পবিত্র হজ আজ
লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত হবে আরাফাত ময়দান
আজ পালিত হবে পবিত্র হজ। সারা বিশ্ব থেকে আগত লাখো মুসলিমের ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হবে আরাফাতের ময়দান। সেলাইবিহীন শুভ্র ইহরামের পোশাকে হাজিরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই পুণ্যভূমিতে অবস্থান করবেন।
৮ জিলহজ, বুধবার (৪ জুন) সকাল থেকে মিনায় জড়ো হওয়ার মধ্য দিয়ে পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। অধিকাংশ হাজি মঙ্গলবার রাতেই তাঁবুর শহর মিনায় পৌঁছে যান। হজযাত্রীদের সংখ্যা বিবেচনা করে সৌদি মুয়াল্লিমরা আগের রাত থেকেই তাঁদের মিনায় নেওয়া শুরু করেন। মঙ্গলবার (৩ জুন) এশার নামাজের পর হাজিরা মক্কার আবাসন থেকে ইহরাম বেঁধে মিনার উদ্দেশে রওনা হন।
মিনায় যাত্রার মাধ্যমে হজ পালনের সূচনা হয়, যা ১২ জিলহজ শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। অন্যান্য দেশের হাজিদের সঙ্গে এবার বাংলাদেশের ৮৫ হাজার ১৬৪ জন হাজিও বুধবার সারা দিন মিনার তাঁবুতে অবস্থান করেছেন। তাঁদের সেবায় ১৮টি টিম দায়িত্ব পালন করেছে।
‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত ছিল তাঁবুর শহর মিনা। হাজিরা সারা দিন ও রাত মিনায় ইবাদত-বন্দেগি করেছেন, আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় জিকির ও তালবিয়াতে মশগুল ছিলেন। মিনায় জোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও পরদিন ফজরসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা সুন্নাত। সেখানে রাতযাপন করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
আজ (৯ জিলহজ) সূর্যোদয়ের পর আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে যাত্রা করার কথা থাকলেও ভিড় এড়াতে মুয়াল্লিমরা আগের রাতেই হজযাত্রীদের নেওয়া শুরু করেন। মিনা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিদায় হজের স্মৃতিবিজড়িত আরাফাতের ময়দান। তিনদিকে পাহাড়ঘেরা প্রায় চার বর্গমাইল আয়তনের এই বিশাল সমতল মাঠের একপ্রান্তে রয়েছে জাবালে রহমত বা রহমতের পাহাড়। প্রায় ১৪০০ বছর আগে এখানেই শেষ নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) তাঁর বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। হজের মূল অনুষ্ঠান হলো এই আরাফাত ময়দানে উপস্থিত থাকা। যদি কোনো হাজি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকেন, তাঁকেও অ্যাম্বুলেন্সে করে এখানে আনা হবে।
এ বছর মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা দেবেন মসজিদুল হারামের প্রবীণ ইমাম শায়খ সালেহ বিন আবদুল্লাহ হুমাইদ। তিনি নামাজও পড়াবেন। তাঁর দেওয়া খুতবার বাংলা অনুবাদ করবেন সৌদি আরবে অধ্যয়নরত চার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী: ড. খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান মাক্কী, মুবিনুর রহমান ফারুক ও নাজমুস সাকিব। তাঁরা সবাই মক্কার উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছেন। বাংলা ছাড়াও আরও ২০টি ভাষায় হজের খুতবা অনুবাদ করা হবে।
আগামীকাল, শুক্রবার (স্থানীয় সময় ১০ জিলহজ) হাজিরা মিনায় বড় জামারায় গিয়ে প্রতীকী শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করবেন। এই ‘পাথর মারা’ সম্পন্ন হওয়ার পর তাঁরা কোরবানি করে মাথা মুণ্ডন করবেন। এরপর ইহরামের শুভ্র পোশাক পরিবর্তন করে স্বাভাবিক পোশাকে ফিরে আসবেন।
সাধারণ পোশাকে মিনা থেকে মক্কায় ফিরে হাজিরা পবিত্র কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ (প্রদক্ষিণ) করবেন। তাওয়াফ শেষে কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় তাঁরা সাঈ (সাতবার দ্রুত হাঁটা বা দৌড়ানো) সম্পন্ন করবেন।
সাফা-মারওয়ায় সাঈ করার পর হাজিরা আবার মিনায় ফিরে যাবেন। সেখানে তাঁরা আরও দুই বা তিন দিন (১১ থেকে ১২ অথবা ১৩ জিলহজ) অবস্থান করবেন। এই সময়ে হাজিরা জামারায় (বড়, মধ্যম ও ছোট) প্রতিদিন সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করবেন।
মিনায় রমি সম্পন্ন করার পর হাজিরা মক্কায় ফিরে এসে বিদায়ী তাওয়াফ (কাবা প্রদক্ষিণ) করবেন। এই বিদায়ী তাওয়াফের মধ্য দিয়েই পবিত্র হজের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
আরাফাতে দিনের উচ্চ তাপমাত্রা বিবেচনা করে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহমন্ত্রী তাওফিক আল-রাবিয়াহ হজযাত্রীদের সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নিজ নিজ তাঁবুতে অবস্থানের আহ্বান জানিয়েছেন।
সৌদির স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী ড. আব্দুল্লাহ আসির জানিয়েছেন, এ বছর হজের জন্য ৫০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রশাসনিক কর্মী নিয়োজিত আছেন, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। তীব্র গরমজনিত অসুস্থতার চিকিৎসায় ৭০০টিরও বেশি হাসপাতালের শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবারের চিকিৎসা সক্ষমতা ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।