কবি শামসুর রাহমানের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমানের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট)। ২০০৬ সালের আজকের এই দিনে ৭৭ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার মাহুতটুলির ৪৬ নম্বর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন এই কবি।
দীর্ঘ ছয় দশক কবি অত্যন্ত সাবলীল ধারায় লেখালেখি করে বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ অবদান রাখেন। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা পঞ্চাশের দশকে তিনি আধুনিক কবি হিসেবে বাংলা কবিতায় আবির্ভূত হন। এবং অল্প সময়ের ভেতরেই দুই বাংলায় কবি হিসেবে পরিচিতি পান।
শামসুর রাহমানের লেখা কবিতা আজও বাঙালির দুঃসময়ে সাহস ও প্রেরণা জোগায়। কবিতার চরণে চরণে উচ্চারিত হয় অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনার কথা। কাব্য রচনায় সৃষ্টি ও মননের দ্যুতিময় উপস্থাপনা তাঁকে দিয়েছে কবিতার বরপুত্রের উপাধি।
পঞ্চাশ দশকের শেষ দিকে মর্নিং নিউজে সাংবাদিকতার মাধ্যমে পেশাগত জীবনে প্রবেশ ঘটে তাঁর। এরপর ১৯৫৭ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত রেডিও পাকিস্তানের অনুষ্ঠান প্রযোজক ছিলেন। এর মাঝে আবার ফিরে আসেন পুরোনো কর্মস্থল দৈনিক মর্নিং নিউজে। সেখানে ১৯৬০ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত সহযোগী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালে। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘রৌদ্র করোটিতে’ (১৯৬৩), ‘বিধ্বস্ত নীলিমা’ (১৯৬৭), ‘নিরালোকে দিব্যরথ’ (১৯৬৮), ‘নিজ বাসভূমে’ (১৯৭০), ‘বন্দী শিবির থেকে’ (১৯৭২), ‘দুঃসময়ে মুখোমুখি’ (১৯৭৩), ‘ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাটা’ (১৯৭৪), ‘আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি’ (১৯৭৪), ‘এক ধরনের অহংকার’ (১৯৭৫), ‘আমি অনাহারী’ (১৯৭৬), ‘শূন্যতায় তুমি শোকসভা’ (১৯৭৭), ‘বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে’ (১৯৭৭), ‘প্রতিদিন ঘরহীন ঘরে’ (১৯৭৮), ‘ইকারুসের আকাশ’ (১৯৮২), ‘মাতাল ঋত্বিক’ (১৯৮২), ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে’ (১৯৮৩), ‘কবিতার সঙ্গে গেরস্থালি’ (১৯৮৩), ‘নায়কের ছায়া’ (১৯৮৩), ‘আমার কোনো তাড়া নেই’ (১৯৮৪), ‘যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে’ (১৯৮৪), ‘অস্ত্রে আমার বিশ্বাস নেই’ (১৯৮৫) ইত্যাদি।
উপন্যাসও লিখেছেন শামসুর রাহমান। ‘অক্টোপাস’ (১৯৮৩), ‘অদ্ভুত আঁধার এক’, (১৯৮৫), ‘নিয়ত মন্তাজ’ (১৯৮৫), ‘এলো সে অবেলায়’ (১৯৯৪) নামে তাঁর চারটি উপন্যাস রয়েছে। ‘স্মৃতির শহর’ ও ‘কালের ধুলোয়’ নামে দুটি আত্মস্মৃতিমূলক গ্রন্থও রয়েছে তাঁর।
সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য পেয়েছেন আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক, জীবনানন্দ পুরস্কার, আবুল মনসুর আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার, মিতসুবিসি পুরস্কার (সাংবাদিকতার জন্য), স্বাধীনতা পদক, আনন্দ পুরস্কার।