Skip to main content
NTV Online

শিল্প ও সাহিত্য

শিল্প ও সাহিত্য
  • অ ফ A
  • গদ্য
  • কবিতা
  • সাক্ষাৎকার
  • গ্রন্থ আলোচনা
  • বইমেলা
  • চিত্রকলা
  • শিল্পসাহিত্যের খবর
  • পুরস্কার ও অনুষ্ঠান
  • চলচ্চিত্র
  • আলোকচিত্র
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • শিক্ষা
  • মত-দ্বিমত
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • জীবনধারা
  • স্বাস্থ্য
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ভ্রমণ
  • ধর্ম ও জীবন
  • নির্বাচন
  • সহজ ইংরেজি
  • প্রিয় প্রবাসী
  • আইন-কানুন
  • চাকরি চাই
  • অটোমোবাইল
  • হাস্যরস
  • শিশু-কিশোর
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • English Version
  • এনটিভি বাজার
  • এনটিভি কানেক্ট
  • যোগাযোগ
  • English Version
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি অস্ট্রেলিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি কানেক্ট
  • ভিডিও
  • ছবি
  • এনটিভির অনুষ্ঠান
  • বিজ্ঞাপন
  • আর্কাইভ
  • কুইজ
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • শিক্ষা
  • মত-দ্বিমত
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • জীবনধারা
  • স্বাস্থ্য
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ভ্রমণ
  • ধর্ম ও জীবন
  • নির্বাচন
  • সহজ ইংরেজি
  • প্রিয় প্রবাসী
  • আইন-কানুন
  • চাকরি চাই
  • অটোমোবাইল
  • হাস্যরস
  • শিশু-কিশোর
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • English Version
  • এনটিভি বাজার
  • এনটিভি কানেক্ট
  • যোগাযোগ
  • English Version
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি অস্ট্রেলিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি কানেক্ট
  • ভিডিও
  • ছবি
  • এনটিভির অনুষ্ঠান
  • বিজ্ঞাপন
  • আর্কাইভ
  • কুইজ
Follow
  • শিল্প ও সাহিত্য
ছবি

বর্ণিল সাজে সেমন্তী সৌমি

লাল টুকটুকে মিম

একান্তে তাহসান-রোজা

মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর ৫ খাবার

মেট গালা ফ্যাশনে দ্যুতি ছড়ালেন কিয়ারা

গ্রীষ্মের ফুলে ভিন্নরূপে রাজধানীর প্রকৃতি

বিমান বাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণে প্রধান উপদেষ্টা

বিমান বাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণ প্রধান উপদেষ্টার

পুলিশ সপ্তাহ শুরু

স্টাইলিশ মিম

ভিডিও
জোনাকির আলো : পর্ব ১২৩
আলোকপাত : পর্ব ৭৭৫
ফাউল জামাই : পর্ব ৯৫
ছাত্রাবাঁশ : পর্ব ০৮
টেলিফিল্ম : বীথি পরিবহন
টেলিফিল্ম : বীথি পরিবহন
মহিলাঙ্গন : পর্ব ৩৫৯
মহিলাঙ্গন : পর্ব ৩৫৯
গানের বাজার, পর্ব ২৩৩
রাতের আড্ডা : পর্ব ০৬
রাতের আড্ডা : পর্ব ০৬
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৫০
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৫০
স্বাস্থ্য প্রতিদিন : পর্ব ৫৫২৫
স্বাস্থ্য প্রতিদিন : পর্ব ৫৫২৫
অঞ্জন আচার্য
১৩:১০, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
অঞ্জন আচার্য
১৩:১০, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
আপডেট: ১৩:১০, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
আরও খবর
কাজী নজরুল ইসলাম : দ্রোহের কবি, সম্প্রীতির কবি
আন্দোলন-সংগ্রাম, রাজনীতিতে নজরুল-সাহিত্যের প্রভাব
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এশিয়া অঞ্চলে বিজয়ী ফারিয়া বাশার
স্বাগত ১৪৩২: বাংলা নববর্ষ বাঙালির উৎসব
ঢাকার ঈদ মিছিলে মোগল ঐতিহ্য

আমি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

‘ঈশ্বর থাকেন ওই গ্রামে, ভদ্রপল্লীতে’

অঞ্জন আচার্য
১৩:১০, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
অঞ্জন আচার্য
১৩:১০, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
আপডেট: ১৩:১০, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

দুই দিনের বেশি যন্ত্রণা ভোগ করে এবং এই দুই দিন বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ে শ্যামা। শেষবার জ্ঞান ফেরার পর শ্যামা পায় মহামুক্তির স্বাদ। মা হওয়ার প্রথম অভিজ্ঞতা। এরপর শ্যামা তার সন্তানের চোখ, মুখ, গাল, ঠোঁট, বুকের স্পন্দনের পাশাপাশি সন্তানের হাত-পা ছোড়া, তাকানো, হাসি-কান্নার অর্থও বুঝতে শেখে। আঁতুড়ঘরে থেকে সে তার সন্তানকে মানুষ করার দায়িত্ব ও কর্তব্য শুরু করে দেয়। বিছানায় শুয়ে সে খুঁতখুঁত করত—এটা হলো তো ওটা হলো না। ছেলের বুকে সামান্য সর্দি বসলে সে তাগাদা দিয়ে তেল গরম করে ছেলের বুকে মালিশ করায়, পাশ ফিরেই ছেলেকে পিষে ফেলেছে আশঙ্কায় চমকে ওঠে, কখনো কখনো মনে হয় তার ছেলে নিশ্বাস ফেলছে না। তাই ছেলের নাকের নিচে গাল পেতে নিশ্বাস অনুভব করে, ছেলের বুকে হাত রেখে স্পন্দন গোনে, এমনকি স্নানের জল বেশি গরম হলে ননদ মন্দাকিনীর সাথে ঝগড়া করে শ্যামা। এত কিছুর পরের শ্যামার এই সন্তান বেঁচেছিল মাত্র ১২ দিন। ছেলের মৃত্যুতে শ্যামা নিজেকে ক্ষমা করতে পারে না। তার ধারণা, সন্তান পালনে সে আনাড়ি বলেই এমনটা ঘটেছে। তবে সন্তানটি না বাঁচলেও সন্তান পালনের সমস্ত কৌশল এ সময়ই শিখে নিয়েছিল শ্যামা।

