আগামীকাল শুরু হচ্ছে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা

১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় মাসব্যাপী ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৬’ উদ্বোধন হবে। এবারের বইমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি প্রফেসর ইমেরিটাস আনিসুজ্জামান।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন ব্রিটিশ কবি ও জীবনানন্দ অনুবাদক জো উইন্টার, চেক প্রজাতন্ত্রের লেখক-গবেষক রিবেক মার্টিন, আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সমিতির (আইপিএ) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রিচার্ড ডেনিস পল শার্কিন, জোসেফ ফেলিঙ্ বুরঘিনো প্রমুখ।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করবেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং নজরুলসংগীত পরিবেশন করবেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পৌত্রী অনিন্দিতা কাজী।
‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৫’ প্রদান
গ্রন্থমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৫ প্রদান করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘আধুনিক বাংলা অভিধান’ শিরোনামের একটি নতুন অভিধান তুলে দেওয়া হবে।
এবারের গ্রন্থমেলার থিম
মহান ভাষা আন্দোলনের চেতনায় ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর বাংলা একাডেমি পূর্ণ করেছে তার ঐতিহ্য ও গৌরবের হীরকজয়ন্তী। তাই এবারের গ্রন্থমেলার মূল থিম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী’।
মেলার মূল মঞ্চে আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব
অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে ৩ ফেব্রুয়ারি দুটি অধিবেশনে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তন ও মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব। এতে বাংলা ও বিশ্বকবিতা বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি স্লোভাকিয়া, মরক্কো, সুইডেন, তাইওয়ান, যুক্তরাজ্য, ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রজন্মের কবিরা কবিতা পাঠ করবেন।
মেলায় স্টল ও অন্যান্য
৯২টি লিটল ম্যাগাজিনকে বর্ধমান হাউসের দক্ষিণ পাশে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগে যাঁরা বই প্রকাশ করেছেন, তাঁদের বই বিক্রি ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বই ৩০ শতাংশ কমিশনে এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে।
একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলা একাডেমির দুটি প্যাভিলিয়ন, একাডেমি প্রকাশিত অভিধান বিক্রয়কেন্দ্র, একাডেমির শিশু-কিশোর প্রকাশনাভিত্তিক বিক্রয়কেন্দ্র এবং একাডেমির সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকার-এর বিক্রয়কেন্দ্র থাকবে।
প্রকাশনা অনুষ্ঠান ও তথ্যকেন্দ্র
একাডেমির নজরুল মঞ্চে ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৬-এর প্রচার কার্যক্রমের জন্য তথ্যকেন্দ্র থাকবে বর্ধমান ভবন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
বাংলা একাডেমির অন্যান্য অনুষ্ঠান
২ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী উপলক্ষে একাডেমির ইতিহাস এবং বিভিন্ন গবেষণামূলক কর্মকাণ্ড, একুশে গ্রন্থমেলা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ঐতিহাসিক ছয় দফার সুবর্ণজয়ন্তী এবং শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি-সমকালীন প্রসঙ্গ ও বিশিষ্ট বাঙালি মনীষীর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
এ ছাড়া মাসব্যাপী প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৬ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।
গ্রন্থমেলা পুরস্কার
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০১৫ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০১৫ গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থ প্রকাশের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।
এ ছাড়া ২০১৫ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ-বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।
মেলায় প্রবেশ ও বাহির
গ্রন্থমেলায় টিএসসি, দোয়েল চত্বর দিয়ে দুটি মূল প্রবেশপথ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাহিরের আটটি পথ থাকবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের সুবিধার্থে একটি নতুন গেট নির্মাণ করা হয়েছে।
নিরাপত্তা
মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিরাপত্তাকর্মীরা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে দুই শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে।
মেলায় শিশুকর্নার
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে শিশু-কিশোর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। যেন বইমেলায় ক্রয়-বিক্রয়ের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে, সে জন্যই এই ব্যবস্থা। এই কর্নারকে শিশু-কিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবারও শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হবে।
গ্রন্থমেলার সময়সূচি
ছুটির দিন ছাড়া ১ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।