রামাকিন
থাইল্যান্ডের রামায়ণ

পৌরাণিক মহাকাব্যগুলোর মাঝে অনেক সময়ই পাওয়া যায় বিস্ময়কর সব সাদৃশ্য। কাহিনী ভিন্ন অঞ্চলের, অথচ বিচিত্র কোনো কারণে চরিত্রদের নাম আর ঘটনাপ্রবাহে সামান্য কিছু পার্থক্য ছাড়া একটির সাথে আরেকটির মিল প্রায় হুবহু। থাই মহাকাব্য রামাকিন আর ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণের মধ্যে রয়েছে তেমনই বিস্ময়কর সাদৃশ্য।
থাই মহাকাব্য 'রামাকিন’ আর ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণ যেন একে অন্যের অনুরূপ। যদিও মহাকাব্য দুটির মধ্যে স্পষ্ট একটি পার্থক্য রয়েছে। রামায়ণ পৌরাণিক দেব-দেবী এবং মনুষ্য চরিত্রের সমন্বয়ে গড়া এক মহাকাব্য, অন্যদিকে রামাকিন থাইল্যান্ডের এক রাজ পরিবার এবং বৌদ্ধ ধর্মের পটভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত কাব্যগ্রন্থ।
রামায়ণের মতো একইভাবে রামাকিনও থাইল্যান্ডের নাট্য, সংগীত, নৃত্যকলা ও ছায়ানাট্যকে এখনো গভীরভাবে প্রভাবিত করে। মৌলিক গল্পটি রামায়ণের গল্পের সাথে মিলে যায় বহুলাংশে। রামাকিনের নায়ক রামা ও তার পত্নী সীতা বনবাসী হয়, তারপর সীতার অপহরণ ও মুক্তি, যুদ্ধে জয় দেবতা হনুমানের সহায়তায়- ঠিক যেমনটি দেখা যায় রামায়ণে।
রামায়ণের মূল চরিত্র 'রাম' দেবতা বিষ্ণুর অবতার। রামাকিনের মূল চরিত্র 'রামা' একজন থাই রাজপুত্র যে পূর্ব জন্মে 'বুদ্ধ' ছিলেন। রামায়ণে দৈত্য রাজা রাবণ ছিলেন ভয়ঙ্কর দানব, তবে রামাকিনের ‘রাবণ’- তশাকান চরিত্রটি ঠিক তেমন নয়! তশাকান ছিলেন সীতার প্রণয়াসক্ত, তিনি যুদ্ধ করেছিলেন প্রকৃত ভালোবাসার আবেগ তাড়িত হয়ে, অন্যদিকে রাবণ যুদ্ধ করেছিলেন পঙ্কিল অহংকার ও লোভের অনুভূতি নিয়ে।
পণ্ডিতরা এখনো সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারেননি যে কখন ও কীভাবে রামায়ণের কাহিনীর সাথে থাই পৌরাণিক কাহিনী মিলে গেছে। তবে ধারণা করা হয়, সময়টা প্রথম শতাব্দীতে (আজ থেকে প্রায় ২০০০ বছর আগে), যখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ভারতীয় সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত ছিল, তখন এই কাহিনী তৎকালীন কাহিনীকারদের আগ্রহী করে তুলেছিল। রামাকিনের সবচে জনপ্রিয় সংস্করণটি লেখা হয় আঠারো শতকে রাজা রামা-১-এর সময়, আর দ্বিতীয় সংস্করণটি লেখা হয় তার পুত্র রামা-২ এর সময়। পরেরটি লেখা হয় থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় খন থিয়েটার আর ঐতিহ্যগত ধ্রুপদী নাচে ব্যবহারের জন্য।
রামাকিনের এই পৌরাণিক আখ্যান থাইল্যান্ডে দারুণ জনপ্রিয়। সেখানকার ছেলেমেয়েদের নাম রাখা হয় এই অমর কাব্যগ্রন্থের বিভিন্ন চরিত্রের সাথে মিলিয়ে। রামায়ণের বেলাতেও কিন্তু একই রীতি দেখা যায় ভারতে।