দুই বছরের মাথায় শ্যামার আর একটি সন্তান হয়। তার নাম রাখে বিধানচন্দ্র। এরপর এক মেয়ে ও এক ছেলের জন্ম হয়, নাম রাখা হয় তাদের বকুলমালা ও বিমানবিহারী। কিন্তু প্রথম সন্তানের কথা কখনোই ভুলতে পারে না শ্যামা; বরং সেই অভিজ্ঞতা দিয়েই পরবর্তী সন্তানদের লালন-পালন করে সে। যার কারণে বিধানের জন্মের পর কোনো উচ্ছ্বাস দেখায় না শ্যামা, যদি এবারও দেবতার পরিহাসে পড়ে সেই ভয়ে। শীতল যখন বলে এ ছেলের পয় আছে, তখনো শ্যামার ভয় হয়; সে উচ্ছ্বসিত হয় না, বরং ছেলেকে বাঁচার কথা বলে। শ্যামার নিজের মনেও জাগে যে, বিধান ভাগ্যবান ছেলে, কিন্তু ভয়ের কারণে সে উচ্ছ্বসিত হয় না। এই দ্বিতীয় সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কালীঘাটে ও তারকেশ্বরে পূজা মানত করে শ্যামা। এমনকি নিজে গোটা পাঁচেক মাদুলি ধারণ করে হাতে। প্রতিদিন মাদুলি ধোয়া জল খায় সে, আর একটি একটি মাদুলি ছেলের কপালে ছুঁইয়ে নিশ্চিত হয়। একদিন শিশু বিধানের জ্বর হলে সন্তানের হারানো আশঙ্কায় ঠান্ডা হয়ে যায় শ্যামা। সেই যাত্রায় বিধান বেঁচে যায়। একটু একটু করে বেড়ে ওঠে বিধান। তবে বিধানের ভেতর দেখা যায় বিভিন্ন অসংলগ্ন আচরণ। এর জন্য চিন্তার শেষ ছিল না তার। স্বাভাবিক নিয়মেই বিধান একসময় বড় হয়। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পায়। এরপর বিয়ে করে। বিধানের স্ত্রী সুবর্ণর মা হওয়ার দীর্ঘ পরিক্রমার মধ্যে নানা প্রসঙ্গে উঠে আসে উপন্যাসের নানা দিক।

পুরো সারাংশ টানলে উপন্যাসটিকে মোটামুটি ১০টি পর্বে ভাগ করা যায়। প্রথম পর্বে শ্যামার প্রথম সন্তান হওয়ার কথা রয়েছে। শ্যামার এই সন্তানটি মাত্র ১২ দিন বেঁচে ছিল। এ কথা আমি কয়েকবার উল্লেখ করেছি। দ্বিতীয় পর্বে দুই বছরের মাথায় শ্যামার কোলে আরো একটি ছেলেসন্তানের জন্ম হয়। এই সন্তানকে ঘিরেই দ্বিতীয় পর্বটি সাজানো হয়েছে। তৃতীয় পর্বে এসে আমি কয়েক বছর পরের ঘটনা বর্ণনা করি। পর্বের শুরুতেই আমি বলি : “কয়েক বৎসর কাটিয়াছে। শ্যামা এখন তিনটি সন্তানের জননী। বড় খোকার দুবছর বয়সের সময় তাহার একটি মেয়ে হইয়াছে, তার তিন বছর পরে আর একটি ছেলে। নামকরণ হইয়াছে তিনজনেরই—বিধানচন্দ্র, বকুলমালা ও বিমানবিহারী। এগুলি পোশাকী নাম। এ ছাড়া তিনজনের ডাকনামও আছে, খোকা, বুকু ও মণি।” চতুর্থ পর্বে এসে নাটকীয়ভাবে ঘটে শ্যামার একমাত্র রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয় মামা তারাশঙ্করের আগমন। এই মামা একদিন তার সহায়-সম্বল সব বিক্রি করে কাউকে কিছু না বলে নিরুদ্দেশ হয়েছিল। এ পর্বটি শেষ হয় মেয়ে বকুলকে নিয়ে শ্যামার স্বামী শীতলের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে। পঞ্চম পর্বে স্বামীহীন সংসারে শ্যামার কঠিন জীবনযাপনের বর্ণনা। পর্বটি শেষ হয়েছে শীতলের ফিরে আসা এবং পুলিশে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার বিবরণ দিয়ে। ষষ্ঠ পর্বে শ্যামার জীবনসংগ্রামে অংশ নিতে দেখা যায় তার মামা তারাশঙ্করকে। সপ্তম পর্বে একরকম বাধ্য হয়ে শ্যামা কলকাতার বাড়ি ভাড়া দিয়ে বনগাঁ তার ননদের সংসারে আশ্রয় নেয়। এ পর্বের শেষে দেখা যায়, শীতল জেল থেকে ছাড়া পায়, কিন্তু সে ভয়ংকর অসুস্থ। অষ্টম পর্বে শ্যামা তার কলকাতার বাড়ি বিক্রি করে দেয়। মেয়ে বকুলের বিয়ে এ পর্বের মূল ঘটনা। নবম পর্বে বড় ছেলে বিধানচন্দ্রের চাকরি হয়। দশম পর্বে ঘটে বিধানের বিয়ে, সেই সাথে বিধানের স্ত্রী সুবর্ণর জননী হওয়া। এভাবেই শেষ হয় উপন্যাসটি।

