আমলাদের বীভৎস দৌরাত্ম্য বেড়েছে : রুমিন ফারহানা
একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে বিএনপির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, বাংলাদেশে আমলাদের যে বীভৎস দৌরাত্ম্য বেড়েছে সে বিষয়ে কথা বলা দরকার। কেননা জনগণের দেওয়া করের ২৭ শতাংশ চলে যায় আমলাদের বেতনের পেছনে। অথচ বছরে জনগণকে সেবা নিতে ১২ হাজার কোটি টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে।
আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় সংসদে নতুন প্রভিশনের তালিকায় মোবাইল কোর্টের বিধান সংবলিত এক আলোচনায় বিএনপির এ সংসদ সদস্য এ কথা বলেন।
রুমিন ফারহানা তাঁর আলোচনার শুরুতে বলেন, আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশে আমলাদের যে বীভৎস দৌরাত্ম্য বেড়েছে সে বিষয়ে কথা বলা দরকার। আমরা দেখছি, জনগণের দেওয়া করের টাকার ২৭ শতাংশ আমলাদের বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। এখানেই শেষ নয়; টিআইবির রিপোর্ট অনুযায়ী, জনগণকে তাদের সেবা পাওয়ার জন্য প্রতি বছর ১২ হাজার কোটি টাকা ঘুষ দিতে হয়। এবং আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, বিদেশে অর্থ পাচারের তালিকায় যে ২৮ জনের তালিকা রয়েছে তাদের মধ্যে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি আমলারাও রয়েছে। সুতরাং এ টাকা কোথা থেকে আসে সেটি প্রশ্ন।
বিএনপির এ সংসদ সদস্য বলেন, আমাদের পরিকল্পনামন্ত্রী আমলাদের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘ফেরাউনও আমলাদের ছাড়া চলতে পারেনি।’
রুমিন ফারহানা বলেন, একটি আধুনিক রাষ্ট্রে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আমলার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু আমলারা যদি ফেরাউনের মতো আচরণ করে তখন তো মুশকিল হয়ে যায়। কিছুদিন আগে আমরা বগুড়ার আদমদীঘিতে দেখলাম মালিকের অনুপস্থিতিতে একটি ছাগলকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আমরা দেখলাম নারায়ণগঞ্জে ৩৩৩ নম্বরে ফোন দেওয়ার কারণে একজন নারীকে খেসারত দিতে হয়েছে। অর্থাৎ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমলাদের যে দৌরাত্ম্য, তা দেখতে পেয়েছি।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, নতুন প্রভিশনের তালিকায় মোবাইল কোর্টের বিধান রাখা হয়েছে। যেখানে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে মোবাইল কোর্ট রাখা যাবে কিনা সেটি ভেবে দেখা দরকার। আমার প্রশ্ন হলো; যদি অপব্যবহার নাও হয়, তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থায় মোবাইল কোর্ট রাখার প্রয়োজন আছে কিনা? আমরা জানি যে, আধুনিক রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের সাথে যে বিষয়টি জড়িত তা হলো সেপারেশন অব পাওয়ার অর্থাৎ দেশের বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ পৃথকভাবে কাজ করবে। এ অবস্থায় আমরা যদি দেখতে পাই নির্বাহী বিভাগ দিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয় তাহলে এটি সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং সংবিধানের ১১৫ ও ১২২ অনুচ্ছেদের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। এ বিষয়ে হাইকোর্টে একটি রিটও হয়েছিল। রিটের পর রায়ে হাইকোর্ট বলেছিলেন, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থায় সংবিধানের যে মূল স্পিরিট এবং সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদের যে স্পিরিট তার সাথে মোবাইল কোর্ট যায় না। এরপর সরকার আপিল করে যা আপিল বিভাগে গত তিন বছর ধরে স্থগিত রয়েছে। এ সুযোগে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এ জন্য আমি বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই বিষয়টি নিয়ে জনমত জরিপে হওয়া উচিত। মোবাইল কোর্ট চালাতে হলে অবশ্যই বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে করা উচিত। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা সংবিধানের মূল স্পিরিটের সাথে ভীষণভাবে সাংঘর্ষিক।