চলন্তবাসে শ্লীলতাহানি : বিকাশ পরিবহণের চালক রিমান্ডে

চলন্তবাসে নারীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় বিকাশ পরিবহণের চালক মো. মাহবুবুর রহমানের একদিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোস্তফা রেজা নুর এই আদেশ দেন।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আজ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামিকে পাঁচদিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক আসামির একদিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন। এর আগে গতকাল পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিকাশ পরিবহণের চালক মো. মাহবুবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নারী তার ফেসবুকে ঘটনা সম্পর্কে স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন কাজ করেন। তিনি কাজ শেষ করে আজিমপুরের বাসায় ফেরার জন্য গত রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে ধানমণ্ডি থেকে বাসে উঠেছিলেন। বাসে যখন ওঠেন তখন অনেক যাত্রী ছিল। তিনি বাসের মাঝামাঝি একটি সিটে বসেছিলেন। সারা দিনের ধকল ও যানজটের জন্য বাসে চড়ে বাইরের আওয়াজ থেকে রেহাই পেতে তিনি কানে হেডফোন লাগিয়ে বেশ জোরে গান শোনেন। ঘটনার রাতেও তাই করছিলেন। আর খানিকটা ঝিমুনির মতোও চলে এসেছিল। তাই বাসের ভেতরে কী হচ্ছে, তা তিনি খেয়াল করেননি। বাসের সহকারী একবার ভাড়া নিতে এলে তিনি ভাড়া দিয়েছিলেন।
ওই নারী স্ট্যাটাসে আরও বলেন, ‘হুট করেই বুঝতে পারলাম আমার হাঁটুর ওপরে কারও হাতের স্পর্শ। সঙ্গে সঙ্গে তাকিয়ে দেখলাম, পুরো বাস খালি, আর আমার পাশে একজন বসা। বাসের সব লাইট বন্ধ। তাকানোর পর সেই লোক আর একটু ওপরে হাত দেয়। জোরে ধাক্কা দিয়ে সেই লোককে সিট থেকে নিচে ফেলে দিই। দাঁড়াতে দাঁড়াতে মুঠোফোনটাকে ব্যাগে ঢোকাই। চিৎকার করতে থাকি বাস থামানোর জন্য। কিন্তু চালক বা হেলপার কোনো কথা বলছে না। আমি সামনের দিকে আগাতে গেলে হেলপার দুই হাত দিয়ে আমার মুখ ও হাত চেপে ধরে। পা ও কনুই দিয়ে হেলপারের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করতে থাকি। পা দিয়ে হেলপারের পায়ে জোরে আঘাত করি। হুট করে মনে হলো হেলপার যে হাত ধরে ছিল তা একটু আলগা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাসের জানালাগুলো কোন ফাঁকে বন্ধ করে দিয়েছে, খেয়াল করিনি। প্রথমে ভেবেছিলাম, দরজাতেও বোধ হয় সিটকিনি লাগানো। মনে মনেই চিন্তা করছি বাসের সিটকিনি যে কোথায় থাকে, তা–ও তো জানি না। তবে সামনের দিকে আসতে আসতে সড়কের গতিরোধকের জন্য বাসের গতিও খানিকটা কমাতে বাধ্য হয়েছিল চালক। যখন দেখলাম বাসের দরজায় সিটকিনি লাগানো নেই, কোনো কিছু চিন্তা না করে দরজা খুলে লাফ দিই। বাসে চড়ে অভ্যস্ত বলে তখন আর বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। নেমেই দৌড় দিলাম।’
ওই শিক্ষার্থী জানান, বাস থেকে লাফ দিয়ে যে এলাকায় নেমেছিলেন, সে এলাকা দিনের বেলায়ও বেশ ফাঁকা থাকে। আর রাত নয়টা বেজে যাওয়ায় এবং বিদ্যুৎ না থাকায় পুরো এলাকাই ছিল ফাঁকা। তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে শুধু ভাবছি, আমার চিৎকার কেউ শুনতেও পেত না। আর তখন বাস থেকে কীভাবে লাফ দিয়েছিলাম, তা চিন্তা করলেও ভয় লাগছে।’
এ বিষয়ে আজ ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার কুদরত-ই-খুদা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গতকাল বুধবার ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে মাহবুবুর রহমান নামের ওই চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর সহকারীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় লালবাগ থানায় একটি মামলা হয়েছে।