Skip to main content
NTV Online

শিল্প ও সাহিত্য

শিল্প ও সাহিত্য
  • অ ফ A
  • গদ্য
  • কবিতা
  • সাক্ষাৎকার
  • গ্রন্থ আলোচনা
  • বইমেলা
  • চিত্রকলা
  • শিল্পসাহিত্যের খবর
  • পুরস্কার ও অনুষ্ঠান
  • চলচ্চিত্র
  • আলোকচিত্র
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • শিক্ষা
  • মত-দ্বিমত
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • জীবনধারা
  • স্বাস্থ্য
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ভ্রমণ
  • ধর্ম ও জীবন
  • নির্বাচন
  • সহজ ইংরেজি
  • প্রিয় প্রবাসী
  • আইন-কানুন
  • চাকরি চাই
  • অটোমোবাইল
  • হাস্যরস
  • শিশু-কিশোর
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • English Version
  • এনটিভি বাজার
  • এনটিভি কানেক্ট
  • যোগাযোগ
  • English Version
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি অস্ট্রেলিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি কানেক্ট
  • ভিডিও
  • ছবি
  • এনটিভির অনুষ্ঠান
  • বিজ্ঞাপন
  • আর্কাইভ
  • কুইজ
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • শিক্ষা
  • মত-দ্বিমত
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • জীবনধারা
  • স্বাস্থ্য
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ভ্রমণ
  • ধর্ম ও জীবন
  • নির্বাচন
  • সহজ ইংরেজি
  • প্রিয় প্রবাসী
  • আইন-কানুন
  • চাকরি চাই
  • অটোমোবাইল
  • হাস্যরস
  • শিশু-কিশোর
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • English Version
  • এনটিভি বাজার
  • এনটিভি কানেক্ট
  • যোগাযোগ
  • English Version
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি অস্ট্রেলিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি কানেক্ট
  • ভিডিও
  • ছবি
  • এনটিভির অনুষ্ঠান
  • বিজ্ঞাপন
  • আর্কাইভ
  • কুইজ
Follow
  • শিল্প ও সাহিত্য
ছবি

বর্ণিল সাজে সেমন্তী সৌমি

লাল টুকটুকে মিম

একান্তে তাহসান-রোজা

মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর ৫ খাবার

মেট গালা ফ্যাশনে দ্যুতি ছড়ালেন কিয়ারা

গ্রীষ্মের ফুলে ভিন্নরূপে রাজধানীর প্রকৃতি

বিমান বাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণে প্রধান উপদেষ্টা

বিমান বাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণ প্রধান উপদেষ্টার

পুলিশ সপ্তাহ শুরু

স্টাইলিশ মিম

ভিডিও
রাতের আড্ডা : পর্ব ০৬
রাতের আড্ডা : পর্ব ০৬
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৫০
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৫০
এ লগন গান শোনাবার : পর্ব ২০৫
এ লগন গান শোনাবার : পর্ব ২০৫
গানের বাজার, পর্ব ২৩৩
ফাউল জামাই : পর্ব ৯৫
জোনাকির আলো : পর্ব ১২৩
এক্সপার্ট টুডেস কিচেন : পর্ব ২৯৯
এক্সপার্ট টুডেস কিচেন : পর্ব ২৯৯
ছাত্রাবাঁশ : পর্ব ০৮
আলোকপাত : পর্ব ৭৭৫
স্বাস্থ্য প্রতিদিন : পর্ব ৫৫২৫
স্বাস্থ্য প্রতিদিন : পর্ব ৫৫২৫
অঞ্জন আচার্য
১৫:১৮, ৩০ নভেম্বর ২০১৬
অঞ্জন আচার্য
১৫:১৮, ৩০ নভেম্বর ২০১৬
আপডেট: ১৫:১৮, ৩০ নভেম্বর ২০১৬
আরও খবর
পর্ব-২: আমি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
পর্ব ১: আমি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

আমি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

‘নিয়মিত শরীরচর্চা করতাম আমি’

অঞ্জন আচার্য
১৫:১৮, ৩০ নভেম্বর ২০১৬
অঞ্জন আচার্য
১৫:১৮, ৩০ নভেম্বর ২০১৬
আপডেট: ১৫:১৮, ৩০ নভেম্বর ২০১৬

ঘুম ভাঙল একটা দুর্বোধ্য যন্ত্রণাদায়ক অবস্থার মধ্যে। প্রথমটা কিছুই বুঝতে পারলাম না। তারপর ধীরে ধীরে অনুভব করলাম, অতি কোমল চটচটে ভিজে কাদার মধ্যে শুয়ে আছি, দুই কাঁধের নিচে হাত দিয়ে কে যেন আমায় ঝাঁকুনি দিতে দিতে ডাকছে, বাবু! বাবু!

