আবাসিক হোটেলে চিকিৎসকের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় আসামি গ্রেপ্তার
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/08/12/arrest_photo.jpg)
রাজধানীর পান্থপথের একটি আবাসিক হোটেল থেকে এক নারী চিকিৎসকের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় আসামি রেজাউল করিম ওরফে রেজাকে (৩১) চট্টগ্রাম মহানগরীর মুরাদপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ১০ আগস্ট রাতে রাজধানীর পান্থপথে অবস্থিত ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট নামক আবাসিক হোটেল থেকে একজন নারী চিকিৎসকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় ভিকটিমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও জখমের চিহ্ন দেখা যায়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে রাজধানীর কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
খন্দকার আল মঈন জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-২ ও র্যাব-৭-এর যৌথ অভিযানে চট্টগ্রাম মহানগরীর মুরাদপুর এলাকা থেকে মামলার একমাত্র আসামি রেজাউল করিম ওরফে রেজাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জব্দ করা হয় হত্যাকাণ্ডের সময় আসামির পরিহিত রক্তমাখা টি-শার্ট, মোবাইল, ব্যবহৃত ব্যাগ ও ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত মোবাইল।
কমান্ডার মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রেজা ভুক্তভোগীকে হত্যার সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতার তথ্য দিয়েছেন। আসামি জানান, ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুক্তভোগীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। এরপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং ২০২০-এর অক্টোবরে তাঁরা বিয়ে করেন। পরিবারের অগোচরে বিয়ে হওয়ায় তাঁরা স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অবস্থান করতেন।
র্যাব জানায়, বিবাহিত হওয়ার পরও গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির সঙ্গে একাধিক নারীর সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। এ বিষয়টি চিকিৎসক জানতে পারলে বিভিন্ন সময়ে কাউন্সেলিং বা আলাপচারিতার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন সময় বাগবিতণ্ডাও হয়। একপর্যায়ে রেজা তাঁর প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ভুক্তভোগীকে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১০ আগস্ট ভুক্তভোগীকে জন্মদিন উদযাপনের কথা বলে পান্থপথের ‘ফ্যামিলি অ্যাপার্টমেন্টে’ নামের একটি আবাসিক হোটেল নিয়ে যান। সঙ্গে ব্যাগে করে ধারালো চাকুও নিয়ে যান।
খন্দকার আল মঈন জানান, সেখানে অবস্থানকালে পরনারীর সঙ্গে সম্পর্ক সংক্রান্ত বিষয়ে দুজনের মধ্যে কথাকাটাকাটি, বাগবিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে রেজা তাঁর ব্যাগ থেকে ধারালো ছুরি বের করে ভুক্তভোগীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করেন। পরবর্তী সময়ে গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। হত্যার পর রেজা গোসল করেন, যাতে হত্যার কোনো আলামত তাঁর শরীরে দেখা না যায়। এ সময় রেজা ভুক্তভোগীর মোবাইল ফোনও সঙ্গে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় দরজার বাইরে থেকে তিনি রুমটি তালাবন্ধ করে দেন।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব আরও জানায়, রেজা হোটেল থেকে বেরিয়ে প্রথমে তাঁর মালিবাগের বাসায় যান। বাসা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বের হয়ে একটি হাসপাতালে গিয়ে তাঁর নিজের হাতের ক্ষতস্থান সেলাই করেন এবং প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। পরে আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে চট্টগ্রামে গিয়ে মুরাদপুরে আত্মগোপন করেন। সেখানে র্যাবের অভিযানে তিনি গ্রেপ্তার হন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তার হওয়া রেজা ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করেন। এমবিএ চলাকালে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০২২ সালের জুন মাসে তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে যোগদান করেন।