জন্মশতবর্ষ
সাধারণ নাগরিকের কণ্ঠস্বর আর্থার মিলার

বিংশ শতাব্দীতে যুক্তরাষ্ট্রের মঞ্চ কাঁপিয়েছেন যে নাট্যকার তিনি আর্থার মিলার। শক্তশালী ও বক্তব্যধর্মী গল্প এবং সংলাপের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন মিলার। ১৯১৫ সালের আজকের দিনে (১৭ অক্টোবর) নিউ ইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মিলার। সেই হিসাবে মিলারের শতবর্ষ পূর্ণ হলো আজ। ১০ বছর আগে ২০০৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে মারা যান মিলার।
আর্থার মিলারের নাটকের মতো পারিবারিক গল্প, রাজনৈতিক সচেতনতা ও হতাশাগ্রস্ত সময়ের বক্তব্য উঠে এসেছে বার বার। মিলারের মায়ের ছিল পোশাক তৈরির কারখানা, বাবাও ছিলেন ব্যবসায়ী। কিন্তু ১৯৩০-এর অর্থনৈতিক মহামন্দার কারণে মিলারদের পরিবার সবকিছু হারায়। আর তখন থেকেই দারিদ্র্যের সাথে মিলারের পরিচয়।
অভাব অনটন মিলারের ব্যক্তিজীবন এবং লেখালেখিকে প্রভাবিত করেছে। হতাশা উঠে এসেছে তাঁর লেখা নাটকগুলোর চরিত্রে। স্কুল পাস করে কিছুদিন একটি গুদামে কাজ করেন মিলার। এরপর টাকা জমিয়ে ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানে। সেখান থেকে তাঁর নাটক লেখার শুরু।
আর্থার মিলারের লেখা প্রথম নাটক ‘দ্য ম্যান হু হ্যাড অল দ্য লাক’ ব্রডওয়েতে মঞ্চস্থ হয় ১৯৪৪ সালে। কিন্তু মিলারের প্রথম নাটক সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হয়। দর্শকের অভাবে মাত্র চার সপ্তাহ পরই ব্রডওয়ে থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় নাটকটি। প্রথম নাটকের ব্যর্থতার কারণে বেশ হতাশ হয়ে পড়েন মিলার। লেখালেখি থেকে সরে যান।
তিন বছর পর আরেকবার নিজের লেখা নিয়ে চেষ্টা করেন মিলার। ‘অল মাই সন্স’ নিয়ে ফিরে আসেন মঞ্চে। ১৯৪৭ সালে নিউইয়র্ক ড্রামা ক্রিটিকস সার্কেল অ্যাওয়ার্ডে সেরা নাটকের পুরস্কার পায় মিলারের এই নাটক। ত্রুটিপুর্ণ যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণের একটি কারখানাকে ভিত্তি করে তৈরি হয় নাটকটির গল্প। এই নাটক লেখার ক্ষেত্রে হেনরিক ইবসেনের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন মিলার।
এরপর ১৯৪৯ সালে মঞ্চস্থ হয় মিলারের সবচেয়ে জনপ্রিয় নাটক ‘ডেথ অব এ সেলসম্যান’। মিলারের প্রথম তিনটি নাটকে একটা বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। সব নাটকেই বাবা এবং ছেলের সম্পর্ককে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এজন্য মিলারের এই তিন নাটককে বলা হয় ‘থিমেটিক ট্রিলোজি’।
পরিবারের গল্প মিলারের নাটকে বারবার এসেছে। ‘ডেথ অব এ সেলসম্যান’ নাটকের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিলেন মিলার। জনপ্রিয়তার কারণে নাটকের গল্পটি নিয়ে চলচ্চিত্র, টিভি সিরিজও নির্মিত হয়।
‘ডেথ অব এ সেলসম্যান’-এর সাফল্যের পর ১৯৫৩ সালে মিলার লেখেন তাঁর রাজনৈতিক নাটক ‘দ্য ক্রুসিবল’ । ১৯৫০-এর দশকের কমিউনিস্ট-বিরোধী আমেরিকার প্রেক্ষাপটে লেখা হয় নাটকটি। আমেরিকাজুড়ে বিভিন্ন সময়ে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়।
‘দ্য ক্রুসিবল’ নাটকের জন্য ১৯৫৬ সালে জেরার মুখে পড়তে হয় আর্থার মিলারকে। আদালত অবমাননার অভিযোগও আনা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। পরে অবশ্য আপিল করার সুযোগ পান তিনি। একই বছর ১৯৫৬ সালে অভিনেত্রী মেরেলিন মনরোকে বিয়ে করেন মিলার। ছয় বছর পর ১৯৬১ সালে বিচ্ছেদ ঘটে তাঁদের। সেই বছরই নিজের শেষ ছবিতে অভিনয় করেন মনরো, যার চিত্রনাট্য লিখেছিলেন আর্থার মিলার। পরের বছর ১৯৬২ সালে নিজের ফ্ল্যাট থেকে মনরোর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
মিলারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে রয়েছে আফটার দ্য ফল (১৯৬৪), দ্য প্রাইস (১৯৬৭), দ্য আর্চবিশপস সিলিং (১৯৭৭), দ্য আমেরিকান ক্লক (১৯৮০), দ্য রাইড ডাউন মাউন্ট মরগ্যান (১৯৯১), দ্য লাস্ট ইয়াংকি (১৯৯৩), দ্য ব্রোকেন গ্লাস (১৯৯৩)।
মূলত মঞ্চের জন্য লেখালেখি করলেও আর্থার মিলারের গল্প নিয়ে সিনেমাও হয়েছে। ১৯৯৬ সালে তাঁর নাটক ‘দ্য ক্রুসিবল’-এর গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য চিত্রনাট্য লেখার কাজে হাত দেন মিলার। ‘দ্য ক্রুসিবল’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন ড্যানিয়েল ডে-লুইস এবং উইনোনা রাইডার। এই ছবির জন্য অস্কারে সেরা চিত্রনাট্যের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি।