লাফিয়ে বাড়ছে খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ার দর
গত সপ্তাহে (রোববার থেকে বৃহস্পতিবার) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ২৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। এতে সপ্তাহটিতে কোম্পানিটির শেয়ার গেইনারের শীর্ষ দ্বিতীয়তে উঠে এসেছে। সপ্তাহটিতে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন বেড়েছে ৩৯ কোটি টাকা। সম্পদমূল্য নেগেটিভ ও কারখানা বন্ধ থাকা কোম্পানিটির শেয়ার কেন লাফিয়ে লাফিয়ে এতো দরে বেচাকেনা হচ্ছে, সেই বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের বিশেষ সতর্ক হওয়ার আহ্বান পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) কোম্পানিটির শেয়ারের সমাপনী দর দাঁড়ায় ২৬ টাকা ৪০ পয়সা। আগের সপ্তাহে ২৩ জানুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ারের সমাপনী দর ছিল ২১ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে পাঁচ টাকা ৪০ পয়সা বা ২৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা সাত কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার। সপ্তাহটিতে মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন বেড়েছে ৩৯ কোটি ৪৪ লাখ ১৬ হাজার টাকা।
অপরদিক ডিএসইতে গত ১ জানুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ারের সমাপনী দর দাঁড়িয়েছিল ৯ টাকা ৩০ পয়সা। গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) কোম্পানিটির শেয়ারের সমাপনী দর দাঁড়ায় ২৬ টাকা ৪০ পয়সা। এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ১৭ টাকা ১০ পয়সা বা ১৮৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গত ১ জানুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন দাঁড়িয়েছিল ৬৭ কোটি ৯২ লাখ ৭২ হাজার টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন দাঁড়ায় ১৯২ কোটি ৮২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির বাজারে মূলধন বেড়েছে ১২৪ কোটি ৮৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদনে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছিল নেগেটিভ এক টাকা ৯৮ পয়সা। এরপর থেকে এখন পযর্ন্ত কোম্পানিটি কোন আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেননি।
খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের শেয়ারের দর কেন বাড়ছে, সেই বিষয়ে কাজ করেছে ডিএসই। ইতোমধ্যে কয়েকবার ডিএসই কোম্পানিটির কাছে জানতে চেয়েছে, শেয়ারের দর বাড়ার পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আছে কি না। ডিএসই সেই প্রশ্নের জবাবে সম্প্রতি কোম্পানি জানায়, শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। এরপরও শেয়ারটির দর বেড়েই চলছে।
বরাবরের মতো এবারও গত ২৭ জানুয়ারি ডিএসই জানায়, গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের কারখানা প্রাঙ্গণ এবং প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করা হয়েছিল। তখন তাদের সব কার্যক্রম বন্ধ পাওয়া যায়।
শেয়ারের কেনাবেচার ব্যপারে কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা করি না। এটা আমাদের কাজ না। যেসব বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনছেন তারাই কেবল বলতে পারবে, কেন এতো বেশি দরে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের শেয়ার কিনছেন। তবে আমরা এতোটুকু বলতে পারি, শেয়ারের দর বাড়ার পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কোন লভ্যাংশ দিতে পারেনি। এছাড়া কোম্পানিটির সম্পদমূল্য নেগেটিভ। এই ধরনের অবস্থায় কোম্পানিটির শেয়ার দর বাড়ছে। যা কৃত্রিম উপায়ে বাড়ানো হচ্ছে বলে মনে করছি। এতো বেশি দরে কারা শেয়ারটি বেচাকেনা করছে, সেই বিষয়ে বিএসইসিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার পরামর্শ দিলেন।
কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদনে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ছয় পয়সা। ওই অর্থবছরের দুই প্রান্তিকে (জুলাই-ডিসেম্বর) শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ১১ পয়সা। একই সময়ে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছিল নেগেটিভ ১১ পয়সা। শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছিল নেগেটিভ এক টাকা ৯৮ পয়সা। এরপর থেকে কোম্পানিটি আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেননি। কোন লভ্যাংশও দেয়নি। এর আগে খুলনা কোম্পানিটি ২০১৪ সালে ১০ শতাংশ বোনাস ও পাঁচ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। পরে ২০১৫ সালে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। ২০১৯ সালে এক শতাংশ নগদ ও ২০২০ সালে দশমিক ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।
২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং। ‘জেড’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৭৩ কোটি চার লাখ টাকা। রিজার্ভ রয়েছে নেগেটিভ ৮৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর সময়ে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৩৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে এক দশমিক ১১ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫৯ দশমিক ১৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।