পরিষ্কার জ্যোৎস্না চারিদিকে। খানিকক্ষণ বিহ্বলের মতো তাকিয়ে থেকে চিনতে পারলাম, এ সেই টিনের চাল আর দরমার বেড়া দেওয়া বাড়ির বিবর্ণ সবুজ কুর্তা পরা বৃদ্ধ।

বৃদ্ধের সাহায্যে উঠে দাঁড়ালাম- কাদায় পা ঢুকে গেল প্রায় হাতখানেক।

পরিষ্কার ক্যানেলের জলে স্নান করে পরিষ্কার জামাকাপড় পরে নৌকায় সামনের দিকে বসলাম। ঘড়ি দেখলাম, রাত প্রায় দেড়টা। জামাকাপড় দিয়েছিলাম আমারই, বুড়ো কিন্তু খালের কাদা সাফ করে পরিষ্কার হয়ে আসতে গিয়েছিল বাড়িতে। খানিক পরে রীতিমতো বাবুটি সেজে সে এলো।

বুড়ো মানুষ ঘুম তো আসে না চোখে। উঠে তামাক টানছি, দেখি আপনি সরাসরি খালের কাঁদার মধ্যে নেমে গেলেন। প্রথমটা বড় ভয় হয়েছিল বাবু-

বুড়ো কথা বলতে বড় ভালোবাসে। আমার আর ঘুমানোর সাধ ছিল না, ঢুলতে ঢুলতে তার বিস্তারিত কাহিনী শুনতে লাগলাম। প্রথমে তার বড় ভয় হয়েছিল, তারপর সাহস করে গিয়ে আমায় সে টেনে তোলে- মোট কথাটা এই। কিন্তু আরো কথা ছিল বুড়োর, যা শোনামাত্র আমি হঠাৎ পূর্ণ মাত্রায় সজাগ হয়ে উঠলাম।

“অনেক কাল আগের কথা, বাবু। ওই যে বাড়িটা দেখছেন হেথায়, ও বাড়িতে এক ভদ্দরলোক ছিলেন, তার ছোট্ট একটা ছেলে আপনার মতো খালের পাঁকে আটকে গিয়েছিল বাবু, আমি গিয়ে ছেলেটাকে তুলে আনি। বাপকে বলে দেব ভয়ে ছেলেটা আমাকে ঢের টাকা বকশিশ দিয়েছিল বাবু।

‘চোখের পলকে সব পরিষ্কার হয়ে যায়। শৈশব-স্মৃতির সম্পূর্ণ পরিণতির সন্ধান পাই। শেষটুকু কেন ভুলে গিয়েছিলাম, তাও ক্রমে ক্রমে যেমন বুঝতে পারি, এই খালের কাদার আকর্ষণ এমনভাবে এতকাল আমায় কেন টেনেছে, তাও তেমনি বুঝতে পারি।” এই ভুলে যাওয়ার পেছনের কারণ ও যুক্তিও খুঁজে পাই আমি। সেটারও প্রকাশ করেছি ওই লেখাটিতে-

“এইখানে থাকবার সময় একবার বাবার অনেকগুলি টাকা চুরি গিয়েছিল, গল্প শুনেছি। বুড়োকে দেবার জন্য টাকা চুরি করেছিলাম আমি। খালের কাদার-অ্যাডভেঞ্চার আর টাকা চুরির কথা নিজের মধ্যে গোপন করে রাখতে গিয়ে তারপর থেকে পলে পলে আমি যন্ত্রণা সহ্য করেছি- চার বছর বয়সে এত বড় দুটি ব্যাপার কেউ হজম করতে পারে! তারপর খালের দুর্ঘটনার কথা আমার কাছে কেউ কোনোদিন উল্লেখও করেনি- কিন্তু রহস্যময় চুরির কথাটা অনেকবার উঠেছে। তখন আমার কাছে খাবার জিনিস চুরি আর টাকা চুরির মধ্যে বিশেষ পার্থক্য ছিল না, কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে যতই বুঝতে আরম্ভ করেছি, টাকা চুরি করাটা ঠিক কোন ধরনের ব্যাপার, ততই আমার ভেতরের যন্ত্রণা বেড়ে গিয়েছে। এরকম অবস্থায় প্রকৃতির একটা সহজ চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে- বিস্মৃতি। আমি তাই কম কষ্টদায়ক স্মৃতিটা মনে রেখেছি, বেশি কষ্টদায়ক স্মৃতিটা তলিয়ে দিয়েছি মনের তলার গুদামখানায়, সমস্ত বিস্মৃত স্মৃতি যেখানে জমা থাকে।”