১৯৩৫ সালের আগস্ট মাসে (আষাঢ় ১৩৪২ বঙ্গাব্দ) আমার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘অতসীমামী’ প্রকাশিত হয় গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্স থেকে। এ গল্পগ্রন্থে মোট ১০ গল্প অন্তর্ভুক্ত হয় : ১. অতসীমামী, ২. নেকী, ৩. বৃহত্তর-মহত্তর, ৪. শিপ্রার অপমৃত্যু, ৫. সর্পিল, ৬. পোড়াকপালী, ৭. আগন্তুক, ৮. মাটির সাকী, ৯. মহাসংগম ও ১০. আত্মহত্যার অধিকার। একই বছর ডিসেম্বর মাসে (পৌষ ১৩৪২ বঙ্গাব্দ) ডি এম লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত হয় আমার দিবারাত্রির কাব্য উপন্যাসটি। এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে (মহালয়া ১৩৪২ বঙ্গাব্দ) ‘নাগরিক’ পত্রিকায় প্রকাশ পায় গল্প ‘প্রকৃতি’। এ ছাড়া একই সময় ‘পাঞ্চজন্য’-এর শারদ ১৩৪২ বঙ্গাব্দ সংখ্যায় মুদ্রিত হয় ‘বাগদীপাড়ায় একটি রাত’ গল্পটি। অতিরিক্ত মানসিক ও শারীরিক পরিশ্রমের কারণে এবং নিজের প্রতি চরম অবহেলার ফলে এ সময়টায় আমার মধ্যে দেখা দেয় ভয়ংকর অসুস্থতা। এই বছরের কোনো একদিন সংজ্ঞা হারাই আমি এবং দুই-এক মাস পর এমনটা ঘটতে থাকলে চিকিৎসায় ধরা পড়ে আমার বঢ়রষবঢ়ং বা মৃগীরোগ হয়েছে। চিকিৎসাতীত এই রোগ আমাকে বহন করতে হয় আমৃত্যু।

যুগান্তর সম্পাদিত ‘অপ্রকাশিত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়’ (১৯৭৬) গ্রন্থের ২৪ নম্বর চিঠিতে সেই কথার উল্লেখ আছে। আমি লিখেছি, ‘প্রথম দিকে পুতুলনাচের ইতিকথা প্রভৃতি কয়েকখানা বই লিখতে মেতে গিয়ে যখন আমি নিজেও ভুলে গিয়েছিলাম যে আমার একটা শরীর আছে এবং পরিবারের মানুষরাও নিষ্ঠুরভাবে উদাসীন হয়ে গিয়েছিলেন, তখন একদিন হঠাৎ আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। এক মাস থেকে দু-তিন মাস অন্তর এটা ঘটতে থাকে। তখন আমার বয়স ২৮/২৯, ৪/৫ বছরের প্রাণান্তকর সাহিত্য সাধনা হয়ে গেছে।’ এ ছাড়া ১৯৩৭ সালে বড়দা সুধাংশুকুমারের কাছে লেখা এক চিঠিতে আমি লিখেছি, ‘আমি প্রায় দুই মাস হইল মাথার অসুখে ভুগিতেছি, মাঝে মাঝে অজ্ঞান হইয়া যাই। এ পর্যন্ত নানাভাবে চিকিৎসা হইয়াছে কিন্তু সাময়িকভাবে একটু উপকার হইলেও আসল অসুখ সারে নাই। কয়েকজন বড় বড় ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করিয়া আমি বুঝিতে পারিয়াছি কেবল ডাক্তারি চিকিৎসার উপর নির্ভর করিয়া থাকিলে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করা সম্ভব হইবে কিনা সন্দেহ। ...আমার যতদূর বিশ্বাস, সাহিত্যক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি নাম করিবার জন্য স্বাস্থ্যকে সম্পূর্ণ অবহেলা করাই আমার এই অসুখের কারণ। এক বৎসর চেষ্টা করিয়া যদি আরোগ্য লাভ না করিতে পারি তাহা হইলে বুঝিতে পারিব আমার যে অত্যন্ত উচ্চ ধসনরঃরড়হ ছিল তাহা সম্পূর্ণরূপে সফল করিতে পারিব না। আংশিক সাফল্য লইয়াই সাধারণভাবে আমাকে জীবন কাটাইতে হইবে।’

