রম্য
ফেস ওয়াশবুক

ফেসবুকে অনেকেই ফ্রেন্ড ইনভাইটেশন পাঠান।
তাদের মধ্যে বেশির ভাগই মানুষ।
ফেসবুক যেহেতু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, তাই সেখানে মানুষ থাকাটাই স্বাভাবিক।
তবে কিছু আছেন অতিমানব।
তাদের নামও অতিপ্রাকৃতিক।
যেমন- বিষণ্ণ বিকেল, সতেজ সকাল, হিমেল হাওয়া, এক টুকরো চাঁদ, বৃষ্টি ভেজা ছাদ, অ্যাকশন বয়, রাত জাগা ভয়, চর পড়া নদী, ডেইনজার বদি।
নাম দেখেই বোঝা যায় তারা সাধারণ কোনো মানুষ নন।
একজনের নাম দেখলাম ‘ডিপ ব্লু ব্লাউজ’।
ভাবলাম শাড়ি-কাপড়ের ব্যবসায়ী।
পরে বুঝলাম না। তিনিও অতিমানব।
‘কোপা শামসু’কে ভেবেছিলাম কসাই।
তিনি বললেন, আরে মশাই, ইস্টাইল ইস্টাইল।
এখানেও ভুল।
নামে কি বা আসে যায়-এর সব জ্বলন্ত উদহারণ।
ব্যক্তিগত তথ্যের বেলায়ও তারা সাধারণের চেয়ে আলাদা।
তাদের মধ্যে এমন অনেক নারী প্রোফাইলধারীকে পাওয়া যাবে যারা ঢাকা কলেজে পড়ছেন বা পড়েছেন।
তেমন একজনকে কাছে চ্যাটবক্সে ধরলাম।
আপু, ঢাকা কলেজের কোন ব্যাচ?
২০০৩-এ বের হয়েছি।
ও আচ্ছা। গুড।
আপনি কোথায় পড়েছেন?
জানতে চান তিনি।
বললাম, আমি ইডেন কলেজে আছি।
ইডেন কলেজ!
তিনি অবাক হন।
হ্যাঁ, ইডেন কলেজ। ফোর্থ সেমিস্টার চলছে।
আজব। ইডেন কলেজ তো মেয়েদের। আপনি ছেলে হয়ে ইডেনে পড়েন কীভাবে?
মেয়ে হয়ে আপনি যেভাবে ছেলেদের ঢাকা কলেজে পড়েছেন সেভাবে।
অপর প্রান্ত থেকে ঢাকা কলেজের আপার আর কোনো জবাব আসে না।
‘কথা বলা ময়না’ নামের একজন একবার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালেন।
নামের মধ্যে লিঙ্গবৈষম্য নেই।
ময়না নামের মেয়ে যেমন আছে, তেমনি ছেলেদের নামও ময়না হয়।
তো ময়না পাখিকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি খাঁচার ভেতরে আছেন না বাইরে?
কথা বলা ময়না কথা বলে না।
শুধু লিখল, এল ও এল। লল।
বললাম, কথা বলা ময়নার জবান বন্ধ কেন। জবান খুলো।
ময়না আবারও লিখল, লুল।
বুঝলাম, এখানেও ভুল।
এ ধরনের ফেসবুকীয় অতিমানবদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করলেও বিপদ। না করলেও।
‘পাড়ার দাদা’ নামে একজন রিকোয়েস্ট পাঠিয়েই যাচ্ছেন। পাঠিয়েই যাচ্ছেন।
প্রথমবার কাজ না হওয়ায় পরেরবার পাঠালেন ‘পাড়ার দাদা-টু’ নামে।
একসেপ্ট করি না।
কারণ দাদাদের ভয় পাই। চশমাটা পড়ে গেলে মুশকিলে পড়ি/ দাদা আমি এখনো যে ইশকুলে পড়ি . . .
‘পাড়ার দাদা’ একবার পাঠায়, দুবার পাঠায়, তিনবার পাঠায়। একসেপ্ট করি না রিকোয়েস্ট।
শেষে ক্ষেপে গিয়ে ইনবক্সে লিখলেন ‘পাড়ার দাদা’।
আমার রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করস না ক্যারে? তোর এত ভাব ক্যারে?
বললাম, দাদা আপনি কি সিকান্দার বক্স?
নারে। ওই মাল আবার ক্যারে?
তাইলে এমন কইরা কথা কন ক্যারে . . .!!!
এরপর পাড়ার দাদাকে আর পাওয়া গেল না। আমিও বাঁচলাম।
একজনের প্রোফাইল নাম ‘জিম করি’।
‘জিম করি’ ইংরেজিতে লেখা।
বানান ভুলের কারণে প্রথমে পড়লাম ‘জিম ক্যারি’।
ধন্দে পড়ে গেলাম।
ইংরেজি মুভির নায়ক জিম ক্যারির বাজার কি খুব বেশি পড়তি?
না হলে আমাকে রিকোয়েস্ট পাঠাতে যাবেন কোন আনন্দে!
অনেক মেধা খাটিয়ে শেষে বের করলাম, জিম ক্যারি নন তিনি আসলে ‘জিম করি’।
এবার আসা যাক তাদের ছবির বিষয়ে।
তাদের ছবির অবস্থা কয়েক কাঠি সরেস।
‘দাগ থেকেই দারুণ কিছু’ নামে এক প্রোফাইলধারীর প্রোফাইল পিকচার পুরোটাই ব্ল্যাক। তার ওপর লেখা ‘প্রোফাইল পিকচার ধুইতে দিছি’।
তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট না করে ইনবক্সে লিখলাম, প্রোফাইল পিকচার শুকিয়ে জায়গামতো টানান। পিকচার ভালো মতো পরিষ্কার হলে একসেপ্ট করার বিষয়ে ভাবব।
‘পাশের বাড়ির মেয়ে’ নামের একজনের প্রোফাইল পিকচারে ঝুলছে হিন্দি ছবির নায়িকা কারিনা কাপুরের ছবি।
কারিনা কাপুর কবে কখন আমাদের এলাকায় থাকতে শুরু করল এবং একেবারে পাশের বাড়িতেই সেটা অবশ্য টের পাইনি। তবে কারিনা কাপুর ঠিকই আমার খবর পেয়ে গেছেন।
আগে শুনেছি ফেসবুকের অনেক কিছুই বায়বীয়।
এখন দেখছি শুধু তাই না কিছু কিছু ব্যাপার গায়েবিও।