এই যে কিছুক্ষণ আগে বললাম খালের জলে আমার ডুবে মরতে বসার ঘটনা, এবার সেই ঘটনার কথা না হয় শোনা যাক। তবে সেইবার আমাকে সেজদা না বাঁচালে আজকের এই আমাকে কেউ পেতই না। এ ঘটনাটির কথা ওই রচনাটিতেই আছে, সেখান থেকেই তুলে ধরি বরং- “ডুবে মরবার ঘটনাটা আমারও মনে আছে। লেকের কাছে ওভারসিয়ার বাবুর একটা নৌকা বাঁধা থাকত। মাঝে মাঝে আমি আর সেজদা চুপিচুপ নৌকায় খেলা করতে যেতাম। সামনে খাড়া হয়ে থাকত দুর্গ-প্রাচীরের মতো দুর্ভেদ্য লকের সিমেন্ট-বাঁধানো একটা অংশ, মৃদু বাতাসে ক্যানেলের জল তাতে ছলাৎ ছলাৎ করে আছড়ে পড়ছে। জলের নিচে রাশি রাশি গাঢ় সবুজ শ্যাওলা আর শ্যাওলাজাতীয় জলজ উদ্ভিদ- উঁকি দিয়ে দেখলে মনে হয় যেন রহস্যের মায়াপুরী! একদিন আমি একটা লগি তুলে নিয়ে লকের সিমেন্ট-বাঁধানো অংশে ঠেলা দিয়ে নৌকাটা একটু সরিয়ে দিতে গেলাম। লগি গেল পিছলে। সঙ্গে সঙ্গে আমি টুব করে সোজা তলিয়ে গেলাম জলের নিচে সবুজ রহস্যের রাজ্যে! যে বয়সের মানুষই হোক, জলে ডুবে গেলে একবার ভেসে উঠবেই। আমিও ভেসে উঠেছিলাম এবং নাকি হাতও ছুড়েছিলাম। সেজদা নৌকার ধারে ঝুঁকে আমি সেখানে তলিয়ে গিয়েছিলাম সেখানটা অবাক হয়ে দেখছিল। কে তাকে বুদ্ধি দিল কে জানে, খপ করে আমার একটা হাত সে ধরে ফেলল। তারপর এল লকের একজন খালাসি। আমায় নৌকায় টেনে তুলল সেই এবং ব্যাপারটা বলবার সময় এইখানে বাড়ির লোকেরা ভারী আমোদ অনুভব করেন- টেনে তুলে আমার গালে ঠাস করে বসিয়ে দিল এক চড়!”

এভাবেই বড়বেলায় এসে ছোটবেলার অনেক স্মৃতি আবিষ্কার করে গেছি আমি। আর এই সব স্মৃতিচারণার মধ্য দিয়ে আমার শিশুকালের অনেক অজানা ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারে সবাই। এমনকি যে বয়সের ঘটনার কথা মানুষের স্মৃতিকোষে জমা থাকার কথা নয়, তাও খুঁড়ে খুঁড়ে বের করে আনি আমি। তেমনই কয়েকটি খণ্ড খণ্ড ঘটনার কথা বলব এখন। সেই স্মৃতিকথাটিতেই আমি লিখেছি- “পদ্মানদীর ওপারের গ্রামটির স্মৃতি কয়েকটি হলো অতি তুচ্ছ বিষয়ের কয়েকখানা ছবি- কোনোটি খুব অস্পষ্ট, কোনোটি বেশ উজ্জ্বল। আগের কিছু মনে নেই, পরের কিছু মনে নেই, মনে কেবল আঁকা আছে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন মুহূর্তের চিত্র- ঠিক ফটোর মতো। একটি ঘরের ভিত আর বেড়ার মধ্যে ইঞ্চি দুয়েক ফাঁক, তার মধ্যে আমি ঢুকিয়ে দিয়েছি হাত- কেন কে জানে! এই হলো একটা ছবি। কে একজন লম্বা একটা বাঁশ দিয়ে গাছ থেকে আম পাড়ছেন, ডালপালার ফাঁক দিয়ে আমি দেখতে পাচ্ছি টুকটুকে একটি সিঁদুরে আম, ঠিক আমার ডাইনে কয়েক হাত তফাতে ছোট একটি পুকুরের তালগাছের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি ঘাট। এই হলো আরেকটি ছবি।

