সোহরাওয়ার্দীর মুক্তমঞ্চে শুরু হলো ‘অমর একুশে নাট্যোৎসব ২০২৫’

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের যৌথ আয়োজনে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে ১০ দিন ব্যাপী ‘অমর একুশে নাট্যোৎসব ২০২৫’। উৎসব চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে উৎসব শুরু।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চে নাট্যোৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন। এতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন অমর একুশে নাট্যোৎসব ২০২৫ এর আহ্বায়ক খন্দকার শাহ্ আলম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (সচিব পদমর্যাদা) ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘সত্তর এবং আশির দশকে বাংলাদেশে ব্যাপক নাট্যচর্চা হয়েছে। তার পেছনে একটা বড় কারণ হচ্ছে ষাটের দশকে, পঞ্চাশের দশকে জেলা পর্যায়ে প্রচুর কাজ ছিল। প্রদেশ পর্যায়ে যদি রসদ যোগায় তাহলে কেন্দ্রে প্রাণ চাঞ্চল্য থাকে। প্রদেশে যদি প্রাণচাঞ্চল্য বা কর্মকাণ্ড না থাকে তাহলে কেন্দ্রেও প্রাণচাঞ্চল্য থাকবে না।
তিনি বলেন, ‘যারা বিগত ১৫/১৬ বছর সত্তর/আশির দশকে কিংবা নব্বইয়ের পর থেকে নাটকের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন তাদের অনেকেই এখন আর নাটক করছেন না। শুধু তাই নয় করার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। আমি তাদের সবার প্রতি আহ্বান জানাবো নাট্যকর্মের সঙ্গে যুক্ত হতে। আপনাদের যা বলার আছে, যা সমালোচনা করার আছে, যা মনে করেন হওয়া উচিত, যা হওয়া উচিত না সবগুলো নাটকের মাধ্যমে তুলে ধরেন। আমরা নাট্যকর্মীরা একটা ভাষাই বুঝি সেটা হচ্ছে নাটক করা। আমাদের সবসময় প্রয়োজন নাটকের মাধ্যমে আমাদের সমাজ এবং রাষ্ট্রের যে বিচ্যুতি রয়েছে সেগুলো তুলে ধরা। একইসঙ্গে মানুষের মনে স্বপ্ন ও বীজ বপণ করা যে কোন দিকে যেতে পারি। দেশটা কেমন হওয়া উচিত তার কিছু উদাহরণ, তার কিছু দিক নির্দেশনা বা তার কিছু খোয়াব দেখানো আমাদের মঞ্চ নাটকে। এই জায়গাগুলো যদি আমরা তৈরি না করি, দায়িত্বগুলো যদি পালন না করি যেটা ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আমরা একদম করিনি, ফলে একটা শূন্যতা তৈরি হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা শিল্পকলা একাডেমি থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। জেলা পর্যায়ে এবার আমরা পৌঁছেছি। আগামীতে উপজেলা পর্যায়ে আমাদের নাটক, লোকনাট্য ও গানসহ নানান ধরণের চর্চা নিয়ে পৌঁছাতে চাইব।’
মহাপরিচালক আরো বলেন, ‘আমাদের আরো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের বাউল সংগীতের অনুষ্ঠান, ঘুড়ি উড়ানোর অনুষ্ঠান, নাটক এবং নৃত্যানুষ্ঠান কোনোভাবে কোথাও যেন বন্ধ না হতে পারে। এগুলো কোনোভাবে আক্রান্ত হলে বিদেশে যেমন আমাদের ভাবমূর্তি ব্যাহত ও ক্ষুন্ন হবে, ঠিক তেমনি দেশেও আমদের শিল্পীদের চর্চা থাকবে না। আমাদের খুব বেশি করে দরকার এখন আমাদের সব ভেদাভেদ ভুলে নাটকের মাধ্যমে সমাজ এবং রাষ্ট্রের পথটা নির্দেশ করা কিংবা দর্শকের ভিতরে বীজ বপণ করা যে আমাদের দেশটা কোন দিকে যেতে পারে। এই দায়িত্বটা আমাদের। সুশীল সমাজের অংশ হিসেবে নাটকের দলগুলো যদি এই দায়িত্বটা পালন না করে তাহলে কিন্তু রাষ্ট্র যে পথে যাবে তখন বলার কেউ থাকবে না। নাটকের দলগুলোকে আহ্বান করব চলেন একসঙ্গে কাজ করি। নাটক করি এবং জনগণ যারা আছে তাদের সামনে তুলে ধরি আমরা কী ধরণের বাংলাদেশ চাই।’
উদ্বোধনী পর্বের পর মঞ্চায়ন হয় নাট্যতীর্থ নাট্য দলের নাটক ‘দ্বীপ’। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে দুটি করে নাটক মঞ্চায়ন হবে। নাট্য প্রদর্শনী সকলের জন্য উন্মুক্ত।