১৯৩৫ সালের মে মাসে (জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৩ বঙ্গাব্দ) গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্স প্রকাশ করে সাড়া জাগানো উপন্যাস ‘পদ্মা নদীর মাঝি’। প্রকাশকালে এ উপন্যাসটি মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ২০৮ এবং এর মূল্য ছিল মাত্র দেড় টাকা। গবেষকদের মতে, বাংলা সাহিত্যে এটিই জেলেদের নিয়ে প্রথম উপন্যাস। সরোজমোহন মিত্রর ‘পদ্মা নদীর জেলেজীবন ও ময়নাদ্বীপ’ লেখাটিতে প্রকাশ করা হয়, “এ উপন্যাস লেখার আগে মানিক অনেক দিন জেলেদের সাথে জীবন কাটিয়েছেন, অন্তরঙ্গভাবে তিনি তাদের সঙ্গে মিশেছেন এবং সত্যিকার অর্থে তাদের ভালোবেসেছেন।” সরোজমোহনের ভাষায়, এই উপন্যাস আমার এক শ্রেষ্ঠ কীর্তি। কেবল তাই নয়, তিনি মনে করেন, বিশ্বসাহিত্যে এ উপন্যাসের স্থান অনবদ্য। উপন্যাসটি ইংরেজিতে অনুবাদ হয়েছে Boatman of the Padma নামে। এমনকি আরো বেশ কয়েকটি ভাষাতেও পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাস অনূদিত হয়েছে। সাহিত্যিক, অধ্যাপক পিয়ের ফালোঁ এস. জে. তাঁর এক অভিজ্ঞতার বর্ণনা লিখেছিলেন, “প্রায় কুড়ি বছর আগে, আমি যখন বাংলা শিখতে চেষ্টা করি, তখন স্বভাবতই বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র নিয়ে আরম্ভ করেছিলাম। বিভূতিভূষণের ‘পথের পাঁচালী’ও আমি তখন পড়েছিলাম, এঁদের সকলের রচনা আমাকে মুগ্ধ করেছিল, এঁদের কবিত্বময় আদর্শবাদিতা ও রোমান্টিক ভাবধারা আমার মনকে বিশেষ করে নাড়াও দিয়েছিল। তবু আমার মনে কী একটা অভাব ও কৌতূহল তখনো পূর্ণ হয়নি। এ সময়ে একদিন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ আমার হাতে পড়ে। আজও মনে আছে, সেদিন প্রাণে একটা রূঢ় আঘাত পেয়েছিলাম। পল্লীজীবনের সেই মাধুর্যপূর্ণ ও ভাবমূর্তি চিত্র আর নয়—  এখানে পেলাম বাংলার সাধারণ মানুষের দারিদ্র্য-লাঞ্ছিত জীবনের একটি বাস্তব ছবি, যে ছবির আতিশয্যহীন ও মর্মস্পর্শী পরিচয় আমার দেশের লোকের কাছে, আমার ভাষাভাষীদের কাছে দেওয়ার জন্য আমি ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলাম। পড়া শেষ করেই সে রাত্রেই বইখানির কয়েকটি জায়গা ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করে ফেললাম। আমার এক ভাইকে সেই অনুবাদ পাঠিয়ে মানিকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম।”

উপন্যাসে জেলেদের সম্পর্কে আমি লিখেছি : “দিবারাত্রি কোনো সময়েই মাছ ধরিবার কামাই নাই। সন্ধ্যার সময় জাহাজঘাটে দাঁড়াইলে দেখা যায় নদীর বুকে শত শত আলো অনির্বাণ জোনাকির মতো ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। জেলে নৌকার আলো ওগুলি। সমস্ত রাত্রি আলোগুলি এমনিভাবে নদীবক্ষের রহস্যময় ম্লান অন্ধকারে দুর্বোধ্য সঙ্কেতের মতো সঞ্চালিত হয়। এক সময় মাঝরাত্রি পার হইয়া যায়। শহরে, গ্রামে, রেলস্টেশনে ও জাহাজঘাটে শান্ত মানুষ চোখ বুজিয়া ঘুমাইয়া পড়ে। শেষরাত্রে ভাঙা-ভাঙা মেঘে ঢাকা আকাশে ক্ষীণ চাঁদটি ওঠে। জেলে নৌকার আলোগুলি তখনো নেভে না। নৌকার খোল ভরিয়া জমিতে থাকে মৃত সাদা ইলিশ মাছ। লন্ঠনের আলোয় মাছের আঁশ চকচক করে, মাছে নিষ্পলক চোখগুলিকে স্বচ্ছ নীলাভ মণির মতো দেখায়।” আমার ভাষায়, এই জেলেরা গরিবের মধ্যে গরিব, ছোটলোকের মধ্যে আরো বেশি ছোটলোক।

