নতুন বই
সাহাদাত পারভেজের ‘গজারিয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য’

১৭ বছর ধরে নানা দলিল দস্তাবেজ সংগ্রহ করে তিনি বইটি লিখেছেন। ২৯৬ পৃষ্ঠার এই বইটি প্রকাশ করেছে উৎস প্রকাশন (স্টল ১৯৭-২০০)। বইটির মুখবন্ধ লিখেছেন বরেণ্য ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম। প্রচ্ছদ এঁকেছেন মুস্তাফিজ কারিগর। অলংকরণ করেছেন শিশির আহমেদ।। বইটির মূল্য ৫০০ টাকা।
মোগল আমলের মাঝামাঝি সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত একটি দ্বীপ কেমন করে এক ব্যস্ত জনপদে পরিণত হলো, তারই ধারাবাহিক বয়ান আছে এই বইয়ে। এই বইয়ের লেখক ইতিহাসের ছাত্র না।তিনি মূলত একজন আলোকচিত্রী। কিন্তু ইতিহাসের মতো কঠিন বিষয়কে বিধৃত করেছেন সরল গদ্যে। বরেণ্য ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম মুখবন্ধে লিখেছেন, এই গ্রন্থের লেখক ইতিহাসের ছাত্র নন। আলোকচিত্রকলা তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। তবে নিজের শেকড়ের সন্ধান করতে গিয়েই হয়তো তিনি এই বিষয়টি বেছে নিয়েছেন। তিনি মূলত আঞ্চলিক ইতিহাসকেই পাঠকের সামনে হাজির করার চেষ্টা করেছেন। আঞ্চলিক ইতিহাসগুলো তো সামগ্রিক ইতিহাসেরই অংশ।এই বই লিখতে গিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে তিনি পুরোনো যা কিছু সংগ্রহ করেছেন, তা বিস্ময়কর।
বইটির প্রথম ফ্ল্যাপে লেখা আছে-আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে মেঘনার বুকে জেগে ওঠে এক বিশাল দ্বীপ। এই দ্বীপের নাম রাখা হয় ভবচর। ভবসাগরে জেগে উঠেছিল বলেই হয়তো এমন নাম। মেঘনার গহীন থেকে ভেসে ওঠা সেই দ্বীপটিই আজকের জনবহুল গজারিয়া। বাংলাদেশের বুকে এর আয়তন মাত্র ৫১ বর্গমাইল। ব্রিটিশ আমলের শেষ সময় পর্যন্ত লোকে এই এলাকাকে চিনত ‘ফুলদী গজারিয়া’ হিসেবে। মোগল আমলের শেষ সময় থেকে এই ভূখণ্ডে জনবসতি গড়ে উঠতে থাকে। উর্বরা ভূমিই চারপাশের মানুষদের এখানে টেনে নিয়ে আসে। এসব সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আসেন কিছু ক্ষমতাবান ব্যক্তিও। নদীঘেরা এ প্রত্যন্ত অঞ্চলে তারা আসেন মূলত ভূমি বন্দোবস্ত পাওয়ার কারণে। এদের কেউ কেউ আসেন ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে। সমকালীন সমাজের ক্ষমতাবান এই মানুষগুলো কোথা থেকে এলেন কিংবা কেমন করে এই ভূসম্পত্তির মালিক হলেন, তারই বিস্তৃত বর্ণনা আছে এই বইয়ে। বইটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক প্রামাণ্য দলিল।
বইটির লেখক একজন খ্যাতিমান আলোকচিত্রী, আলোকচিত্র সাংবাদিকতার শিক্ষক ও পরামর্শক। জন্ম ১৯৭৭ সালের ৮ অক্টোবর, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচরে। কিশোর বয়স থেকেই লেখালেখির শুরু। ওই সময় ছবি তোলার নেশাও পেয়ে বসে। এক সময় মনে হয়, ছবি তোলাই উপযুক্ত পেশা। পাঠশালা-সাউথ এশিয়ান মিডিয়া একাডেমি থেকে ফটোসাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা। ফটোসাংবাদিক হিসেবে পেয়েছেন বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফটোসাংবাদিকতা বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। গবেষণা ও ইতিহাস বিষয়ে গভীর মনোযোগ। কবিতার বই ‘যে ছবি হৃদয়ে আঁকা’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে, কলেজে পড়ার সময়। ২০১২ সালে প্রকাশিত হয় ফটো অ্যালবাম ‘শতবর্ষের পথিক’। ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয় গবেষণাধর্মী গ্রন্থ ‘শেকড়ের খোঁজে’। নিজের স্কুল নিয়ে লেখা বই ‘একটি বিদ্যালয় বৃত্তান্ত’ প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালে।