রম্য
বন্ধু আছে যত রকম !

আগস্ট মাসের প্রথম রোববার আন্তর্জাতিক বন্ধু দিবস। সেই সূত্রে আজ বিশ্ব বন্ধু দিবস। আর এই দিবসকে কেন্দ্র করে করা হবে হাজারো রকমের আয়োজন। তো, সেই আয়োজনের অংশ হিসেবে আমরা এখন আপনাদের বিভিন্ন রকমের বন্ধুর পরিচয় জানাব! তাহলে চলুন, দেখে আসি কয়েক শ্রেণির বন্ধুকে!
হাড়কিপটে বন্ধু
এই শ্রেণির বন্ধুর কাছ থেকে কোনোদিন বা কোনোকালে কেউ একটা কিছু আদায় করতে পেরেছে, এমন কোনো নজির আজ পর্যন্ত কেউ দেখানোর সাহসটুকুও পায়নি! আপনি যতই চেষ্টা করুন না কেন, এই হাড়কিপটে টাইপ বন্ধুদের কাছ থেকে কোনো রকমের কিছুই পাবেন না। অবশ্য এরা নিজেরাও কিছু খরচ করতে চায় না, যদি কমে যায়। এমন কথাও শোনা যায় যে, তারা নাকি সঠিকভাবে প্রকৃতির ডাকে সাড়াও দেন না, যদি আবার ক্ষুধা লাগে সেই ভয়ে।
পরোপকারী সেই বন্ধু
এমন একশ্রেণির বন্ধু আছে, যাঁরা পরের ব্যবহার্য বস্তুগুলো নিজে ব্যবহার করে বিশাল পরোপকারী কাজ করে থাকেন। এ জাতীয় বন্ধুরা যে কাপড়টি পরেন, সেটা অন্যের। যে জুতা পরছেন, সেটাও অন্যের; যে চশমাটা পরছেন, সেটাও অন্যের। এমনও কথা জানা যায় (অবশ্য গোপন সূত্রে পাওয়া), এরা যে অন্তর্বাসটি পরিধান করেন, সেটাও নাকি অন্যের।
ধারদেনাবিশিষ্ট বন্ধু
এই শ্রেণির বন্ধুর একমাত্র এবং অন্যতম কাজ হলো, সবার থেকে টাকা-পয়সা ধারদেনা করা । আদৌ ধার করা টাকাটি যে পরিশোধ করতে হয়, সেটা এই জাতীয় বন্ধুরা মোটেও জানে না। এরা পারেই শুধু দ্রুত সময়ে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে ধার করতে। অবশ্য এ ব্যাপারে এদের অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা এতটাই দারুণ যে প্রশংসার দাবি রাখে।
মেয়েলি টাইপ বন্ধু
এসব বন্ধু মাঝেমধ্যে এমন ভঙ্গিমায় নিজেকে প্রকাশ করে যে বোঝাই যায় না, আসলে সে কি মেয়ে নাকি ছেলে? এদেরকে অবশ্য ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সঙ্গেই ঘুরতে দেখা যায়। এরা নিজেরাই নিজেদের দেখে এতটাই মুগ্ধতা প্রকাশ করে, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। যাহ দুষ্টু!