আরেকটি ছবি হলো- একটা খাটের তলায় বসে খাটের তলার দিকের কাঠে নরুন দিয়ে গর্ত করছি। যে উপলক্ষে সেখানে গিয়েছিলাম এবং যতদিন সেখানে ছিলাম, তাতে আমার তখনকার বয়স নির্ভুলভাবে নিরূপণ করা সহজ ছিল। দুই বছর কয়েক মাস মাত্র বয়সের জীবন থেকে কয়েকটি টুকরো চেতন মনে সঞ্চার করে রেখেছি, এটুকু প্রমাণ করা নয় কেবল, শিশুচিত্তের কোনো বৈশিষ্ট্যের জন্য ওই টুকরোগুলি বেছে নিয়েছি তাও আবিষ্কার করার সুযোগ পাব ভেবে, গভীর আগ্রহ বুকে নিয়েই স্মৃতি যাচাই করতে গেলাম। স্মৃতি-চিত্রের এমন কতকগুলি খুঁটিনাটি বাস্তবের সঙ্গে মিলে গেল যে, বুঝতে পারলাম ছবিগুলি স্মৃতিই বটে, আমার তৈরি কল্পনা নয়। কিন্তু সেকেলে খাটের নিচে নরুনের গর্ত খুঁজতে গিয়ে গেলাম ভড়কে। দাগ অনেক রকম আছে কিন্তু নরুনের দাগের চিহ্নও নেই। সে দাগ মিলিয়ে যাবার নয়, অন্য দাগের নিচে যে চাপা পড়বে তাও সম্ভব নয়। এই স্মৃতিটা কি তবে আমার কল্পনা? মনটা দমে গেল। সে সব প্রমাণের ওপর নির্ভর করে অন্য ছবিগুলিকে স্মৃতি বলে গ্রহণ করেছিলাম, সেগুলিও যেন তুচ্ছ হয়ে গেল, মনে হলো সবই আমার মনের ভুল। দামি আর প্রিয় কিছু হারিয়ে গেলে যেমন কষ্ট হয়, ফাঁকা ফাঁকা লাগে, সেই রকম একটা কষ্ট, একটা অভাব বোধ আমায় পীড়ন করতে লাগল।

পরদিন গেলাম মাইল দশেক উত্তরে বড় একটা গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়ি। সমাদর করে খাটে বসিয়ে আত্মীয় বলতে লাগলেন, কতকাল পরে তোকে দেখলাম, কী লম্বা তালগাছ তুই হয়ে গেছিস! সেই একবার এসেছিলি যখন তুই এতটুকু শিশু- কী দুরন্তই ছিলি তুই সেই বয়সে। একদিন মোটে ছিলি, ঘরে প্রায় আগুন লাগিয়ে বসেছিলি।

মনে একটা খটকা লাগল। ভাবলাম সময়মতো খাটের তলাটা একবার খুঁজে দেখব। কিন্তু সুযোগ আর পাই না। এতকাল পরে একটি দিনের জন্য এসেছি, বাড়ির কেউ যেন আমাকে এক মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল করতে রাজি নয়। আদর-যত্নের শেষ নেই, গল্পগুজবের শেষ নেই। মধ্যাহ্ন ভোজনটা এমন গুরুতর হলো যে আশঙ্কা জাগল, এরপর সুযোগ পেলেও খাটের তলায় ঢুকে মনের খটকা মিটিয়ে নেবার ক্ষমতা হয়তো আমার হবে না।

