কনকনে শীতে শতবর্ষী বৃদ্ধাকে স্টেশনে ফেলে গেলেন স্বজনরা

শীতের তীব্রতা ভয়াবহ। কুয়াশায় ঢাকা সূর্যহীন দিনের নিষ্ঠুরতা। তার চেয়ে ভয়াবহ নিষ্ঠুরতায় নির্বাক একজন শতবর্ষী বৃদ্ধ নারী। শীতে নীল হয়ে যাওয়া বলিরেখাভরা মুখে শুধু আশ্চর্যবোধক চিহ্ন। একদিন যেসব প্রিয় স্বজনদের নিজের বুকের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে ‘মানুষ’ করেছেন আজ তারাই তাঁকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ফেলে চলে গেলেন। প্রতিবাদহীন কোটরে ঢুকে যাওয়া চোখের অশ্রুরাও ঘৃনায় হয়তো গতিহীন ছিল।
এ রকম একটি ঘটনাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঘটেছে। এই বৃদ্ধা মাকে পাষণ্ড স্বজনরা ফেলে পালিয়ে যান। এর পর স্থানীয়রা বিশাল স্টেশনের তেঁতুল গাছের পাশের পরিত্যক্ত ছাউনির নিচে তাঁকে রেখে দেন। এভাবে কনকনে ঠাণ্ডায় টানা ১৪ দিন প্লাটফর্মে থাকার পর কুয়াশার ফাঁক গলে বের হওয়া সূর্যের মতো মানবিকতা চোখে মেলে।
অসহনীয় যন্ত্রণা আর মৃত্যুর মুখে পড়ে থাকা বয়স্ক মায়ের খবর স্থানীয় প্রশাসনের কাছে গেলে গত রোববার রাতে তাঁকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। রাতভর চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হলেও শঙ্কামুক্ত নন। মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা এই বৃদ্ধা যখন চেতনা ফিরে পাচ্ছেন তখন একরাশ ঘৃণা প্রকাশ করছেন স্বজনদের প্রতি।
এখনও তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার কোনো এক এলাকায় হয়ত। অমানবিক এই ঘটনার খবর পেয়ে বৃদ্ধা মায়ের পাশে এখন এগিয়ে এসেছেন অনেকেই। উপজেলা প্রশাসন, ও পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি রহনপুর পৌরসভা মেয়র তারেক আহম্মেদ ওই বৃদ্ধার সার্বিক চিকিৎসা দায়িত্ব নেন।
শেষ কথা তবু শেষ নয়
একজন নারী। জন্মের পর থেকেই যাঁর মাতৃত্বে এবং স্বার্থহীন আত্মত্যাগে আমরা বেড়ে উঠি। ভালবাসতে শিখি এবং নিজেকে ‘মানুষ’ বলে পরিচয় দেওয়ার ধৃষ্টতা দেখাই। এই সবকিছুর মূলে মূলত একজন নারীর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। কখনো কখনো আমরা ভুলি যাই মনুষ্যত্ব কিংবা বিবেক বোধের তাড়না। তাই হয়তো বিস্মৃত হয়ে যাই নাড়ীর টান কিংবা আমাদের শিশুবেলার অসহায়ত্বের কথা। আর তাইতো স্টেশনের পাশে পড়ে থাকতে দেখি একজন শতবর্ষী বৃদ্ধা নারীকে। আর সেটা তাঁর খুব প্রিয় স্বজনরাই করে গেছেন।