চকলেট বয় বা লাভার বয় বন্ধু
এই শ্রেণির বন্ধুদের কাজই হলো লাভ করা, আরে আপনারা ভুল বুইঝেন না। এইডা ব্যবসা-বাণিজ্যের লাভ না, প্রেম করাই এই সকল বন্ধুর কাজ। এরা ডজনকে ডজন প্রেম করে বেড়ায়, তবুও দেখা যায়, এর সঙ্গে কিছু বন্ধু আজীবন একা থেকে যায়। আর হ্যাঁ, এরা মেয়ে পটাতে এতটাই ওস্তাদ যে নিজেরাই বুঝতে পারে না, কত বড় অসাধ্য সাধন করে ফেলেছে।
খাদক / পেটুক / মটকু বন্ধু
আমরা জানি যে, এই শ্রেণির বন্ধুর পরিচয় দেওয়ার কোনোই প্রয়োজন লাগে না। কারণ, তাদের বন্ধুদের আড্ডার খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এরা খাওয়া ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। খাবার পেলেই এরা চুপ, নইলে হৈ-হুল্লোড় চলতে থাকে।
সাহায্যকারী বন্ধু
এসব বন্ধুর কাছে যত বড়ই বিপদ নিয়ে যান না কেন, এরা ঠিকই একটা না একটা মুক্তির উপায় বের করে দেবেই দেবে। বন্ধু সার্কেলে এসব বন্ধুর কোনোই তুলনা হয়। এরা সকলের বিপদে সবার পাশে চলে আসে নির্ভয়ে।
পলায়নকারী বন্ধু
এই শ্রেণির বন্ধুদের দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, একটি ভাগ হলো এরা যেকোনো বিপদে আগেই নিজে পালায়। সবাই যদি হাজারো বিপদে পড়ে, তবুও এদের পলানো থামবে না। পরে ঠিকই মিনমিন করতে করতে আবার সুবিধাজনক অবস্থায় এসে হাজির হয়। বাকি ভাগ হলো, টাকা ধার করার পর এমন গা-ঢাকা দেয়, আগামী ছয় মাসেও এদের দেখা মেলে না।
সহায়তাদানকারী বন্ধু
এই শ্রেণির বন্ধুদের অনেকের নামই ‘লিটন’ হয়ে থাকে। আর হ্যাঁ, অবশ্য তাঁরা তাঁদের ফ্ল্যাটে কিছু সময়ের জন্য বন্ধুদের সহায়তাদান করে থাকেন। কি বা কিসের জন্য? অথবা কেন? এই সবকিছুর উত্তর একমাত্র লিটনের ফ্ল্যাটের মালিক লিটনই দিতে পারবে।
আড্ডার মধ্যমণি বন্ধু
এই শ্রেণির বন্ধুরা থাকে সব সময় আড্ডার মধ্যমণি হয়ে। তারা না থাকলে যেন কোনো আড্ডাই ঠিকমতো জমে ওঠে না। এদেরকে সবাই খুব মিস করে।
চাপাবাজ বন্ধু
চাপাবাজ বন্ধু কারা, সে তো আর ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝানো লাগে না। কারণ, তাদের চাপাবাজি শুনলে যে কেউই বুঝে নিতে পারে, এটাই সেই চাপাবাজ শ্রেণির অন্যতম বন্ধু। এরা চাপা মারতে মারতে এমনও পর্যায় চলে যায়, যে নিজেদের বারাক ওবামার আপন খালাতো ভাই বোঝাতেও দ্বিধাবোধ করে না। আর হ্যাঁ, পারলে যেন প্রমাণও দেখিয়ে দেয়, সে যেন এক্কেবারে সত্যিই বারাক ওবামার আপন খালাতো ভাই।
ইন্টারন্যাশনাল চিটার বন্ধু
এই জাতীয় বন্ধুরা এমন কোনো চিটারি থাকে না, যা ওরা করে না। এদের থেকে সব বন্ধুই দূরে থাকতে চায় অলটাইম। কারণ, ও কখন কোন বিষয়ে যে ধরে বসবে চিটারি করতে, কেউই বুঝতেই পারবে না।
গুটিবাজি বন্ধু
এই একশ্রেণির বন্ধু আজীবন থাকবেই থাকবে। এরা একজনের বিষয়ে অন্যের কাছে গুটিবাজি না করলে যেন এদের পেটের ভাতই হজম হবে না। আর তাই এরা মহাসমারোহে এদের গুটিবাজি চালিয়ে যায়, যাচ্ছে এবং যাবে।