খাটের ওপরেই দুপুরবেলা বিশ্রামের ব্যবস্থা হলো এবং সুযোগও পেলাম কিছুক্ষণ পরে। পেটের প্রতিবাদ অবহেলা করে হামা দিয়ে ঢুকে পড়লাম খাটের নিচে। পিতলের হাঁড়ি-কলসি থেকে আরম্ভ করে কত কী যে খাটের নিচে জমা করা আছে তার সংখ্যা হয় না। সেই সব গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অরণ্যে পথ করে করে নরুনের দাগ খুঁজতে সময় লাগল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত খুঁজে পেলাম। বড় বড় আবিষ্কার করে বড় বড় আবিষ্কারকদের কী রকম আনন্দ হয় জানি না, তবে সেদিন সেকেলে একটা খাটের তলার দিকে কয়েকটা নরুনের দাগ আবিষ্কার করে আমার যে রকম আনন্দ হয়েছিল সে রকম আনন্দ যদি তারাও বোধ করেন, আবিষ্কারের জন্য নিদারুণ দুঃখকষ্ট স্বীকার করেও লাভ আছে বলতে হবে।

মহোল্লাসে খাটের বাইরে এলাম। গায়ে মুখে অনেক ঝুল লেগেছে, ঝাড়তে হবে। উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে তাকিয়েই কাঠের মূর্তির মতো নিশ্চল হয়ে গেলাম। বাড়ির প্রায় সবাই সেখানে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।’

একটা সময় নিয়মিত শরীরচর্চা করতাম আমি। মুগুর ভাজতাম, এমনকি কুস্তি লড়তাম আখড়ায় গিয়ে। এমনিতেই আমার স্বাস্থ্য ছিল ছিমছাম। দমের কোনো কমতি ছিল না। তারপরও শরীরটাকে সুস্থ রাখতে ব্যায়াম করে বাড়তি যত্ন আর কি। যদিও সারা দিন দৌড়ঝাঁপ, খেলাধুলা করে করে শরীরটাকে গড়ে তুলেছিলাম ক্লান্তহীন। একবার আমাদের গাঁয়ের এক গুন্ডা আমার ছোট ভাই লালুকে জোর করে আটকে রাখে। আমি সেই গুন্ডাটিকে নির্দিষ্ট সময়ে মাঠে আসতে বলি। গুন্ডাটি আসে তার দলবল নিয়ে। আমি একাই লড়ে যাই সবার সাথে। সেই লড়াইয়ে ওই গুন্ডাকে মার দিয়ে এমন অবস্থা করেছিলাম যে, তাকে শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে দৌড়াতে হয়েছিল।

বড়দা সুধাংশুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে থেকে স্কুল পড়া শুরু করি আমি। বড়দা আমাকে ভর্তি করে দেন কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনে। তবে ১৯২২ সালে বড়দার চাকরির স্থল বদল হয় যায়। এ সময় অনেকটা বাধ্য হয়েই আমাকে চলে আসতে হয় টাঙ্গাইলে, মানে বাবার সে সময়ের কর্মস্থলে। আর এই টাঙ্গাইলে এসেই যেন আমার বেড়ে ওঠে দুরন্তপনার ডানা। কলকাতার ধরাবাঁধা জীবনে যা আমি করতে পারিনি, তাই যেন করার সুযোগ পেয়ে যাই এখানে এসে। জেলে-মাঝি বা গাড়োয়ান- এমন বিভিন্ন নিম্ন পেশাজীবী মানুষের সাথে কাটত আমার দিনের বেশির ভাগটা সময়। এ সময় আমার আচরণ যেন হয়ে পড়ে আরো বেপরোয়া ও ডানপিটে। একবার কালীপূজার আগে বাজি বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মারাত্মক আহতও হই আমি আর আমার ভাই লালু। সেইবার বারুদভরা শিশি ফেটে সারা শরীরে ভাঙা কাচ বিদ্ধ হয় আমার। ১৯৫২ সালের আগস্টে লেখা আমার আরেক স্মৃতিকথামূলক রচনা ‘বড়ো হওয়ার দায়’ লেখাটি আমি সেই ঘটনার উল্লেখ করেছি- “তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। সেবার বর্ষার পর ম্যালেরিয়া ধরেছিল। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসায় কদিন স্কুলে যাওয়া বন্ধ, ঘুরে বেড়ানো বন্ধ, কানে একটানা চলেছে কুইনিনের ভোঁ ভোঁ। কী করা যায়? কালীপূজা আসছে, বাজিই বানানো যাক।

