সম্পদমূল্যর ১৩গুণ বেশি দরে খান ব্রাদার্সের শেয়ার বেচাকেনা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দুর্বল কোম্পানি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার এখন সম্পদমূল্যর ১২ দশমিক ৭৯ গুণ বেশি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। আবার সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত হিসেবে এই কোম্পানিতে বিনিয়োগ সম্পূর্ণ অনিরাপদ অবস্থায় আছে। তবুও গত ১৯ কার্যদিবসে শেয়ারটির দর বেড়েছে ২৭ শতাংশের বেশি। শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখতে রেগুলেটরদের দৃষ্টি দিতে বলছেন শেয়ার ধারণ করা বিনিয়োগকারীরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের প্রতি শেয়ারের সমাপনী দর দাঁড়িয়েছে ১৫৩ টাকায়। যেখানে গত ১৭ আগস্ট কোম্পানিটির এই শেয়ারের দর ছিল ১১৯ টাকা ৯০ পয়সা। মাত্র ১৯ কার্যদিবসে এই শেয়ারের দর বেড়েছে ৩৩ টাকা ১০ পয়সা। গত বৃহস্পতিবার মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫০০ কোটি ৬২ লাখ ২১ হাজার ১৮১ টাকা। যেখানে গত ১৭ আগস্ট এই মূলধন ছিল এক হাজার ১৭৫ কোটি ৯৭ লাখ ৭৭ হাজার ২৫২ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন বেড়েছে ৩২৪ কোটি ৬৪ লাখ ৪৩ হাজার ৯২৯ টাকা।
অন্য কোম্পানির সহায়তা ছাড়াই খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের পণ্য এখন সরাসরি বাজারজাত হচ্ছে জানিয়ে কোম্পানির সচিব তপন কুমার সরকার বলেন, নানা জটিলতার কারণে ২০২২ সাল থেকে সহযোগী কোম্পানির নামে বাজারে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের পণ্য পাওয়া যেত। সরাসরি কোম্পানির নামে পণ্য বাজারজাত ছিল না। এভাবেই কোম্পানিটি কাজ চালিয়ে আসছিল। এতে আমাদের পণ্য বাজারজাতে অন্য কোম্পানির সহায়তা নিতে হতো। এখন সেই বৃত্ত থেকে কোম্পানিটি বেরিয়ে এসেছে। এখন কোম্পানির সম্পূর্ণ নিজস্ব সক্ষমতায় পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। একইসঙ্গে বাজারজাত হচ্ছে। এতে উৎপাদন ও মুনাফা বেড়েছে। এতো বেশি দরে কেন এই শেয়ার কেনাবেচা হচ্ছে, সেই তথ্য কোম্পানির জানা নেই জানিয়ে তপন কুমার সরকার বলেন, সর্বশেষ তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটি মুনাফায় ফিরেছে। সামনে আরও ভাল হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
শেয়ার দর বাড়া নিয়ে ইতোমধ্যে পুঁজিবাজারের সিকিউরিটিজ হাউজে নানা গুঞ্জন ওঠেছে, শেয়ার দর এ ধরনের বৃদ্ধিকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না কোম্পানিটির শেয়ার ধারণ করা বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, মাত্র ১৯ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ২৭ শতাংশ বেড়েছে, যা তারা মানতে নারাজ। তাই কোম্পানিটির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখতে রেগুলেটরদের বিশেষ অনুরোধ করেন বিনিয়োগকারীরা। একই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এক কর্মকর্তা বলেন, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দর বাড়ার বিষয়টি ইতোমধ্যে নজরে এসেছে। এখন শেয়ারটির দর বাড়ায় কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার ডিএসইতে কোম্পানিটির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) দাঁড়ায় ৭৬৫ পয়েন্টে। পিই রেশিও অনুসারে কোম্পানিতে বিনিয়োগ সম্পূর্ণ ঝুঁকিতে রয়েছে। পুঁজিবাজারের কোনো কোম্পানির পিই রেশিও যদি সিঙ্গেল ডিজিটে থাকে, তাহলে সেখানে বিনিয়োগ সম্পূর্ণ নিরাপদ ধরে নেওয়া হয়। এছাড়া পিই রেশিও ডিজিট যদি ১৫ পয়েন্ট পর্যন্ত অবস্থান করে, তবে সেখানেও বিনিয়োগ নিরাপদ বলে ধরা হয়ে থাকে। তবে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসাবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। সেই হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। অর্থাৎ পিই রেশিও ৪০ এর ওপরে গেলে বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। পিই রেশিও যত বাড়বে ঝুঁকির মাত্রা তত বাড়তে থাকবে।
কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরে (২০২৪-২০২৫) তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক প্রতিবেদনে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে আট পয়সা। আগের বছরের (২০২৩-২০২৪) একই সময়ে (জানুয়ারি-মার্চ) শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল দুই পয়সা। কোম্পানিটির গত অর্থবছরের তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ১৫ পয়সা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-মার্চ) শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল পাঁচ পয়সা। গত তিন প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছে আট পয়সা। গত ৩১ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ৯৬ পয়সা। এর আগে ২০২৩-২০২৪ সমাপ্ত অর্থবছরে (জুলাই-জুন) জন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য এক শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। ওই অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছিল এক পয়সা। ওই সমাপ্ত বছরে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছিল আট পয়সা। শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছিল ১১ টাকা ৮৮ পয়সা।
২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ। ‘বি’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১৫০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৯৮ কোটি আট লাখ টাকা। শেয়ার সংখ্যা ৯ কোটি ৮০ লাখ ৭৯ হাজার ৮৭৭টি। রিজার্ভ রয়েছে ১৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৩৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে চার দশমিক ৭৮ শতাংশ, বিদেশিদের হাতে শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।