উপন্যাসটি মূলত গড়ে উঠেছে পদ্মাপাড়ে বসবাসকারী জেলেদের জীবনকে ঘিরে। এটি সম্পর্কে আবু হেনা মোস্তফা কামাল তাঁর ‘পদ্মা নদীর দ্বিতীয় মাঝি’ প্রবন্ধে লিখেছেন, “পূর্ব বাংলার মাঝিদের সঙ্গে জীবন-যাপনের দুঃসাহস মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছিলো। অতএব কল্পনার বদলে প্রত্যক্ষ বাস্তবের অন্তরঙ্গ বিবরণ এসেছে সহজেই। ছোটগল্পের বদলে এবার একটি গোটা উপন্যাস গড়ে উঠলো—পদ্মাপাড়ের ধীবরপল্লী কেতুপুর গ্রাম—আর সেই পল্লীর নর-নারীর প্রাত্যহিক জীবনচর্যার কাহিনী নিয়ে। সেই উপাখ্যানই পদ্মানদীর মাঝি।” তাঁর ভাষ্য মতে, “সমাজ-বিজ্ঞানের ছাত্র এই গ্রন্থকে বাংলাদেশের একটি বিশেষ অর্থনৈতিক স্তরের জীবনযাপনের প্রামাণ্য দলিল বলে নির্ভর করতে পারেন। সর্বোচ্চ প্রলোভনেও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় যে সত্যকে ভাবালুতার কাছে বিকিয়ে দিতে পারেন না তার প্রমাণ, এই গ্রন্থের কোথাও আতিশয্য নেই, অতিরঞ্জন নেই— দুঃখকে তিনি যেমন অকারণে বাড়িয়ে দেখেননি, সুখকে তেমনি দেননি অপ্রাপ্য মহিমা—শিল্পের চেয়ে জীবনই তাঁর কাছে গভীরতর সত্য। পদ্মা নদীর মাঝি সম্পর্কে এ মন্তব্য সর্বদাই প্রযোজ্য বলে মনে করি। সে জন্যই এ-গ্রন্থে শিল্পের কারুকাজের আড়ালে জীবনের এতো বিশ্বাসযোগ্য ছবি ফুটে ওঠে।”

সাতটি পরিচ্ছদে বিন্যস্ত এ উপন্যাসটির কাহিনী এ রকম : কেন্দ্রীয় চরিত্র কুবের মাঝি তার পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করে পদ্মা তরবর্তী কেতুপুর গ্রামের জেলেপাড়ায়। তার স্ত্রী মালা আজন্ম পঙ্গু। তাদের দুই সন্তান, মেয়ে গোপী ও ছেলে বঙ্কু। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি কুবের নিজেই। কুবেরের স্বভাব একরোখা, সরল, সাধারণ। তার নিজের কোনো নৌকা নেই। অন্যের নৌকায় কাজ করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোনো একরকমভাবে জীবনযাপন করে সে। সংসারে সুখ-সাচ্ছন্দ্য-সচ্ছলতা সে চায়, কিন্তু নিরুপায় কুবের তা করে উঠতে পারে না। এই কুবেরের মতো জীবন পার করে কেতুপুরের গণেশ, নকুল, হীরু, আমিনুদ্দি, রাসু, সিধু, মুরারি, অনুকূলসহ আরো অনেকে।

আমি লিখছি, “দিন কাটিয়া যায়। জীবন অতিবাহিত হয়। ঋতুচক্রে সময় পাক খায়, পদ্মার ভাঙন ধরা তীরে মাটি ধসিতে থাকে, পদ্মার বুকে জল ভেদ করিয়া জাগিয়া উঠে চর, অর্ধ-শতাব্দীর বিস্তীর্ণ চর পদ্মার জলে আবার বিলীন হইয়া যায়। জেলেপাড়ার ঘরে ঘরে শিশুর ক্রন্দন কোনোদিন বন্ধ হয় না। ক্ষুধাতৃষ্ণার দেবতা, হাসিকান্নার দেবতা, অন্ধকার আত্মার দেবতা, ইহাদের পূজা কোনোদিন সাঙ্গ হয় না। এদিকে গ্রামের ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণতর ভদ্র মানুষগুলি তাহাদের দূরে ঠেলিয়া রাখে, ওদিকে প্রকৃতির কালবৈশাখী তাহাদের ধ্বংস করিতে চায়, বর্ষার জল ঘরে ঢোকে, শীতের আঘাত হাড়ে গিয়া বাজে কনকন। আসে রোগ, আসে শোক। টিকিয়া থাকার নির্মম অনমনীয় প্রয়োজনে নিজেদের মধ্যে রেষারেষি কাড়াকাড়ি করিয়া তাহারা হয়রান হয়। জন্মের অভ্যর্থনা এখানে গম্ভীর, নিরুৎসব, বিষণ্ণ। জীবনের স্বাদ এখানে শুধু ক্ষুধা ও পিপাসায়, কাম ও মমতায়, স্বার্থ ও সঙ্কীর্ণতায়। ...ঈশ্বর থাকেন ওই গ্রামে, ভদ্রপল্লীতে। এখানে তাঁহাদের খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।”

এ উপন্যাসের মূল গল্প এগিয়ে গেছে কুবের ও কপিলাকে ঘিরেই। কপিলা হলো কুবেরের স্ত্রী মালার বোন। সে আকুরটাকুর গ্রামের শ্যামদাসের স্ত্রী। শ্যামদাস আবার বিয়ে করে ঘরে নতুন বউ তুলে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কপিলা বাবার বাড়ি চরডাঙায় চলে যায়। একসময় বন্যা-কবলিত চরডাঙা থেকে কুবেরের সঙ্গে কেতুপুরে চলে আসে কপিলা। এই কপিলার প্রতি বিভিন্ন কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে কুবের। কপিলা অবাধ্য কঞ্চির মতো দুরন্ত, রহস্যময়ী ও ছলনাময়ী। অন্যদিকে কুবের স্ত্রী মালা পঙ্গু, অচল ও রহস্যহীন। গিয়াস শামীম তাঁর ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি : কেতুপুরের মহাকাব্য’ প্রবন্ধে এ বিষয়টি বিশ্লেষণ করেছে এভাবে : “মালাকে কুবের সহজে আয়ত্ত করতে পারে, কিন্তু কপিলাকে আয়ত্ত করা কঠিন। এসব কারণে আপাত দুর্বোধ্য কপিলার প্রতি কুবেরের মনোজাগতিক আকর্ষণ অন্তহীন।”

