আল জাজিরার প্রতিবেদন সরানোর নির্দেশ
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/02/17/al-jazeera_0.jpg)
কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরায় প্রচারিত “অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন” প্রতিবেদনটি ইউটিউব, টুইটার, ফেসবুকসহ সব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে অপসারণ করতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত রিটের আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ আদেশ দেন। এর আগে বেলা ৩টায় আদেশের জন্য সময় নির্ধারণ করেন আদালত।
সকাল থেকে মামলার ওপর শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। এর আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি ছয় অ্যামিকাস কিউরি আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, কামালুল আলম, প্রবীর নিয়োগী, ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল, আব্দুল মতিন খসরু ও শাহদীন মালিক আদালতে তাঁদের মতামত দেন।
শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরিদের অবস্থান
১৫ ফেব্রুয়ারির শুনানিতে আল জাজিরা নেটওয়ার্কের সম্প্রচার বন্ধের বিষয়ে হাইকোর্ট আদেশ দিতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে ছয় অ্যামিকাস কিউরির (আদালত-বন্ধু) মধ্যে পাঁচজনই বলেছেন, রিটটি গ্রহণযোগ্য নয়। বরং সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা করতে পারত। তবে একজন বলেন, সরকার প্রধান ও সশস্ত্র বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তাই আদালত একটি আদেশ দিতে পারেন।
শুনানির শুরুতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী সরকার চাইলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারত। সরকার তো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং রিটকারীর এখানে সংক্ষুব্ধ হওয়ার কিছুই নেই। তাই রিটের গ্রহণযোগ্যতা নেই।
আইনজীবী কামালুল আলম বলেন, ঘণ্টাব্যাপী একটি প্রতিবেদন সম্প্রচার হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম বলা হচ্ছে। অভিযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে কোনো যোগসূত্র দেখাতে পারলেন না। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তিকে বিতর্কিত করা হলে রাষ্ট্রকেই বিতর্কিত করা হয়।
কামালুল আলম বলেন, রিট আবেদনকারীর সংক্ষুব্ধ হওয়ার যৌক্তিকতা নেই। রিটটি গ্রহণযোগ্য নয়।
অপর তিন অ্যামিকাস কিউরি ফিদা এম কামাল, প্রবীর নিয়োগী ও ড. শাহদীন মালিক রিট গ্রহণযোগ্য নয় বলে মত দেন।
তবে রিটের পক্ষে বক্তব্য দিয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আইনজীবী আবদুল মতিন খসরু বলেন, এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে দেশের সুনাম নষ্ট করা হয়েছে। দেশে বিদেশে বাংলাদেশকে ছোট করতে একটি চক্র এ কাজ করেছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী ও সেনাবাহিনীর সম্মান নষ্ট করা হয়েছে। আদালত চাইলে একটি আদেশ দিতে পারেন। আর সাংবিধানিক অধিকারবলে রিটকারী রিট করেছেন।
আল জাজিরায় গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে “অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। ভিডিও-সংবলিত ওই ডকুমেন্টারি বিভ্রান্তিকর, বিদ্বেষমূলক ও মানহানিকর উল্লেখ করে দেশে আল জাজিরার সম্প্রচার ও ওয়েবসাইট বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এনামুল কবির ইমন। রিটে “অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন” প্রতিবেদনটি ইউটিউব, টুইটার, ফেসবুকসহ সব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে অপসারণ করার নির্দেশনা চাওয়া হয়। রিটে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, তথ্যপ্রযুক্তি সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
রিটের গ্রহণযোগ্যতাসহ পাঁচটি বিষয়ে মতামত দিতে ১০ ফেব্রুয়ারি অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ছয়জন আইনজীবীর নাম ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। অ্যামিকাস কিউরি হলেন—আদালতের আইনি সহায়তাকারী। রিট আবেদনকারীর সংক্ষুব্ধ হওয়ার দিক, রিটের প্রার্থনা অনুসারে এই আদালত থেকে কোনো আদেশ দেওয়া হলে বিদেশি কোনো টিভি চ্যানেলের ক্ষেত্রে তা কার্যকর করা যাবে কি না, কোনো আইনি নোটিশ ছাড়া রিট (ম্যান্ডামাস) চলে কি না, রিটের প্রার্থনা অনুসারে এই আদালত থেকে আল জাজিরার তথ্যচিত্রটি সব মাধ্যম থেকে বন্ধ করার কোনো নির্দেশনা দেওয়ার প্রয়োজন আছে কি না, ১ ফেব্রুয়ারি তথ্যচিত্রটি প্রকাশের পর এত দেরিতে রিট করার প্রেক্ষাপটে কোনো নির্দেশ দেওয়ার প্রয়োজন আছে কি না—এসব বিষয়ে অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত দিতে বলা হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পক্ষে ছিলেন খোন্দকার রেজা ই রাকিব, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।