দুধকুমারের ভাঙন রোধে ৭০০ কোটি টাকা, আনন্দের জোয়ার

কুড়িগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত দুধকুমার নদী ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প একনেক বৈঠকে পাশ হয়েছে। এতে আনন্দের জোয়ারে ভাসছে নদীর দুই পাড়ের মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে চলছে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে তিন উপজেলায় নদী অববাহিকার হাজার হাজার ঘরবাড়ি, ফসলের জমিসহ সরকারি-বেসরকারি নানা স্থাপনা।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার ধলডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতর দিয়ে ৬৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে সদর উপজেলার যাত্রাপুরে ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হয়েছে দুধকুমার। খরস্রোতা এই নদীর ভাঙনে প্রতিবছর দুই পাড়ের হাজার হাজার বসতবাড়ি, আবাদি জমি ও স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। অথচ স্বাধীনতার পর থেকে এই নদীর স্থায়ী ভাঙন রোধে কোনো প্রকল্প দেওয়া হয়নি। তবে গত ১০ আগস্ট ৬৯২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে দুধকুমার নদী ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক।
এদিকে একনেক বৈঠকে প্রকল্প পাশের খবর ছড়িয়ে পড়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন ভাঙনের মুখে থাকা মানুষজন। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে আনন্দ মিছিলের পাশাপাশি করছেন মিষ্টি বিতরণও। দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানান তারা।

নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের দুধকুমার পাড়ের বাসিন্দা খয়বর আলী বলেন, ‘দুধকুমার নদীতে আমার দুবার বাড়ি ভেঙেছে। ফসলের জমি নদীতে গেছে। বর্তমানে যে বাড়ি করেছি সেটাও নদীর কিনারে ভাঙনের কবলে পড়েছে। এই নদীর কাজ হবে। নদী আর ভাঙবে না। এর চেয়ে বড় আনন্দের সংবাদ আর নেই। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করছি।’
বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলহাজ মইনুল ইসলাম লাল বলেন, ‘স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময় থেকে দুধকুমার নদীর ভাঙন রোধে কোনো কাজ করা হয়নি। এবারই প্রথম দুধকুমার নদী ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নে ৬৯২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাচ্ছি।
কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রামের মানুষকে অত্যন্ত ভালোবাসেন বলেই একনেক বৈঠকে দুধকুমার নদীর ভাঙন রোধের প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা জেলাবাসীর পক্ষ থেকে, জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাই। আমরা যখন যা চেয়েছি, তিনি তাই দিয়েছেন।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, এই ৬৫ কিলোমিটার দুধকুমার নদীতে ভাঙন রোধে এর আগে তেমন কোনো প্রকল্প ছিল না। এটি আন্তর্জাতিক নদী হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে প্রচুর পানি আসে এবং হাজার হাজার ঘরবাড়ি, স্থাপনা, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এই প্রকল্পের আওতায় ১৫টি স্থানে প্রায় ২৫ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার এলাকায় কাজ করা হবে। এর ফলে দুইটি উপজেলা শহর নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী এবং গুরুত্বপুর্ণ সোনাহাট স্থলবন্দর, হাট-বাজার, বিভিন্ন স্থাপনা, বসতি ও কৃষিজমি রক্ষা হবে। কুড়িগ্রামে এ পর্যন্ত নদী ভাঙন রোধে যত প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে এটিই সবচেয়ে বড় প্রকল্প। চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।