেওয়াল বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে ইটের তৈরি। তবে ইট দেখা গেলেও এর ভেতরে রয়েছে রড, সিমেন্ট ও ইটের সংমিশ্রণে আরসিসি ঢালাই। রহিমা মমতাজ ও সাইফ সালাহউদ্দিন ট্রাস্টের উদ্যোগে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে।
এই মসজিদটির আরেকটি আকর্ষণ হলো মসজিদটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যে, বৈদ্যুতিক বাতি ছাড়াই প্রাকৃতিক আলোয় আলোকিত থাকে। দোতলা এই মসজিদে কোনো জানালা নেই। চারপাশ থেকে কোনো বাধা ছাড়াই আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে ভেতরে। তবে মুসল্লিদের প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য দুটি দৃষ্টিনন্দন দরজা রয়েছে। পুরো মসজিদে একসঙ্গে ৪০০ জন মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করতে পারবেন। নিয়মিত নামাজের পাশাপাশি ঈদগাহ হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে আস-সালাম জামে মসজিদটি।
মসজিদটির ইমাম ওমর ফারুক বলেন, ‘এটি শুধু লক্ষ্মীপুর জেলার জন্য নয়, পুরো বাংলাদেশের জন্য একটি গর্বের বিষয়। এর নকশা ও স্থাপত্য যেন এক নতুন যুগের সূচনা।’
২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বাংলাদেশি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান আর্কি গ্রাউন্ড লিমিটেডের স্থপতি নবী নেওয়াজ খান শমীন ও তার দল মসজিদটির নকশা তৈরি করেন। ১০ হাজার ৮০০ বর্গফুটের দোতলা এ মসজিদের নির্মাণ ব্যয়ভার বহন করে রহিমা মমতাজ ও সাইফ সালাহউদ্দিন ট্রাস্ট। বিরতিহীন কাজের পর ২০২১ সালের শেষ দিকে মসজিদটি মুসল্লিদের ইবাদতের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
প্রকৃতির সান্নিধ্যে তৈরি এই মসজিদটি শুধু একটি ইবাদতখানা নয়, এটি স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্য নিদর্শন। প্রকৃতির সৌন্দর্য আর আধুনিক স্থাপত্যের মেলবন্ধন এই মসজিদটি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।