একটা মোটা বেঁটে শিশিতে (!) বারুদ রেখে ঘরের বারান্দায় উবু হয়ে বসে পটকা বানাবার জন্য ব্যবস্থাগুলি সারছি, কাছে ঘেঁষে বসে আছে ছোট দুটি ভাই। সেই যে লালু নামে ভাইটিকে কুয়ার মধ্যে ফেলে দিয়েও বাঁচিয়ে দেওয়ায় রসগোল্লা পুরস্কার পেয়েছিলাম, সে আর তার পরের ভাই। [আমার এই একটি লাইনের মধ্য দিয়ে আমি কিন্তু স্বীকার করে নিয়েছি, সেইবার ছোট ভাই লালু উঁকি দিয়ে কুয়ার মধ্যে থাকা ব্যাঙ দেখতে গিয়ে তার মধ্যে পড়ে যায়নি, বরং আমিই তাকে কুয়ার মধ্যে ফেলে দিয়েছিলাম। শেষে ভয়েই হোক কিংবা অন্য কোনো কারণেই হোক, উপায় না দেখে বাড়ির সবাইকে ডেকে আনি।] সে যাই হোক, আমি এদিকে একমনে ন্যাকড়ার ফালি পাথরের কুচি ঠিক করছি, ওদিকে লালু করেছে কি, শিশি থেকে একটু বারুদ শিশিটার কাছেই মাটিতে ঢেলে ফস করে দেশলাই জ্বালিয়ে দেখতে গেছে জ্বলে কিনা। সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড আওয়াজে শিশিটার বিস্ফোরণ এবং ছররা গুলির মতোই টুকরো টুকরো কাচের আমাদের তিন ভায়ের অঙ্গে প্রবেশ। রক্তে বারান্দা ভেসে যাওয়া। ঠিক সেই সময় বাবা কোথা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। রাস্তা থেকেই শিশি ফাটার শব্দ আর বাড়ির লোকের চিৎকার শুনে আমার সর্বনাশ হলো রে বলতে বলতে ছুটে ভেতরে এলেন এবং একজনকে ডাক্তার ডাকতে পাঠিয়ে আমাদের রক্তপাত ঠেকাবার চেষ্টা করতে লেগে গেলেন।

প্রত্যেকের শরীরে আট-দশটা করে ফুটো হয়েছে গভীর, সহজে কি রক্ত বন্ধ হয়! অতিরিক্ত রক্তপাতের জন্য আমরা খুব কাবু হয়ে পড়েছিলাম- সবচেয়ে বেশি কাবু হয়েছিল ছোট ভাইটি। ...তারপর ডাক্তার এসে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিলেন। তিনজনে বিছানা নিলাম। পরদিন কাচ বের করার পালা। সরু ফুটো করে কাচ শরীরে ঢুকেছে, শলা ঢুকিয়ে আগে ঠিক করতে হবে কাচের টুকরোর অবস্থান, তারপর মাংস কেটে মুখ বড় করে বের করতে হবে। ডাক্তার বাবু আমায় বললেন, তুমি বড়, প্রথমে তোমায় ধরব। একটা কথা মনে রাখতে হবে। তুমি বারুদ বানিয়েছ, বোকার মতো কাচের শিশিতে বারুদ রেখেছ। তোমার জন্য ছোট ভাই দুটির এত কষ্ট। কাচ বের করার সময় তুমি যদি বেশি চেঁচামেচি কাঁদাকাটা করো, ওরা দুজন ভয় পেয়ে ভড়কে যাবে। তুমি বড়, ব্যথা লাগলেও চেঁচানো চলবে না। বুঝতে পেরেছ?

সোজা কথাটা না বুঝে উপায় কী? অগত্যা দাঁতে দাঁত লাগিয়ে চোখ বুজলাম। ক্ষতের মধ্যে শলা ঢুকিয়ে ডাক্তার যখন আস্তে আস্তে ভেতরে নেড়ে কাচ কোথায় আছে খোঁজেন, কাচ বের করার জন্য ছুরি কাঁচি চালান; তখন একটু চেঁচাবার অধিকার না থাকা যে কী ব্যাপার সেদিন খুব ভালো করেই টের পেয়েছিলাম।

