বইমেলায় কুমার প্রীতীশ বলের উপন্যাস ‘উড়াল পঙ্খির দ্যাশে’

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে কথাসাহিত্যিক কুমার প্রীতীশ বলের উপন্যাস ‘উড়াল পঙ্খির দ্যাশে’। এটি লেখকের অষ্টম উপন্যাস। বইটির প্রচ্ছদশিল্পী ধ্রুব এষ। মূল্য ৫০০ টাকা। বইটি পাওয়া যাচ্ছে ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশের ১৯ নম্বর প্যাভিলিয়নে।
উড়াল পঙ্খির দ্যাশে উপন্যাসে হাওর বাংলা অর্থাৎ বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের মানুষের যাপিত জীবনের ছবি যেমন পাওয়া যাবে, পাশাপাশি নানান পদের মানুষের মুখ ও মুখচ্ছবি আছে। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষাকে উপন্যাসে যথার্থভাবে তুলে আনা হয়েছে। পড়তে পড়তে জানা হয়ে যাবে খাসিয়া, চা-শিল্পের মানুষ, শব্দকর জনগোষ্ঠির চিরায়ত সংস্কৃতি ও লোকাচার।
উড়াল পঙ্খির দ্যাশ জুড়ে কিছু শিক্ষিত মানুষ আছেন। তাদের একটি অভিমত আছে। তাদের সে-ই অভিমতটি হলো, এই সোনার স্বদেশ জুড়ে এমন কিছুই নেই, যা তাদের জানবার উপযুক্ত, গর্ব করার মতো। কিন্তু এরূপ মূর্খতা ও অজ্ঞানতা আর ঔদাসীন্যের মূলে আছে তাদের জড়তা। এর ফল অবশ্যম্ভাবী অধোগতি। তারা হতাশা প্রকাশ করে নানাভাবে। তারা মানে ঐ শিক্ষিত মানুষেরা এই সোনা ঝরা বাংলার নানান কাহিনীর কিছুই জানে না। এদের প্রতিনিধি হলো উড়াল পঙ্খির দ্যাশের হবীব আলীর একমাত্র বংশধর জাবেদ আলী। সে বিলাত ফেরত। এখন আর তার এদেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতি কিছুই পছন্দ না। অথচ হবীব আলী সে-ই বাঙালি কৃষ্টি-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক। ওখানে হাওর আছে। চাঁদনি রাতে বর্ষায় যে হাওর হয়ে ওঠে কূলহীন সাগর। হবীব আলীর বন্ধু শব্দকর জনগোষ্ঠীর নয়ান ঢুলী, খাসিয়া নৃগোষ্ঠী, চা-শ্রমিক, বাউল শাহ আবদুল করিম এবং স্বদেশী সোহাগ রায়। এরা সবাই মিলে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালায় বাংলার হাজার বছরের লোকায়ত সংস্কৃতি-কৃষ্টিকে ধরে রাখতে। সোহাগ রায় সে-মতে নাতির বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তাঁর অতিথি হয়ে আসেন হাসন রাজা। তাঁরা যাত্রা ভালোবাসেন। কবিগানের আয়োজন করেন। পৃষ্ঠপোষকতাও করেন। হবীব আলী পূর্বপুরুষের নিয়ম অনুসরণ এখনও সাদা ধূতি পড়েন। সে এটাকে হাজার বছরের ঐতিহ্য মনে করে। কিন্তু হবীব আলীর পুত্র এ-সব পছন্দ করে। সে আধুনিক মানুষ। তার কাছে সিগারেট খাওয়া মদ্যপান আভিযাত্যের অংশ। হবীব আলী চেয়েছিল পুত্র দেশে এলে বিয়ের ব্যবস্থা করবেন। গ্রামবাসীকে দাওয়াত খাওয়াবেন। যাত্রা গান দেবেন। পুত্র এসব করার কোনো সুযোগ দিল না। সে বাবার অমতে বিলাত থেকে নিজের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে। দেশে এসে ছেলে আর ছেলে বউ বাড়িতে থাকে না। থাকে হোটেলে। হবীব আলীর কোনো ইচ্ছেই পূরণ করতে দিল না। বরং বাঙালি সংস্কৃতির প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাতমিলিয়ে বাবাকে ভর্ৎসনা করে। সেই প্রতিপক্ষ খাসিয়া সম্প্রদায়ের সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে তাদের ওপর হামলা চালায়। এদের কারণে ছাতকছড়ার অতি রূপবতীদের একজন নূরজাহান আত্মহত্যা করে। উপন্যাসে বাবা-ছেলের মতভিন্নতা প্রজন্মের ব্যবধানকে স্পষ্ট করে তুলেছে। এখানে মন খারাপের বার্তা যেমন আছে, আবার আছে মন ভালো করার সুসংবাদও। ইতিহাসের আশ্রয়ে থেকে লেখক হাওর বাংলার চারপাশের মানুষ কিংবা অমানুষগুলোকে তুলে এনেছেন কল্পনা আর বাস্তবের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে।

কুমার প্রীতীশ বল বীর চট্টগ্রামের সন্তান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে ঢাকায় বসবাস করছেন। বর্তমানে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে কর্মসূত্রে জড়িত আছেন। ছাত্রাবস্থায় দেয়াল-পত্রিকার মাধ্যমে লেখালেখির হাতেখড়ি। দুটো যৌথ সম্পাদিত গ্রন্থসহ মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ৪৮টি। এর মধ্যে নাটক, গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ রয়েছে। আদিবাসীবিষয়ক গ্রন্থের সংখ্যাও নেহায়েত কম না। বড়দের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্যও গল্প, উপন্যাস, নাটক লিখেন। মঞ্চস্থ নাটকের সংখ্যা ১১টি। টেলিভিশন নাটক তিনটি। নানান বিষয়ে প্রবন্ধ, গল্প, অনুবাদ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়।