এ উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র হোসেন মিয়া। ভাগ্য বদলের আশায় এই হোসেন মিয়া নোয়াখালী থেকে কেতুপুরে আসে। হোসেন মিয়া বুদ্ধিমান, চতুর ও কৌশলী, সেই সাথে সে সম্পদশালী ও ক্ষমতাবান মানুষও। তাই অল্প দিনেই সে কেতুপুরে নিজের অবস্থান গড়ে তোলে। তার অর্থ উপার্জনের উৎস কেতুপুরবাসীর কাছে রহস্যময় ও দুর্বোধ্য লাগে। একসময় সমুদ্রের মধ্যে, অর্থাৎ নোয়াখালীর সন্দ্বীপ হাতিয়ার দ্বীপের অনেক দূরে একটি জঙ্গলাকীর্ণ ময়নাদ্বীপ নামে একটি জায়গা সস্তায় কিনে নেয়। সেখানেই হোসেন গড়ে তোলে তার নিজস্ব জগৎ। দুর্গম এ দ্বীপে চাষাবাদ করার জন্য হোসেন মিয়া দরিদ্র-অসহায় মানুষদের প্রলোভন দেখায়। নিজের গড়া দ্বীপ নিয়ে হোসেন স্বপ্নের কথা জানায় এভাবে : “কত উপকার যে হোসেন তাদের করিয়াছে, তার হিসাব হয় না। আমিনুদ্দী অপরিশোধ্য আর্থিক ঋণে শুধু আবদ্ধ না, হোসেন না দিলে এই জীবনে স্ত্রী কি আর তাহার জুটিত—নসিবনের মত স্ত্রী? রসুলকে জেলের দুয়ার হইতে ছিনাইয়া নিয়া আসিয়াছে হোসেন, দেশে ফিরিলে জেলেই হয়তো তাহাকে ঢুকিতে হইবে। প্রতিদানে হোসেন আর কিছু তাহাদের কাছে চায় না। তারা শুধু সেখানে বাস করুক, স্বপ্ন সফল হোক হোসেনের। ইতিমধ্যে তাদের জন্যে ঘর উঠিতে আরম্ভ হইয়াছে। দয়া করিয়া ওই ঘরে তারা নীড় বাঁধিলে কৃতার্থ হইয়া যাইবে হোসেন। জঙ্গল কাটিয়া যত জমি তারা চাষের উপযোগী করিতে পারিবে সব তাদের সম্পত্তি, খাজনা বা চায়ের ফল কিছুই হোসেন দাবি করিবে না। নিজেদের জীববিকা তাহারা যতদিন নিজেরাই অর্জন করিতে পারিবে না, জীবিকা পর্যন্ত জোগাইবে হোসেন। গৃহ ও নারী, অন্ন ও বস্ত্র, ভূমি ও স্বত্ব সবই তো পাইলে তুমি, এবার খাটিবে ও জন্ম দিবে সন্তানের, এটুকু পারিবে না?’

এ ছাড়া কেতুপুরবাসী যখন বঞ্চনা-শোষণ-নির্যাতনে জর্জরিত হয়ে একেবারে নিঃস্ব, সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়ে, তখন হোসেন মিয়াই হয়ে ওঠে তাদের একমাত্র অবলম্বন, আশ্রয়দাতা। আর সেইসব দুর্ভাগা মানুষদের ঠাঁই হয় রহস্যময় ময়নাদ্বীপে। হোসেন মিয়া সম্পর্কে সরোজমোহন মিত্রের বক্তব্য হলো : “এই জেলে সমাজে যেমন কুবের আছে, তেমনি আছে হোসেন মিয়া। হোসেন মিয়াকে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রহস্যময় বললেও তাকে কেন্দ্র করে যত বিতর্ক। এই উপন্যাসে হোসেন মিয়া একজন নিপুণ দক্ষ মাঝি এবং নানা উপায়ে সে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে। এখন তার পরিচয় যাই হোক না কেন, সে এক সময় ছিল এক গরিব মাঝি। সে যখন প্রথম এ কেতুপুরে বাস করতে আসে তখন তার ছিল ছেড়া লুঙ্গি, মাথায় রুক্ষ চুল, আর খড়ি-ওঠা শরীর। সে মাত্র কয়েক বছর আগে এসে প্রথম জহর মাঝির নৌকায় বৈঠা বাইত। মূল বাড়ি ছিল নোয়াখালিতে। প্রথমে জাহাজের খালাসির কাজ করত। পরে হোসেন মিয়াই এই উপন্যাসের প্রধান পরিচালক হয়ে ওঠে। অবশ্য কেতুপুর গ্রামে জেলেদের কাছে এই হোসেন মিয়া এবং তার সৃষ্টি ময়নাদ্বীপ ছিলএক আতঙ্ক। এই গ্রামেরই রাসু ময়নাদ্বীপ গিয়েছিল, তার স্ত্রী-পুত্র নিয়ে। কিন্তু সকলকে হারিয়ে একাই পালিয়ে এসেছে এবং সে যে বর্ণনা দিয়েছে তা ভয়ংকর। এ নিয়ে সে গ্রামে রাত্রে এক বিচারসভাও বসে। রাসুর এই সর্বনাশ করার জন্যে হোসেন মিয়ার বিরুদ্ধে সকলের ক্রোধ ঘনীভূত হয়। কিন্তু আশ্চর্য সে বিচারসভায় মুখ্য ব্যক্তি হোসেনই। সভা শেষে হোসেন রাসুকে বলল, ‘বিয়ানে একবার বাড়িতে যাইয়ো রাসু বাই, পয়সা কড়ি পাইবা মালুম হয়। নিকাশ নিয়া খারিজ দিমু। ময়না দ্বীপির জমিন না নিলি জঙ্গল কাটনে মজুরি দিই, খাওন-পরন বাদ।’ এতে বোঝা যায়, হোসেন মিয়া আসলে ঠগ নয়, সে কাউকে জোর করে ময়নাদ্বীপে নেয় না। ‘কোন হালারে আমি জবরদস্ত ময়না দ্বীপি নিছি, আপনা খুশিতে গেছিলা, ঝুট না কলি মানবা রাসু বাই।’”

