একুশে ফেব্রুয়ারিতে বইমেলায় ভিড়, বিক্রি কম

যে দিনটি স্মরণে অনুষ্ঠিত হয় মাসব্যাপী ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ গতকাল ছিল সেই মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। এইদিন সকাল ৮টা থেকেই খোলা ছিল বইমেলা। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদ মিনার থেকে সরাসরি অনেকেই এসেছেন বইমেলায়। সকালে কিছুটা ভিড় কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে মেলামুখী দর্শনার্থীর ভিড়। তখন মাত্র দুপুর গড়িয়েছে।
টিএসসি দিয়ে বইমেলার প্রবেশ পথের শুরু থেকেই দীর্ঘ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে হাজারো মানুষ। আবার হাজারো মানুষ লাইন ছেড়েই দলবেধে এগিয়ে যাচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে। সবার গন্তব্যই অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বাংলা একাডেমি চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা অংশে লোকে লোকারণ্য। কিন্তু সবাই যেন শুধু ছুটছেই মেলার এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে, বই নেই কারো হাতে। কোনো কোনো স্টলে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে কিছু ক্রেতা তার চেয়ে বেশি দর্শণার্থী।
অন্যদিকে অপরিকল্পিত স্টল বিন্যাসের কারণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা অংশের সেলিনা চত্বরের উত্তর পাশে এবং হুমায়ূন আহমেদ চত্বরে (পূর্ব-উত্তর) পাশের স্টলগুলোসহ গত ২০ দিনেও মেলার যে পাশগুলোতে তেমন লোক সমাগম ছিল না গতকাল সেদিকেও ছিল উপচেপড়া ভিড়।
যে একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে এই বইমেলা, লোক সমাগমও অনেক, বই বিক্রি কেমন হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে বেঙ্গল পালিকেশনস স্টলের দায়িত্বরত বিক্রয়কর্মী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শুধুই ভিড় বই বিক্রি নেই। বাংলা একাডেমির নির্বুদ্ধিতায় অপরিকল্পিত স্টল বিন্যাসের কারণে এই পাশে লোকজন এমনিতেই কম আসে। আজ লোক সমাগম বেশি তাই ওই পাশে সব দাঁড়াতে পারছে না বলে এদিকেও ভিড় দেখছেন। কিন্তু মানুষজন মনে হয় মেলা দেখতে এসেছে বই কিনতে না।’
ধানমণ্ডি থেকে দুই বাচ্চাকে নিয়ে মেলায় এসেছেন চাকরিজীবী রুবিনা হক। মেলা কেমন লাগছে, বই কিনেছেন কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘এমনিতে ভালোই লাগছে, বাচ্চাদের জন্য দুটো বই কিনেছি কিন্তু যে ভিড় আর মনে হয় কিনতে পারব না।’ কথা প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘দেখেন না এখানে সেখানে দাঁড়িয়ে সব সেলফি তুলতে ব্যস্ত। আমি বলছি না সবাই এইদিনেই বই কিনবে, কিন্তু দেখেন কজনের হাতে বই দেখছেন, মনে হয় শুধু শুধু ভিড় করার জন্য এরা এসেছে।’
ইত্যাদি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আদিত্ব্য অন্তর বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারিতে বই বিক্রি কম হয়, লোকজন ঘুরতে আসে। যে পরিমাণ মানুষ বইমেলায় আসে তার দশভাগও বই কিনে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘মেলায় যে পরিমাণে মানুষ আসে তার ২৫ ভাগ মানুষ যদি বই কিনত তাহলে প্রকাশকরা বই সরবরাহ করতে পারত না।’
আজ তো মেলায় অনেক লোক সমাগম, কেমন লাগছে আজকের মেলা? এমন প্রশ্নের জবাবে তরুণ কবি অহ নওরোজ বলেন, ‘মেলায় দর্শনার্থী বেশি, ক্রেতা ও পাঠক খুব কম।’
তাম্রলিপি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী এ কে এম তারিকুল ইসলাম রনি বলেন, ‘যে পরিমাণে লোকজন মেলায় প্রবেশ করেছে সেই পরিমাণ বিক্রি নেই। তবে তুলনামূলক ভাবে অন্য দিনেই ভালো বিক্রি হয়।’
মেলার প্রথম দিন থেকেই সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত আছেন এক অনলাইন নিউজ পোর্টালের সাংবাদিক সায়েম সাবু এবং বিভাষ দীক্ষিৎ বিপ্লব। তাঁদের কাছে আজকে মেলা কেমন লাগছে জানতে চাইলে জানান, শুধুই উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে, কিন্তু বই যে কজন কিনছে তা বলা খুব কঠিন।
প্রকাশনী সংস্থা ‘ঐতিহ্য’র বিক্রয়কর্মী আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, ‘যে পরিমাণ ভিড় সেই তুলনায় বিক্রি নেই। মানুষজন মনে হয় শুধু ঘুরতে আসছে।’
একুশের দিনের মেলা কেমন দেখছেন জানতে চাইলে আগামী প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মিতিয়া ওসমান বলেন, ‘ভিড় আছে কিন্তু সেই তুলনায় বই বিক্রি কম। প্রত্যেক একুশে ফেব্রুয়ারিতে মানুষজন মেলাতে ঘুরতে আসে।’
বাংলা একাডেমির তথ্যমতে ২১তম দিন পর্যন্ত মেলায় নতুন বই এসেছে ২৬০৬টি। সামনে আরো বই মেলায় আসবে। লিপইয়ার হওয়ায় এ বছর একদিন বেশি সময় পাবে অমর একুশে গ্রন্থমেলা।