কয়েকটা টুকরো অবশ্য বার করা গিয়েছিল সহজেই। তবু সময় লেগেছিল অনেকক্ষণ। শেষ ব্যান্ডেজটা বেঁধে ডাক্তার বাবাকে বলেছিলেন, এ তো আশ্চর্য ছেলে, একটু শব্দ করল না।

ডাক্তার বা আত্মীয়স্বজন বোঝেননি ব্যাপারটা তাই তারা আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন। বীরত্ব বা অসাধারণ সহ্যশক্তির কোনো পরিচয়ই আমি সেদিন দেইনি। আমি চোখ বুজেছিলাম আহত রক্তমাখা ভাই দুটির চেহারা, যন্ত্রণায় বিকৃত কাতর তাদের মুখ মনের চোখের সামনে রাখার জন্য।”

(চলবে)

আমি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

পাঠকের পছন্দ

গরমে ঘামাচিতে জেরবার?

ভ্রমণের সময় যা মনে রাখবেন

কীভাবে হবেন ভালো সহকর্মী?

সর্বাধিক পঠিত
  1. অক্ষয়ের মামলা, সুদসহ টাকা ফেরত দিয়ে ‘হেরা ফেরি ৩’ ছাড়ালেন পরেশ রাওয়াল
  2. শুধু অভিনেতা নন, পেশাদার পাইলটও ছিলেন মুকুল দেব
  3. বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই ঘরবন্দি ছিলেন মুকুল দেব
  4. পরেশ রাওয়ালের বিরুদ্ধে ২৫ কোটির মামলা ঠুকলেন অক্ষয় কুমার
  5. টিজারেই ঝড় তুলল ‘ওয়ার ২’, মুক্তির তারিখ ঘোষণা
  6. বিয়ে নয়, এবার ‘লিভ ইন’ করতে চান সামান্থা!
সর্বাধিক পঠিত

অক্ষয়ের মামলা, সুদসহ টাকা ফেরত দিয়ে ‘হেরা ফেরি ৩’ ছাড়ালেন পরেশ রাওয়াল

শুধু অভিনেতা নন, পেশাদার পাইলটও ছিলেন মুকুল দেব

বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই ঘরবন্দি ছিলেন মুকুল দেব

পরেশ রাওয়ালের বিরুদ্ধে ২৫ কোটির মামলা ঠুকলেন অক্ষয় কুমার

টিজারেই ঝড় তুলল ‘ওয়ার ২’, মুক্তির তারিখ ঘোষণা

ভিডিও
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১
ফাউল জামাই : পর্ব ৯৫
আপনার জিজ্ঞাসা : পর্ব ৮৬৮
আপনার জিজ্ঞাসা : পর্ব ৮৬৮
রাতের আড্ডা : পর্ব ০৬
রাতের আড্ডা : পর্ব ০৬
এ লগন গান শোনাবার : পর্ব ২০৫
এ লগন গান শোনাবার : পর্ব ২০৫
কনকা সেরা পরিবার, সিজন ০৩, পর্ব : ১২
টেলিফিল্ম : বীথি পরিবহন
টেলিফিল্ম : বীথি পরিবহন
মিউজিক নাইট : পর্ব ১৯৫
মিউজিক নাইট : পর্ব ১৯৫
নাটক : প্রেম আমার
নাটক : প্রেম আমার
জোনাকির আলো : পর্ব ১২৩

Alhaj Mohammad Mosaddak Ali

Chairman

NTV Online, BSEC Building (Level-8), 102 Kazi Nazrul Islam Avenue, Karwan Bazar, Dhaka-1215 Telephone: +880255012281 up to 5, Fax: +880255012286 up to 7

Alhaj Mohammad Mosaddak Ali

Chairman

NTV Online, BSEC Building (Level-8), 102 Kazi Nazrul Islam Avenue, Karwan Bazar, Dhaka-1215 Telephone: +880255012281 up to 5, Fax: +880255012286 up to 7

Browse by Category

  • About NTV
  • Career
  • NTV Programmes
  • Advertisement
  • Web Mail
  • NTV FTP
  • Satellite Downlink
  • Europe Subscription
  • USA Subscription
  • Privacy Policy
  • Terms & Conditions
  • Contact
  • Archive

NTV Prime Android App

Find out more about our NTV: Latest Bangla News, Infotainment, Online & Live TV

Qries

Reproduction of any content, news or article published on this website is strictly prohibited. All rights reserved

x