রহস্যময় এই ময়নাদ্বীপকে নিয়েই যত বিতর্ক। নোয়াখালীর এক গরিব মাঝি বিশ বছর আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে মাঝি হিসেবে নানা কাজ করেছে। তার অনেক অভিজ্ঞতা। তার অন্য গুণও আছে। সে ভালো গান বাঁধতে পারে ও গাইতে পারে। অথচ সে যখন কেতুপুরে আসে, প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করেছে। সেই হিসেবে হোসেন যথার্থই বড়োলোক। কিন্তু তার জীবনে মাঝিত্ব খসে যায়নি। সে কেতুপুরের গরিব মাঝিদের বাড়িতে অবসর কাটায়। এমনকি ক্লান্তাবস্থায় সে তার ব্যাগ ভর্তি টাকা নিয়ে কুবেরের বাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়ে। সে নিজেকে মাঝি বলেই মনে করে। তার ব্যবহারও বড় অমায়িক। তার শরীরে কোনো রাগ নেই। জেলেপাড়ার সকলেই তার মিত্র। সে জেলেপাড়ায় বাড়ির ভিতর গিয়ে জেকে বসতে পারে। কুবেরের ঘরের চালের দৈন্যদশা দেখে না চাইতেই ঘর ছাইবার জন্যে বিনামূল্যে শন দিয়ে দেয়।

আশ্বিনের প্রবল ঝড়ে জেলেপাড়ায় অর্ধেক কুটিরের চালা ভেঙে পড়েছিল। সে মানুষদের আর্তহাহাকারে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল হোসেন মিয়া। এই বিপদের দিনে গ্রামের অনন্ত তালুকদারও এসেছিলেন, তিনি সভা করে ক্ষতিগ্রস্ত দুস্থদের জন্য চাঁদা তোলার ব্যবস্থা করছিলেন। নিজে দান করলেন দশ টাকা আর গ্রাম থেকে আরো পনেরো টাকা উঠল। তার মধ্যে গ্রামের নন্দ ভট্টাচার্যকেই দেওয়া হলো সাত টাকা, আর জেলেপাড়ায় দু টাকা করে পাঁচজনকে। বাকি টাকা ফান্ডে জমা রাখলেন। কিন্তু হোসেন মিয়া এসে বললেন—‘না টাকা কর্জ দিমু না, ছন দিমু, বাঁশ দিমু, নিজে খাড়াইয়া তোমাগো ঘর তুইল্যা দিমু—শ্যাষে নিকাশ নিয়া খত লিখুম, একটা কইরা টিপ দিবা।’ আরো স্পষ্ট করে বলল, ‘টিপসই দিয়া রাখ, যখন পরবা দিবা, না দিলি মামলা করুম না বাই। ‘তোমাগো দরদ করি খত কিসির? লিখা থুইলাম তোমার হিসাব থাকব, না তো কিসির কাম খত দিয়া।’

কোনো এক আশ্বিনের ঝড়ে কুবেরের মেয়ে গোপীর পা ভেঙে যায়। কেতুপুরের ত্রাণকর্তা হোসেন মিয়ার পরামর্শে সুচিকিৎসার জন্য কুবের ও কপিলা তাকে নিয়ে যায় মহকুমা শহর আমিনবাড়ির সরকারি হাসপাতালে। সেখানে পয়সা বাঁচানোর লক্ষ্যে হোটেলের এক ঘরে রাতযাপন করে কুবের ও কপিলা। এমন নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে এ দুজনের সম্পর্ক। এর মধ্যেই অর্থের অভাবে হোসেন মিয়ার নৌকায় কাজ নেয় কুবের। হোসেন মিয়ার গোপন অর্থের উৎস মাদক-পাচার সাথে যুক্ত হয় সে। এই হোসেন মিয়ার সাথে কাজ করার সুবাদে নতুন ঘর তুলে কুবের। অভাব-অনটন কেটে আর্থিক সচ্ছলতা আসে তার। এর মধ্যে কেতুপুরের পীতম মাঝির মাঝির বাড়ি থেকে তার সারাজীবনের সঞ্চয় সাত কুড়ি তেরো টাকা ভর্তি ঘটিটি চুরি হয়। এ ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় গোটা জেলেপাড়ায়। এদিকে রহস্যজনকভাবে পীতমের চুরি যাওয়া ঘটিটি পাওয়া যায় কুবেরের ঢেঁকিঘরের পাটখড়ির বোঝার তলে। পুলিশ সেটি উদ্ধার করে। এতে চুরির দায়ে অভিযুক্ত হয় নিরপরাধ কুবের। সন্ধ্যার আলো-অন্ধকারময় পরিবেশে এই খবর নিয়ে পদ্মার পাড়ে অপেক্ষা করতে থাকে কপিলা। তারপর কুবের ও কপিলা ঘাটে-বাঁধা হোসেন মিয়ার নৌকায় উঠে পড়ে। একসময় দুজনে যাত্রা করে রহস্যময় সেই ময়না দ্বীপের উদ্দেশে। একটু রহস্যের মধ্য দিয়ে শেষ করি উপন্যাসটি : “তামাক শেষ করিয়া হোসেন উঠিল। বাইরের একটা ঘরে সাতজন মুসলমান মাঝি ঘুমাইয়া ছিল, তাদের মধ্যে পাঁচজনকে সঙ্গে করিয়া সকলে নদীঘাটের দিকে চলিল। কুবের ও কপিলা চলতে লাগিল সকলের পিছনে।”

