নতুন বই
মেলায় শাকিলের শেষ কাব্যগ্রন্থ

হৃদয়পুর কত দূর, তাঁর প্রশ্ন ছিল। সেই দীর্ঘ ভ্রমণে তাঁর অনীহা ছিল। তাঁর মন খারাপের গাড়ি থেমেছে গেল ডিসেম্বরে। ঠিক দুই মাস পরই বের হলো তাঁর, কবি মাহবুবুল হক শাকিলের শেষ কাব্যগ্রন্থ, ‘জলে খুঁজি ধাতব মুদ্রা’। অমর একুশে বইমেলায় আজ সোমবার মোড়ক খোলা হলো অকালপ্রয়াত এই কবি ও রাজনীতিবিদের তৃতীয় কাব্যগ্রন্থের। দুই মলাটে ৮৪টি কবিতার এ বই মেলায় এনেছে অন্বেষা প্রকাশনী।
বাংলা একাডেমির শামসুর রাহমান মিলনায়তনে বই প্রকাশের এই আনন্দে মিশে ছিল শাকিলের না থাকার হাহাকার। আবৃত্তিকার গমগমে কণ্ঠে পড়ছিল, ‘মৃতদের কান্নার কোন শব্দ থাকে না, থাকতে নেই, নেই কোন ভাষা, কবরের কোন ভাষা নেই’।
মঞ্চে ছিলেন কবি হেলাল হাফিজ। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে কিশোরী জাকিয়া রুবাবা মৌপি বলছিল, ‘বাবার প্রথম কবিতার বই যখন বের হয়, তখন আমি ঢাকায় ছিলাম না। পরে ঢাকায় এসে বইটি পড়েছি। কিন্তু আমার তেমন কিছু মনে হয়নি। আমার বাবা আমার কাছে কবি হবার আগে সবার কাছে কবি হয়ে গেল।’
গেল বছর এই মিলনায়তনেই দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘মন খারাপের গাড়ি’র প্রকাশনা অনুষ্ঠানের স্মৃতি মনে করে মৌপি আরো বলছিল, ‘আমি খুব অবাক হয়েছিলাম এত মানুষ দেখে। আমি নিজে গল্প পড়তে পছন্দ করি। আমার ধারণা ছিল, সবাই তাই করে। সেদিন এত মানুষ দেখে অবাক হয়েছিলাম। বাবাকে বলেছিলাম, তুমিও আবার কবি, তোমার কবিতাও মানুষ পড়ে! আজ আমার আরেক প্রিয় কবি হেলাল হাফিজ মঞ্চে আছেন। বাবা নেই। তবু আমার আনন্দ হচ্ছে।’
প্রতি রাতেই মাহবুবুল হক শাকিল কবিতা লিখতেন। সকালে সেগুলো গুছিয়ে রাখতেন সহধর্মিণী নীলুফার আনজুম। প্রিয় মানুষের কবিতার বই বের হওয়ার দিনে তাঁর চোখে ভর করেছিল শূন্যতা। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে শুধু বললেন, ‘ভালোবাসার মানুষ হারায় না। আমি মনে করি, আমি যেমন সৃষ্টিকর্তাকে ভালোবাসি, কিন্তু তাঁকে দেখতে পাই না। তেমনি খুব কাছের মানুষ, ভালোবাসার জন কবি মাহবুবুল হক শাকিল আমার প্রতিটি সত্তায় থাকবে, যতদিন আমি বেঁচে থাকব।’
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আরো কথা বলেছেন কবি হেলাল হাফিজ, কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপু মণি।