কপিলা চুপিচুপি করে, ‘না গেলা মাঝি, জেল খাট।’

কুবের বলে, ‘হোসেন মিয়া দ্বীপি আমারে নিবই কপিলা। একবার জেল খাইটা পার পামু না। ফিরা আবার জেল খাটাইব।’

কপিলা আর কথা বলে না।

ঘাটের খানিক তফাতে হোসেনের প্রকাণ্ড নৌকাটি নোঙর করা ছিল। একজন মাঝি ঘুমাইয়া ছিল নৌকায়। তাকে ডাকিয়া তুলিলে সে নৌকা তীরে ভিড়াইল। কুবের নীরবে নৌকায় উঠিয়া গেল। সঙ্গে গেল কপিলা।

ছইয়ের মধ্যে গিয়া সে বসিল। কুবেরকে ডাকিয়া বলিল, ‘আমারে নিবা মাঝি লগে?’

হ, কপিলা চলুক সঙ্গে। এক অতদূরে কুবের পাড়ি দিতে পারব না।” এভাবেই ইতি টানি আমি আমার পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসটি।

(চলবে)

পাঠকের পছন্দ

গরমে ঘামাচিতে জেরবার?

ভ্রমণের সময় যা মনে রাখবেন

কীভাবে হবেন ভালো সহকর্মী?

সর্বাধিক পঠিত
  1. অক্ষয়ের মামলা, সুদসহ টাকা ফেরত দিয়ে ‘হেরা ফেরি ৩’ ছাড়ালেন পরেশ রাওয়াল
  2. শুধু অভিনেতা নন, পেশাদার পাইলটও ছিলেন মুকুল দেব
  3. বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই ঘরবন্দি ছিলেন মুকুল দেব
  4. পরেশ রাওয়ালের বিরুদ্ধে ২৫ কোটির মামলা ঠুকলেন অক্ষয় কুমার
  5. টিজারেই ঝড় তুলল ‘ওয়ার ২’, মুক্তির তারিখ ঘোষণা
  6. বিয়ে নয়, এবার ‘লিভ ইন’ করতে চান সামান্থা!
সর্বাধিক পঠিত

অক্ষয়ের মামলা, সুদসহ টাকা ফেরত দিয়ে ‘হেরা ফেরি ৩’ ছাড়ালেন পরেশ রাওয়াল

শুধু অভিনেতা নন, পেশাদার পাইলটও ছিলেন মুকুল দেব

বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই ঘরবন্দি ছিলেন মুকুল দেব

পরেশ রাওয়ালের বিরুদ্ধে ২৫ কোটির মামলা ঠুকলেন অক্ষয় কুমার

টিজারেই ঝড় তুলল ‘ওয়ার ২’, মুক্তির তারিখ ঘোষণা

ভিডিও
কনকা সেরা পরিবার, সিজন ০৩, পর্ব : ১২
এই সময় : পর্ব ৩৮২০
এই সময় : পর্ব ৩৮২০
ফাউল জামাই : পর্ব ৯৫
ছাত্রাবাঁশ : পর্ব ০৮
মিউজিক নাইট : পর্ব ১৯৫
মিউজিক নাইট : পর্ব ১৯৫
ছুটির দিনের গান : পর্ব ৪১৫ (সরাসরি)
ছুটির দিনের গান : পর্ব ৪১৫ (সরাসরি)
আলোকপাত : পর্ব ৭৭৫
গানের বাজার, পর্ব ২৩৩
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৫০
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৫০
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১

Alhaj Mohammad Mosaddak Ali

Chairman

NTV Online, BSEC Building (Level-8), 102 Kazi Nazrul Islam Avenue, Karwan Bazar, Dhaka-1215 Telephone: +880255012281 up to 5, Fax: +880255012286 up to 7

Alhaj Mohammad Mosaddak Ali

Chairman

NTV Online, BSEC Building (Level-8), 102 Kazi Nazrul Islam Avenue, Karwan Bazar, Dhaka-1215 Telephone: +880255012281 up to 5, Fax: +880255012286 up to 7

Browse by Category

  • About NTV
  • Career
  • NTV Programmes
  • Advertisement
  • Web Mail
  • NTV FTP
  • Satellite Downlink
  • Europe Subscription
  • USA Subscription
  • Privacy Policy
  • Terms & Conditions
  • Contact
  • Archive

NTV Prime Android App

Find out more about our NTV: Latest Bangla News, Infotainment, Online & Live TV

Qries

Reproduction of any content, news or article published on this website is strictly prohibited. All rights reserved

x